দুই পাখি, এক ‘মন’

একসঙ্গে গান করছে দুটি পাখি
ছবি: সংগৃহীত

একটি ব্যান্ডের সংগীতানুষ্ঠান। দলের কেউ গান করছেন, কেউবা বাজাচ্ছেন বাদ্যযন্ত্র। আবার কেউ কেউ গানের তালে তালে নৃত্য করছেন অবিরাম। কিন্তু এ সময় তাঁরা কেউই একে অন্যের সঙ্গে বিচ্ছিন্ন থাকেন না। সমন্বয় ও সহযোগিতার অটুট বন্ধন থাকে তাঁদের মধ্যে। এই সামষ্টিক প্রচেষ্টার মাধ্যমে তাঁরা দর্শক মাতান। গানের পাখিগুলোর ক্ষেত্রেও এমন সমন্বয় কাজ করে বলে গবেষণায় জানা গেছে। গবেষকেরা বলছেন, দুটি পাখি যখন দ্বৈত সংগীত (ডুয়েট) করে, তখন সেগুলোর মস্তিষ্ক একসঙ্গে কাজ করে।

যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম সিএনএনের খবরে বলা হয়েছে, বনের পাখিগুলো কীভাবে একসঙ্গে গান পরিবেশন করে, তা নিয়ে বিজ্ঞানীদের প্রশ্ন অনেক দিনের। এ নিয়ে গবেষণা করেছেন একদল স্নায়ুবিজ্ঞানী। তাঁরা দেখেছেন, দুটি পাখি একসঙ্গে গান করার সময় সেগুলোর মস্তিষ্ক একসঙ্গে কাজ করে। ফলে গান করার কাজটি সহজ হয়ে যায়।

গবেষণাটি যুক্তরাষ্ট্রের গবেষণা সাময়িকী প্রসিডিংস ন্যাশনাল একাডেমি অব সায়েন্সস–এ প্রকাশিত হয়েছে। দক্ষিণ আমেরিকার আন্দিজ এলাকার প্লেইন-টেইলড রেনস প্রজাতির সংবার্ডসের ওপর এই গবেষণাটি চালানো হয়। গান করার সময় এই প্রজাতির পুরুষ ও স্ত্রী পাখিগুলোর মস্তিষ্ক কীভাবে কাজ করে, সেটা উদ্‌ঘাটন করাই ছিল গবেষণার মূল লক্ষ্য। এই পাখিগুলো বাঁশবাগানের ঝোপে বসবাস করে।

গবেষণার তথ্যমতে, পাখিগুলো গান করার সময় একে অন্যের মধ্যে সংকেত আদান–প্রদান করে। এটি মূলত টেলিপ্যাথির (চিন্তাভাবনা একজন থেকে অন্যজনের মধ্যে সরাসরি স্থানান্তর) মতো কাজ করে।

গবেষণা প্রতিবেদনের সহলেখক হলেন স্নায়ুবিজ্ঞানী ও যুক্তরাষ্ট্রের নিউ জার্সি ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির জীববিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এরিক ফরচুন। পাখিগুলোর একসঙ্গে দ্বৈত সংগীত পরিবেশনের বিষয়ে তিনি বলেন, এটা টেলিপ্যাথি নয়। তবে অনেকটা সে রকমই। সিএনএনকে এরিক ফরচুন বলেন, একে অন্যের বার্তা শুনতে পাখিগুলো নিজেদের মস্তিষ্ককে এমনভাবে যুক্ত করে যে পাখি দুটি হলেও মস্তিষ্ক একটি হয়ে যায়।

এরিক ফরচুন বলেছেন, স্ত্রী পাখিটি কী করতে যাচ্ছে, সঙ্গী পুরুষ পাখির মস্তিষ্কে সেই বিষয়ে সম্ভাব্য ধারণা থাকে। একইভাবে পুরুষ পাখিটি কী করতে যাচ্ছে, সে বিষয়ে স্ত্রী পাখির মস্তিষ্কেও সম্ভাব্য ধারণা জন্মে। পাখিগুলো যখন একসঙ্গে গান করতে শুরু করে, তখন সেগুলোর মধ্যে ভিন্নতা বলে কিছু থাকে না।

গবেষণার তথ্যমতে, পাখিগুলো প্রথমে নিজেদের মধ্যে বার্তা আদান–প্রদান শুরু করে। এরপর সেগুলো সেটাকে দ্রুতই সংগীতে রূপান্তরিত করে। তখন সেগুলোর ডুয়েট শুনে মনে হয় যে একটি পাখিই গান গাইছে।