পশ্চিমবঙ্গে তৃতীয় দফার ভোটে সহিংসতা

তৃণমূল ও বিজেপি কর্মী–সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ। ৬ এপ্রিল ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের হুগলি জেলার একটি এলাকায়
ছবি: এএনআই

ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে মঙ্গলবার তৃতীয় দফার ভোট গ্রহণ করা হয়েছে। আগের দুই দফার তুলনায় এবারের ভোট অপেক্ষাকৃত বেশি সহিংস হয়ে উঠেছিল। তিনটি মৃত্যুর ঘটনায় পরিস্থিতি আরও বেশি নাজুক ছিল।

পশ্চিমবঙ্গে তৃতীয় দফায় মঙ্গলবার বিধানসভার ২৯৪টি আসনের মধ্যে ভোট হয়েছে দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার ১৬টি, হাওড়ার ৭টি ও হুগলি জেলার ৮টি আসনে। ভারতীয় সময় সকাল সাতটা থেকে শুরু হয় ভোট গ্রহণ। চলেছে সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা পর্যন্ত। গত ২৭ মার্চ শুরু হওয়া এই নির্বাচনে আগের দুই দফায় ভোট হয়েছে ৬০ আসনে।

মঙ্গলবার ভোট হওয়া ৩১টি আসনের মধ্যে ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে ৩০টিতেই জিতেছিল তৃণমূল কংগ্রেস। একটিতে জিতেছিল কংগ্রেস। কিন্তু ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের নিরিখে এই ৩১টি আসনের মধ্যে ৩০টিতে এগিয়ে রয়েছে বিজেপি।

মঙ্গলবারের ভোটকে কেন্দ্র করে বেশ কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটেছে। তিনটি মৃত্যুর ঘটনাকে রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড বলে অভিযোগ তুলেছে তৃণমূল ও বিজেপি। গোঘাটে সোমবার রাতে এক বিজেপি কর্মীকে তৃণমূল সমর্থকেরা মারধর করলে তাঁর মা ছাড়াতে আসেন। এ সময় তাঁকেও বেদম মারধর করা হয়। এরপর মাধবী আদক (৫০) নামের ওই নারী মারা যান। বিজেপির দাবি, তৃণমূলের সন্ত্রাসীরা মাধবীকে হত্যা করেছে।

গোঘাটেই মঙ্গলবার দুপুরে ভোট দিয়ে ফেরার পথে মারা যান তৃণমূল বুথ সভাপতি সুনীল রায় (৭২)। তৃণমূলের দাবি, বিজেপির সন্ত্রাসীরা সুনীলকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে হত্যা করেছে। তবে এই আসনে বিজেপি প্রার্থী বিশ্বনাথ কারক বলেছেন, সুনীল রায় হার্ট অ্যাটাকে মারা গেছেন। এরপর তৃণমূল ফন্দি এঁটে তাঁকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে হত্যা করার অভিযোগ তুলেছে।

দক্ষিণ ২৪ পরগনার বারুইপুর ভোটকেন্দ্রে ভোটারদের সারি
ছবি: ভাস্কর মুখার্জি

এদিকে বীরভূমের দুবরাজপুরে মঙ্গলবার ভোরে পতিহার ডোম নামের ৩৭ বছর বয়সী এক বিজেপি সমর্থকের মরদেহ পাওয়া যায় বাড়ির কাছের একটি পুকুরপাড়ে। বিজেপির দাবি, তৃণমূলের সন্ত্রাসীরা পতিহার ডোমকে হত্যা করেছে।

এ ছাড়া হাওড়ার উলবেড়িয়া কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী চিকিৎসক নির্মল মাজি মঙ্গলবার বিজেপির সমর্থকদের হাতে লাঞ্ছিত হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। তৃণমূল সমর্থকদের হাতে লাঞ্ছিত হয়েছেন অভিনেত্রী ও প্রার্থী পাপিয়া অধিকারী। আরামবাগের তৃণমূল প্রার্থী সুজাতা মন্ডল খাঁ অভিযোগ করেছেন, বিজেপির সমর্থকেরা তাঁকে মারধর করেছে। সুজাতার স্বামী বিজেপির সাংসদ সৌমিত্র খাঁ। স্বামীর সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় সুজাতা বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিয়ে নির্বাচনে লড়তে তৃণমূলের মনোনয়ন পান।

এদিকে ফলতার বিজেপি প্রার্থী বিধান পাড়ুই তৃণমূলের সমর্থকদের হামলায় আহত হয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ভাঙচুর করা হয়েছে তাঁর গাড়ি। খানাকুলের তৃণমূল প্রার্থী নাজিমুল করিমও লাঞ্ছিত হয়েছেন বিজেপির সমর্থকদের হাতে। এ ছাড়া দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার বারুইপুরের বিজেপি প্রার্থী খোকন মন্ডলকে মারধর করেছেন তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকেরা।

এদিকে মঙ্গলবার ভোরে এক তৃণমূল নেতার বাসভবন থেকে উদ্ধার করা হয় ইভিএম মেশিন। যে কর্মকর্তা ইভিএম মেশিনটি ওই বাড়িতে রেখেছিলেন, তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ছাড়া তৃতীয় দফার এই ভোটে বিভিন্ন ভোটকেন্দ্রে এজেন্টদের ঢুকতে বাধা দেওয়া, ভোটদানে বাধা দেওয়া, জাল ভোট, বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ভয়ভীতি দেখানো এবং বেশ কয়েকটি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।