নতুন বছরটি আগের চেয়ে ভালো হবে

প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠান মাইক্রোসফটের সহপ্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস। বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ ধনীও তিনি। তাঁর প্রতিষ্ঠিত বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন বিশ্বজুড়ে যত দাতব্য কাজ করছে, তার অন্যতম লক্ষ্য মানুষের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করা। করোনা মহামারি, এর টিকা উদ্ভাবন ও বিতরণ ব্যবস্থা এবং সর্বোপরি করোনা–পরবর্তী বিশ্ব নিয়ে নিজের পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেছেন বিল গেটস। গত মঙ্গলবার লেখাটি প্রকাশিত হয়েছে তাঁর নিজের ব্লগ গেটস নোটসে।

মাইক্রোসফটের সহপ্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস
ছবি: টুইটার

এটি একটি বিধ্বংসী বছর। কোভিড–১৯ মহামারিতে ১৬ লাখের বেশি মানুষ এরই মধ্যে মারা গেছেন। সেই সঙ্গে সাড়ে ৭ কোটির বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন এবং অর্থনৈতিক খাতে ১০ ট্রিলিয়ন ডলারের ক্ষতি হয়েছে। কোটি কোটি মানুষ চাকরি হারিয়েছেন। ১০০ কোটির বেশি শিশু করোনাভাইরাস মহামারির কারণে স্কুলে যেতে পারেনি। এ বছর যুক্তরাষ্ট্র জর্জ ফ্লয়েড ও ব্রেওনা টেলরের হত্যা দেখেছে, দেখেছে বিধ্বংসী দাবানল এবং এমন একটি প্রেসিডেন্ট নির্বাচন, যা আধুনিক সময়ে আর দেখা যায়নি।

তবে ২০২১ সালে আমাদের জন্য ভালো খবর আছে

চলতি বছরের বেশির ভাগ সময়টা আমি ফাউন্ডেশনের সহকর্মীদের সঙ্গে কাটিয়েছি এবং এর উদ্দেশ্য ছিল বিশ্বজুড়ে কোভিড–১৯ প্রতিরোধ, চিকিৎসা এবং এর শনাক্তকরণ পরীক্ষা চালানোর পথ খোঁজা। ২০২০ সালের বৈজ্ঞানিক অগ্রযাত্রার গতি নিয়ে আমি যখন ভাবি, তখন স্তম্ভিত হয়ে যাই। এ বছর কোভিড–১৯–এর কারণে বিশ্বে যে পরিমাণ বৈজ্ঞানিক অগ্রগতি হয়েছে, অন্য কোনো রোগের ক্ষেত্রে এক বছরে মানুষ এতটা এগোতে পারেনি। সাধারণ সময়ে, একটি টিকা তৈরি করতে ১০ বছর পর্যন্ত সময় লেগে যায়। এবার এক বছরের কম সময়ে একাধিক টিকা তৈরি করা হয়ে গেছে।

দুর্ভাগ্যবশত, আমরা এখনো প্রতিকূল পরিস্থিতি থেকে বের হতে পারিনি। কম্পিউটারে তৈরি মডেলে দেখা গেছে, সামনের মাসগুলোতে করোনা পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। এরই মধ্যে করোনাভাইরাসের নতুন ধরন (স্ট্রেইন) আবির্ভূত হয়েছে এবং সে বিষয়েও আমাদের জানতে হবে। করোনাভাইরাসের এই নতুন ধরন আরও দ্রুত ছড়াচ্ছে, যদিও এটি ততটা প্রাণঘাতী নয় বলে মনে হচ্ছে।

তবু আশাবাদী হওয়ার জন্য দুটি কারণ হাজির আছে। একটি হলো মাস্ক, সামাজিক দূরত্ব ও অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার মধ্য দিয়ে ভাইরাসের ছড়িয়ে পড়ার গতি কমিয়ে দেওয়া এবং এর মাধ্যমে টিকা সর্বত্র পৌঁছানোর আগপর্যন্ত জীবন বাঁচানো।

