পরিবেশদূষণের সমাধান খুঁজতে জাতিসংঘ মহাসচিবের আহ্বান

জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস
ফাইল ছবি

প্রকৃতির বিরুদ্ধে ‘অনর্থক ও আত্মঘাতী’ যুদ্ধ বন্ধ করার পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তন, জীববৈচিত্র্য হ্রাস এবং দূষণের সমাধান বের করতে বিশ্বব্যাপী পদক্ষেপ গ্রহণের অনুরোধ করেছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। গত বৃহস্পতিবার জাতিসংঘের পরিবেশ কর্মসূচির অধীনে তৈরি ‘মেকিং পিস উইথ নেচার’ শীর্ষক এক প্রতিবেদন প্রকাশের সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন গুতেরেস।

জাতিসংঘের মহাসচিব বলেন, ‘প্রকৃতির সাহায্য ছাড়া আমরা সাফল্য পাব না, এমনকি টিকেও থাকতে পারব না। দীর্ঘদিন ধরে আমরা প্রকৃতির বিরুদ্ধে অনর্থক ও আত্মঘাতী লড়াই করছি। ফলে তিনটি আন্তসংযুক্ত পরিবেশসংকট তৈরি হয়েছে। এগুলো হচ্ছে জলবায়ু বিনষ্ট, জীববৈচিত্র্য ধ্বংস ও দূষণ।’

সম্প্রতি জাতিসংঘের পরিবেশ কর্মসূচির অধীনে তৈরি ‘মেকিং পিস উইথ নেচার’ শীর্ষক এক প্রতিবেদন প্রকাশের সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন গুতেরেস। তিনি বলেন, ‘আমি পরিষ্কার করে বলতে চাই, প্রকৃতির সাহায্য ছাড়া আমরা সাফল্য পাব না, এমনকি টিকেও থাকতে পারব না। দীর্ঘদিন ধরে আমরা প্রকৃতির বিরুদ্ধে অনর্থক ও আত্মঘাতী লড়াই করছি। ফলে তিনটি আন্তসংযুক্ত পরিবেশসংকট তৈরি হয়েছে। এগুলো হচ্ছে জলবায়ু বিনষ্ট, জীববৈচিত্র্য ধ্বংস ও দূষণ। এগুলো প্রজাতি হিসেবে আমাদের টিকে থাকার ঝুঁকি তৈরি করছে।’

জাতিসংঘের মহাসচিব আরও বলেছেন, ‘মানুষের ভালো থাকার বিষয়টি নির্ভর করে গ্রহটিকে ভালো রাখার ওপর। প্রকৃতির সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক পুনরায় মূল্যায়ন ও যুক্ত করার এখনই সময়।’

মানুষ নিজের স্বার্থে ভূমি ও সমুদ্রের পরিবেশের অতিরিক্ত ক্ষতি করছে। পরিবেশ ও সমুদ্র এখন বর্জ্য ফেলার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। সরকারের তরফ থেকে পরিবেশের সুরক্ষার বদলে প্রকৃতিতে অনুসন্ধান চালাতে বেশি অর্থ খরচ করা হচ্ছে। বৈশ্বিক পর্যায়ে পরিবেশের ক্ষতি করে এমন খাতে বছরে চার থেকে ছয় ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার খরচ করা হচ্ছে।

এই সমস্যা সমাধানের একটি উপায় হচ্ছে টেকসই উন্নয়ন। এতে মানুষ ও গ্রহের ভালো থাকার বিষয়টি নির্ধারিত হয়।
আন্তোনিও গুতেরেস, জাতিসংঘ মহাসচিব

গুতেরেস আরও বলেন, ‘আন্তসংযুক্ত জলবায়ু, জীববৈচিত্র্য ও দূষণের মতো বিপর্যয় মোকাবিলায় পুরো বিশ্বের পক্ষ থেকে জরুরি পদক্ষেপ দরকার। সরকার, আন্তর্জাতিক সংস্থা, ব্যবসা, শহর থেকে শুরু করে ব্যক্তি পর্যায়েও এসব পদক্ষেপ নিতে হবে।’

এই শতাব্দীর শেষে বৈশ্বিক তাপমাত্রা ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি বাড়তে পারে। এর প্রভাব নারীর ওপর তুলনামূলক বেশি পড়ছে। জলবায়ু পরিবর্তনে বাস্তুহারা মানুষের মধ্যে ৮০ শতাংশই নারী। এই গ্রহের ৮০ লাখ উদ্ভিদ ও প্রাণীর মধ্যে ১০ লাখের বেশি বিপন্ন হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। এ ছাড়া বায়ুদূষণের ফলে সৃষ্ট রোগে প্রতিবছর ৬৫ লাখ মানুষের অকাল মৃত্যু হয়। দূষিত পানি পান করে ১৮ লাখ মানুষের মৃত্যু হচ্ছে যাদের বেশি ভাগই শিশু। এ ছাড়া ১৩০ কোটি মানুষ দরিদ্র জীবন যাপন করছে। তাদের মধ্যে ৭০ কোটি মানুষ ক্ষুধার্ত অবস্থায় রয়েছে।

গুতেরেস বলেন, এই সমস্যা সমাধানের একটি উপায় হচ্ছে টেকসই উন্নয়ন। এতে মানুষ ও গ্রহের ভালো থাকার বিষয়টি নির্ধারিত হয়।

জাতিসংঘের মহাসচিব আরও বলেন, ‘মূল কথাটি হলো প্রকৃতিকে আমরা কীভাবে দেখি ও মূল্যায়ন করি, সে ধারণা বদলানো দরকার। আমাদের নীতি, পরিকল্পনা ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে প্রকৃতিকে সত্যিকারের মূল্যায়ন করতে হবে। প্রকৃতিকে রক্ষা করতে এবং ফিরে পেতে সংশ্লিষ্ট নীতি ও কর্মকাণ্ডে আমাদের সরাসরি বিনিয়োগ করতে হবে। প্রকৃতিকে বন্ধু হিসেবে দেখতে শিখতে হবে, যা আমাদের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সহায়তা করে।’