অস্বাস্থ্যকর–নোংরা গাড়ি উন্নয়নশীল দেশগুলোতে রপ্তানি হচ্ছে: ইউএনইপি

বিশ্বের ধনী দেশগুলো থেকে দরিদ্র ও উন্নয়নশীল দেশগুলোতে ব্যবহৃত গাড়ি রপ্তানি হয়ে থাকেএএফপি ফাইল ছবি

জাতিসংঘের পরিবেশ কর্মসূচি (ইউএনইপি) বলছে, বিশ্বের ধনী দেশগুলো থেকে লাখ লাখ অস্বাস্থ্যকর ও নোংরা গাড়ি বিশ্বের দরিদ্র ও উন্নয়নশীল দেশগুলোতে রপ্তানি হচ্ছে। শুধু ২০১৫–২০১৮ সালে ইউরোপ, জাপান ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে মেয়াদোত্তীর্ণ ও মানহীন এমন প্রায় ১ কোটি ৪০ লাখ গাড়ি রপ্তানি হয়েছে। এসব গাড়ি আমদানি করা দেশগুলোর পরিবেশ মারাত্মক দূষিত করছে।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। ইউএনইপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৫ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে রপ্তানি হওয়া মানহীন এসব গাড়ির পাঁচ ভাগের চার ভাগই বিক্রি হয়েছে বিশ্বের দরিদ্র দেশগুলোতে। এর মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি গেছে আফ্রিকার দেশগুলোতে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব গাড়ি রপ্তানির ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট দেশগুলো ন্যূনতম নিরাপত্তা ও পরিবেশগত মান নিয়ন্ত্রণে ৮০ শতাংশ পর্যন্ত ব্যর্থ হয়েছে। রপ্তানি হওয়া ব্যবহৃত এসব গাড়ি দুর্ঘটনা, বায়ু দূষণ ও জলবায়ু পরিবর্তনের অন্যতম কারণ হিসেবে দেখা দিচ্ছে। রপ্তানির সময় বা আমদানির পর এসব গাড়ি থেকে মূল্যবান যন্ত্রপাতি সরিয়ে ফেলার ঘটনাও ঘটে।

ব্যবহৃত এসব গাড়ি রপ্তানি ও আমদানির ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট উভয় পক্ষের দেশগুলোর নির্দিষ্ট নীতিমালা থাকার কথা সুপারিশ করা হয়েছে ইউএনইপির প্রতিবেদনে।

সারা বিশ্বে গাড়ির সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। বর্তমানে বিশ্বের সড়কগুলোতে চলমান গাড়ির সংখ্যা আনুমানিক ১৪০ কোটি, যা ২০৪০ সালের মধ্যে ২০০ কোটিতে পৌঁছাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এর মধ্যে এশিয়া, আফ্রিকা ও দক্ষিণ আমেরিকার উন্নয়নশীল দেশগুলোতে গাড়ির চাহিদা ঊর্ধ্বমুখী।

ইউএনইপির গবেষকেরা তাঁদের তিন বছরের গবেষণায় দেখেছেন, বিশ্বের গাড়ি আমদানি করা ১৪৬টি দেশের অধিকাংশেরই গাড়ি আমদানি নীতিমালা দুর্বল।

ইউএনইপির গবেষক দলের অন্যতম সদস্য রব ডি জং বলেছেন, রপ্তানি হওয়া এসব গাড়ি ভয়ংকর ও নোংরা। তিনি বলেন, এই ১ কোটি ৪০ লাখ গাড়ির ৮০ শতাংশ রাস্তাঘাটে চলার মতো মানসম্মত নয়। এসব গাড়ির ‘নির্গমন মান’ বিবেচনার ক্ষেত্রে ‘ইউরো ৪’ নীতিমালা মানা হয়নি। ২০০৫ সালে ইউরোপের দেশগুলোতে গাড়ির মান নিয়ন্ত্রণে ‘ইউরো ৪’ নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়। এই নীতিমালার মাধ্যমে বিশেষ করে গাড়ি থেকে বিভিন্ন গ্যাস নির্গমনের বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করা হয়।

ইউএনইপির গবেষকেরা বিশ্বাস করেন, আফ্রিকা ও এশিয়ার দরিদ্র দেশগুলোতে ক্রমবর্ধমান সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ আমদানি হওয়া এসব মানহীন গাড়ি। এ ছাড়া এসব গাড়ি থেকে নির্গত সূক্ষ্ম পদার্থ ও নাইট্রোজেন অক্সাইড বিভিন্ন শহরে বায়ু দূষণের প্রধান কারণ।

ইউএনইপির আরেক গবেষক জেন আকুমু বলেন, ২০১৭ সালে আফ্রিকার দেশ উগান্ডায় ডিজেলচালিত যেসব গাড়ি আমদানি হয়েছে, সেগুলোর গড় বয়স ছিল ২০ বছর। একই অবস্থা জিম্বাবুয়ের ক্ষেত্রেও। এমনকি আফ্রিকার প্রায় ৩০টি দেশে রাস্তায় গাড়ি চলাচলের কোনো বয়সসীমা বেঁধে দেওয়া নেই। ফলে সেখানে যেকোনো ধরনের, যেকোনো বয়সের গাড়ি আসতে পারে। অবশ্য কিছু কিছু দেশ এখন এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নিচ্ছে। যেমন মরক্কোয় পাঁচ বছরের কম ব্যবহৃত গাড়ি আমদানির নীতিমালা করা রয়েছে। আর কেনিয়ায় এই বয়সসীমা আট বছর।