টিকা তৈরিতে সাধারণত প্রায় ১০ বছর লাগলেও এবার এক বছরেই একাধিক টিকা পাওয়া গেছে।

আশাবাদী হওয়ার আরেকটি কারণ হলো, ২০২১ সালের বসন্তে করোনার টিকা ও চিকিৎসা –ম্পর্কিত যেসব খবর আপনারা এখন সংবাদমাধ্যমে পড়ছেন, সেগুলো এমন পর্যায়ে পৌঁছাবে যে এর বৈশ্বিক প্রভাব জোরদার হতে থাকবে। যদিও তখনো কিছু বিধিনিষেধ মেনে চলার প্রয়োজন হবে (উদাহরণ হিসেবে বলা যায় বড় জনসমাগমের কথা), তবে অন্তত ধনী দেশগুলোতে করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার কমে আসতে থাকবে এবং এখনকার তুলনায় জীবন অনেক স্বাভাবিক হয়ে আসবে।

এই পোস্টে আমি কোভিড–১৯ বিষয়ক সব ধরনের উদ্ভাবনগুলো সম্পর্কে নানা বিষয় ভাগাভাগি করতে চাই। কারণ, আমরা এ বছর শেষ করে নতুনটির দিকে এগোচ্ছি। আমি টিকা দিয়েই শুরু করছি; কারণ, টিকার বিষয়টি খবরে আসছে বারবার এবং এই বিষয়েই আমি বেশি প্রশ্ন পেয়েছি।

কোভিড–১৯ টিকা কীভাবে কাজ করবে

আপনি হয়তো জেনে থাকবেন যে মডার্না ও ফাইজার–বায়োএনটেকের তৈরি দুটি টিকা যুক্তরাষ্ট্রে জরুরি ব্যবহারের জন্য অনুমোদন পেয়ে গেছে। ফাইজার-বায়োএনটেকের টিকা যুক্তরাজ্যসহ অন্যান্য দেশেও অনুমোদন পেয়েছে। আরও কিছু কোম্পানি তাদের টিকার কার্যকারিতার পরীক্ষার ফল হয়তো শিগগিরই ঘোষণা করবে।

আপনি যে বিষয়টি সম্পর্কে পড়েননি, তা হলো প্রথম দুটি টিকার সফলতা অন্যান্য কোম্পানির জন্যও ভবিষ্যতে সফল হওয়ার আশাবাদ দেখাচ্ছে। কার্যত সব টিকাই এখন কার্যকারিতাবিষয়ক পরীক্ষা–নিরীক্ষার পর্যায়ে রয়েছে, যেটি ওই দুটি টিকা পার হয়ে এসেছে। এখন এই গবেষকেরা জানেন যে করোনাভাইরাসের প্রোটিন অংশটিকে আঘাত করলে তা কাজে দিতে পারে। সুতরাং অন্যান্য টিকার ক্ষেত্রে, যারা একই পন্থায় এগোচ্ছে, তাদের আশাবাদী হওয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে।

এই মৌলিক মিলের বিষয়টি বাদ দিলে বিভিন্ন টিকা ভিন্ন ভিন্ন পদ্ধতিতে ভাইরাসকে আক্রমণ করার উপায় নিচ্ছে। মডার্না ও ফাইজার–বায়োএনটেক এমআরএনএ প্রযুক্তি ব্যবহার করেছে। এই পদ্ধতির সঙ্গে আমাদের ফাউন্ডেশন বেশ ভালোভাবেই পরিচিত। কারণ, ২০১৪ সাল থেকে এই পদ্ধতিতে ম্যালেরিয়া ও এইচআইভির টিকা তৈরির গবেষণায় আমরা অর্থায়ন করে আসছি। এটি অসাধারণ বিষয় যে কোভিড–১৯ বিষয়ে অতুলনীয় অগ্রগতি অর্জনে এই প্রযুক্তি ব্যবহৃত হচ্ছে।

উৎপাদনের সঙ্গে সঙ্গে বিপুল পরিমাণ টিকা বিতরণে সমতা নিশ্চিত করা এখন বড় চ্যালেঞ্জ।

এমআরএনএ প্রযুক্তি ব্যবহার করে চিরাচরিত পদ্ধতির তুলনায় অনেক দ্রুত এ ধরনের টিকা তৈরি করা যায়। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে এমআরএনএ পণ্য তৈরি করার মতো যথেষ্ট কারখানা নেই। কিছু টিকা আবার মাইনাস ৭০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করার প্রয়োজন রয়েছে। ফলে এসব টিকা উন্নয়নশীল দেশগুলোতে বিতরণের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা দেখা দেবে। যদিও এটি যত না বৈজ্ঞানিক প্রতিবন্ধকতা, তার চেয়ে বেশি হলো প্রকৌশলগত প্রতিবন্ধকতা।

