নওয়াজের উপস্থিত সমস্যাগুলো

নওয়াজ শরিফের সামনে অনেক অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ। তা নিয়ে কথা কম হয়নি। কিন্তু নজিরবিহীনভাবে তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হওয়া পাকিস্তান মুসলিম লিগের (পিএমএল-এন) নেতার সামনে সবচেয়ে জ্বলন্ত সমস্যাটি হচ্ছে বিদুৎ তথা জ্বালানি সমস্যা। নির্বাচনে জয়লাভের পর থেকেই প্রধানমন্ত্রীর পদে বসছেন বুঝতে পেরে এ নিয়ে ভাবনা-চিন্তা ও প্রকাশ্য তৎপরতা শুরু করেন নওয়াজ।

বিগত পাকিস্তান পিপলস পার্টির সরকারের বিরুদ্ধে দেশবাসীর অভিযোগের শেষ নেই। তবে বিশ্লেষকদের বেশির ভাগই এ ব্যাপারে একমত যে, পাঞ্জাবে দলটির খারাপ ফল করার পেছনে এককভাবে বিদ্যুৎ সমস্যাই সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রেখেছে।

বিদ্যুৎ খাতে পিপিপির ‘নিজের রাজ্য’ সিন্ধুর চিত্রটা দেখা যাক। দেশের বৃহত্তম নগর, বন্দরনগর করাচির বিভিন্ন পাড়ায় রাতের নির্দিষ্ট সময়ে প্রায় ঘড়ি ধরে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। কিছুক্ষণের মধ্যেই শুরু হয়ে যায় সামর্থ্য অনুযায়ী আঁধার তাড়ানোর তোড়জোড়। দিকে দিকে গর্জে ওঠে জেনারেটর। এর চেয়ে কম পয়সা যাদের, তাদের ভরসা আইপিএস। তা-ও যারা কিনতে পারেন না, তারা জ্বালান মোমবাতি।

পাকিস্তানে লোডশেডিং এখন নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। তবে গত কয়েক বছরে লোডশেডিংয়ের সময় হয়েছে দীর্ঘতর এবং আগের চেয়ে বেশি ঘন ঘন। সবচেয়ে বেশি খারাপ বৃহত্তম প্রদেশ পাঞ্জাবের অবস্থা। সেখানে দিনে সর্বোচ্চ ২০ ঘণ্টা পর্যন্ত বিদ্যুৎহীন থাকে কখনো কখনো। এতে করে কলকারখানা বন্ধ থাকছে, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বাণিজ্যিক কার্যক্রমও।

এই বিদ্যুৎ-সংকটে বিপর্যস্ত প্রদেশেই ব্যাপক ভোট পেয়েছে নওয়াজের দল। নিঃসন্দেহে এর অন্যতম কারণ নির্বাচনী প্রচারণায় বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান ও অর্থনৈতিক সমস্যা সমাধানের প্রতিশ্রুতি। কিন্তু সরকার গঠনের পর মাঠে নেমেই নওয়াজ নিশ্চয়ই বুঝে যাবেন (প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দুবারের অভিজ্ঞতা থাকায় তাঁর অবশ্য ইতিমধ্যেই বোঝার কথা) যে নির্বাচনে জয়ী হওয়াটা তুলনায় সহজ। এখন শুরু হবে অর্থনীতিকে পথে ফেরানোর কঠিন কাজটা।

নওয়াজ শরিফ এমন একসময়ে সরকারের দায়িত্ব গ্রহণ করছেন, যখন দেশের অর্থনীতির অবস্থা এলোমেলো। প্রবৃদ্ধি ও বিনিয়োগের হার কমেছে। ভারসাম্যহীন বৈদেশিক লেনদেন। আইএমএফের ঋণ পরিশোধের অঙ্ক এ বছর আরও বাড়বে।

নওয়াজ শরিফের সামনে চ্যালেঞ্জটা তাই রীতিমতো কঠিন। আবার তা মোকাবিলার জন্য সময়ও কম। দায়িত্ব নেওয়ার কয়েক দিনের মধ্যেই সরকারকে ২০১৩-১৪ সালের বাজেট ঘোষণা করতে হবে। এ ক্ষেত্রে নওয়াজকে আর্থিক ভারসাম্যহীনতাকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। তাঁর সরকারকে কর আদায় বৃদ্ধি করা এবং সরকারি ব্যয় কমানোর কায়দা বের করতে হবে। পাকিস্তানে কর এড়ানোর প্রবণতা সর্বব্যাপী। এ সমস্যার সমাধানে নওয়াজকে কর সংস্কার কর্মসূচি হাতে নিতে হবে।

নিজে একজন শিল্পপতি বলে নওয়াজের আবার প্রধানমন্ত্রী হওয়া শিল্পপতি ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে আস্থার সৃষ্টি করতে পেরেছে। মনে করা হয়, তিনি দেশের অর্থনীতির চ্যালেঞ্জগুলো বোঝেন। কিন্তু সমালোচকেরা এ কথা মনে করিয়ে দিতে ভোলেন না, তিনি তাঁদেরই একজন। নওয়াজ শরিফ বিত্তবান ও ক্ষমতাশালীদের তাঁর সংস্কার কর্মসূচিতে যুক্ত করার চেষ্টা নিশ্চয়ই করবেন। কিন্তু একই সঙ্গে এতটা চাপ দেবেন না, যাতে তাঁদের সমর্থন হারিয়ে ফেলতে হয়।

অর্থনীতির ওপর চাপ কিছুটা কমাতে নওয়াজ সরকারের জরুরিভিত্তিতে বৈদেশিক ঋণ বা সহায়তা লাগবে। বেশিরভাগ অর্থনীতিবিদের ধারণা, নতুন সরকারের আইএমএফের দ্বারস্থ হওয়া ছাড়া বিকল্প নেই। কিন্তু তারা অন্তত এ মুহূর্তে তা করতে খুব আগ্রহী নয়। নওয়াজের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত সাবেক অর্থমন্ত্রী সারতাজ আজিজ বলেছেন, সরকার অর্থনীতিকে চাঙা করার অন্য উপায় খুঁজে দেখছে।