অন্যদিকে অ্যাস্ট্রাজেনেকা ভিন্ন ধরনের একটি টিকা তৈরি করেছে। এমআরএনএ প্রযুক্তি ব্যবহারের বদলে এটি শিম্পাঞ্জির মধ্যে দেখা দেওয়া সাধারণ ঠান্ডা–জ্বরের স্পাইক প্রোটিন যুক্ত করা হয়েছে, যা কিনা মানুষের জন্য ক্ষতিকর নয়। এতে আপনার রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বুঝতে পারে যে স্পাইককে আক্রমণ করতে হবে এবং এ থেকেই আপনি কোভিড–১৯ থেকে সুরক্ষা পেয়ে যাবেন। কার্যকারিতার পরীক্ষায় অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি টিকা প্রায় ৭০ শতাংশ কার্যকর বলে দেখা গেছে। ফাইজার ও মডার্নার টিকার কার্যকারিতা সে ক্ষেত্রে ৯৪ থেকে ৯৫ শতাংশ। কিন্তু রোগ থামানোর জন্য ৭০ শতাংশ কার্যকারিতাও বেশ উচ্চ হার। এ কারণে একই পদ্ধতিতে তৈরি হতে যাওয়া জনসন অ্যান্ড জনসনের টিকা নিয়েও আশাবাদী হওয়ার ক্ষেত্র রয়েছে।

টিকা নিয়ে কাজ করা একাধিক কোম্পানির কাজের হালনাগাদ তথ্য জানতে গিয়ে আপনি যদি হিমশিম খান, তবে আপনাকে দোষ দেওয়ার কিছু নেই। কিন্তু এটি একটি মধুর সমস্যা! অনেক কোম্পানি ভিন্ন ভিন্ন পদ্ধতিতে টিকা তৈরির কাজ করায় এটি বলা যায় যে কিছু নিশ্চয়ই নিরাপদ ও কার্যকর প্রমাণিত হবে। এমন দুটি টিকা এরই মধ্যে পাওয়া গেছে এবং আরও আসছে।

আসছে বছরে আরেকটি বড় চ্যালেঞ্জ হবে জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে সুদৃঢ় পদক্ষেপ নেওয়া।

কীভাবে ৫ থেকে ১০ বিলিয়ন ডোজ তৈরি করা যাবে

যদি টিকা ব্যবহারের ক্ষেত্রে একটি ডোজের প্রয়োজন হয়, তবে বিশ্বব্যাপী ৫ বিলিয়ন ডোজ প্রয়োজন হবে। আর দুই ডোজের টিকার জন্য প্রয়োজন হবে ১০ বিলিয়ন ডোজ। ধারণা করা হচ্ছে, রোগের ছড়িয়ে পড়ার চক্র ভাঙতে বিশ্বের মোট জনসংখ্যার অন্তত ৭০ শতাংশকে টিকা দেওয়ার প্রয়োজন হবে।

৫ থেকে ১০ বিলিয়ন ডোজ পরিমাণের দিক থেকে কি বিশাল? বিশ্বের সব টিকা তৈরির কোম্পানি সাধারণত বছরে ৬ বিলিয়ন ডোজের কিছু কম টিকা উৎপাদন করে থাকে। সুতরাং করোনার টিকা প্রয়োজনীয় পরিমাণে উৎপাদন করতে হলে সক্ষমতার দ্বিগুণ বা তিন গুণ উৎপাদন করতে হবে।

অধিক উৎপাদনের এই চাপ সহজ করতে ‘সেকেন্ড-সোর্স অ্যাগ্রিমেন্টস’ নামের নতুন এক ব্যবস্থায় ধনী ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর টিকা কোম্পানিগুলোকে জোটবদ্ধ করতে আমাদের ফাউন্ডেশন কাজ করছে। এই প্রক্রিয়ায় বিপুল পরিমাণে উচ্চ মানের নিরাপদ ও সাশ্রয়ী ডোজ উৎপাদন করা যাবে।

সেকেন্ড-সোর্স অ্যাগ্রিমেন্টসের বিষয়টি ব্যাখ্যা করা সহজ নয়। মনে করুন, হোন্ডা কোম্পানিকে তাদের অ্যাকর্ড নামের গাড়ি তৈরির জন্য নিজেদের কারখানা ছেড়ে দিচ্ছে ফোর্ড কোম্পানি। কিন্তু সমস্যা প্রাবল্য এবং এর জরুরি সমাধানের বিষয়টি মাথায় রেখে অনেক ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিই এ ধরনের নতুন পদ্ধতিতে একসঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে কাজ করায় সুবিধা দেখতে পাচ্ছে।

ঠিক দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মতো, যখন যুক্তরাষ্ট্র নিজেদের উৎপাদনের সক্ষমতা কাজে লাগিয়ে গাড়ি তৈরির কারখানায় ট্যাংক–ট্রাক ইত্যাদি তৈরি করেছিল। ভিন্নতা এই জায়গাতেই যে তখন সরকার এই প্রক্রিয়ায় যুক্ত ছিল, এখন নেই। এই সংকটে বিভিন্ন কোম্পানিগুলো সাড়া দিচ্ছে।

টিকা অধিক উৎপাদনের চাপ সহজ করতে ‘সেকেন্ড-সোর্স অ্যাগ্রিমেন্টস’ নামের নতুন এক ব্যবস্থায় ধনী ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর টিকা কোম্পানিগুলোকে জোটবদ্ধ করতে আমাদের ফাউন্ডেশন কাজ করছে।

কীভাবে ৫ থেকে ১০ বিলিয়ন ডোজ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে বিতরণ করা যাবে

উৎপাদনের সঙ্গে সঙ্গে এই বিপুল পরিমাণ করোনার টিকা ন্যায্যভাবে সমতা নিশ্চিত করে বিশ্বজুড়ে বিতরণ করাও একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এখানে অবকাঠামোগত ও আর্থিক—উভয় ধরনের বাধাবিঘ্ন আছে।

এই টিকা ও অন্যান্য জীবন রক্ষাকারী উপকরণ ন্যায্যভাবে সহজলভ্য করে তুলতে ১৬টি ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি এরই মধ্যে আমাদের ফাউন্ডেশনের সঙ্গে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়েছে। সারা বিশ্বে কীভাবে এই টিকা স্থানান্তর করা হবে, সে বিষয়ে শিপিং ও সরবরাহ ক্ষেত্রের শীর্ষ বিশেষজ্ঞদের একটি উপায় বের করতে হবে। আর দেশের ভেতরে তা সরবরাহের দায়িত্ব জাতীয় সরকারগুলোর। এ ছাড়া জিএভিআইয়ের (গ্যাভি) মতো সংস্থার মাধ্যমে নতুন অর্থায়নের ব্যবস্থা করার ক্ষেত্রে ধনী দেশগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে। দরিদ্র দেশগুলোতে শিশুদের টিকা দেওয়া নিশ্চিত করার ক্ষেত্র গ্যাভির মতো সংস্থার অসাধারণ কর্মকুশলতা আছে।

টিকার বিষয়ে মিথ্যা ষড়যন্ত্রমূলক তত্ত্ব নিয়ে আলোচনা ভালো কিছু বয়ে আনে না। এমন কিছু তত্ত্বে আমাকে ও মেলিন্ডাকে জড়ানো হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে আমরা বলতে পারি, টিকার বিষয়ে আমাদের অর্থায়নের মূল কারণ হচ্ছে, আমরা মানুষের জীবন বাঁচাতে মরিয়া। আমরা চাই, সব শিশু যেন প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পূর্ণ সুযোগ পায়। সমাজকে আমাদের সম্পদ ফিরিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব আমরা অনুভব করি।

সারা বিশ্বে কীভাবে এই টিকা স্থানান্তর করা হবে, সে বিষয়ে শিপিং ও সরবরাহ ক্ষেত্রের শীর্ষ বিশেষজ্ঞদের একটি উপায় বের করতে হবে। আর দেশের ভেতরে তা সরবরাহের দায়িত্ব জাতীয় সরকারগুলোর।

উন্নয়নশীল দেশগুলো কেমন করছে

একটি বিষয়ে নিজে ভুল প্রমাণিত হতে পেরে আমি খুশি। আমি আশাও করেছিলাম, যাতে আমি ভুল প্রমাণিত হই। আমার ভয় ছিল, কম আয়ের দেশগুলোতে কোভিড-১৯-এর প্রকোপ প্রচণ্ড হয়ে উঠতে পারে।

এখন পর্যন্ত এই আশঙ্কা সত্য হয়নি। উদাহরণ হিসেবে সাব-সাহারা অঞ্চলের কথা বলা যায়। সেখানকার বেশির ভাগ দেশে করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের চেয়ে কম। সেই অঞ্চলের সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশ দক্ষিণ আফ্রিকাতেও করোনায় আক্রান্তের হার যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় ৪০ শতাংশ কম। আর মৃত্যুর হার ৫০ শতাংশ কম। এর কারণ বোঝার মতো পর্যাপ্ত তথ্য এখনো আমাদের হাতে নেই। এর সম্ভাব্য নানা কারণ থাকতে পারে।

গত মাসে আমি জেনে আশ্চর্য হয়েছি যে কোভিড-১৯ আফ্রিকায় মানুষের মৃত্যুর কারণ হিসেবে ৩১তম। অথচ বিশ্বে এটি চতুর্থ, আর আমেরিকায় এক নম্বর।

কিন্তু কেন আফ্রিকায় কোভিডে আক্রান্তের হার কম? শুধু যে করোনাভাইরাসে কম মানুষে আক্রান্ত হয়েছে, বিষয়টি তা নয়। এর অন্যতম কারণ হলো, এইচআইভি/এইডস, ম্যালেরিয়া, যক্ষ্মা ও অন্যান্য রোগের সেবা দিতে গিয়ে স্বাস্থ্যকর্মীদের কোভিডে আক্রান্ত শনাক্তের কাজটি বাধাগ্রস্ত হয়েছে। ফলে কোভিড-১৯-এ আক্রান্তের হার কম থেকেছে। কিন্তু অন্যান্য রোগের ওপর কোভিডের মারাত্মক প্রভাব রয়েছে। ফলে অন্যান্য রোগ তীব্র হতে পারে।

আরেকটি কারণ হতে পারে, কোভিডে আক্রান্ত হওয়ার ভয় থেকে সন্দেহভাজন রোগীরা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যেতে অনিচ্ছুক ছিলেন। এর অর্থ হলো, মারাত্মক পরিস্থিতি হলেও তা পরীক্ষার বাইরেই থেকে গেছে। অচিহ্নিত থাকার বিষয়টি যত তীব্র হবে, রোগে মানুষের মৃত্যুও বেশি হবে।

আজ থেকে এক বছর পর, আমি মনে করি, আমরা পেছনে ফিরে তাকিয়ে বলতে পারব যে ২০২১ সাল ছিল ২০২০–এর তুলনায় উন্নতির সময়।

কোভিড, পরিবেশ ও সামনের বছর

গত বসন্তে, যখন কোভিড–১৯ মহামারির তীব্রতা কতটুকু বাড়তে পারে, সে ব্যাপারে স্পষ্ট হওয়া গিয়েছিল, তখন আমি লিখেছিলাম, ‘এটি বিশ্বযুদ্ধের মতো, ভিন্নতা হলো: এবার আমরা সবাই একই পাশে রয়েছি।’

আমি আনন্দের সঙ্গে বলতে চাই যে কোভিড–১৯–এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে পুরো বিশ্ব একজোট হওয়ার বিষয়টি সঠিক বলে প্রতিভাত হয়েছে (কিছু ব্যতিক্রম বাদে)। আমরা যতটা এগিয়েছি, এতটা কখনোই আসতে পারতাম না, যদি বিশ্বের সরকার ও কোম্পানিগুলো এবং বিজ্ঞানীরা একজোট হয়ে কাজ না করতেন।

এই বৈশ্বিক সহযোগিতাই একটি কারণ, যাতে আমি সামনের বছরের জন্য আশাবাদ দেখতে পারছি। শুধু করোনাভাইরাস মহামারির ক্ষেত্রে নয়, আমি বিশ্বাস করি, আসছে বছরে এ সময়ের আরেকটি বড় চ্যালেঞ্জ, অর্থাৎ জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে সুদৃঢ় পদক্ষেপ নেওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হবে।

২০২১ সালে আমি বেশির ভাগ সময় ব্যয় করব বিশ্বজুড়ে নেতাদের সঙ্গে কথা বলার জন্য। আমি এটিই আশা করছি। সেখানে জলবায়ু পরিবর্তন ও কোভিড–১৯ নিয়ে আলোচনা হবে।

আজ থেকে এক বছর পর, আমি মনে করি, আমরা পেছনে ফিরে তাকিয়ে বলতে পারব যে ২০২১ সাল ছিল ২০২০–এর তুলনায় উন্নতির সময়। হয়তো ব্যাপক উন্নতি হবে না, কিন্তু বিশ্বের মানুষের জন্য এটি হবে লক্ষণীয় ও পরিমাপযোগ্য পদক্ষেপে এগিয়ে যাওয়া।

আমি আশা করব, ২০২১ সাল আপনাদের জন্য নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর হবে।