পার্লামেন্টে সুগা নির্বাচিত, অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে সর্বোচ্চ গুরুত্ব

জাপানের পার্লামেন্টে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হলেন ইউশিহিদে সুগা।ছবি: রয়টার্স

ইউশিহিদে সুগা আজ বুধবার জাপানের পার্লামেন্টে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন। পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষে ৭১ বছরের সুগা সহজ জয় পান। ৪৬২ ভোটের মধ্যে তিনি ৩১৪ ভোটে জয়ী হন। এর মধ্য দিয়ে সুগার প্রধানমন্ত্রীর পদ নিশ্চিত হলো।

পার্লামেন্টে তাঁর ক্ষমতাসীন দল লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সুগার সামনে কঠিন চ্যালেঞ্জ হবে আর্থিক মন্দা কাটিয়ে ওঠা। করোনার প্রাদুর্ভাবের আগে থেকেই জাপান আর্থিক মন্দায় রয়েছে।

এএফপির খবরে জানানো হয়, ভোট গণনার ফল অনুসারে নিম্নকক্ষের স্পিকার তাদামোরি ওশিমা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ইউশিহিদে সুগার নাম ঘোষণা করেন। এ ব্যাপারে সুগা তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য করেননি। তিনি পরে মন্ত্রিসভার ঘোষণা দেবেন। স্থানীয় গণমাধ্যমের খবর বলছে, শিনজো আবের সরকারের বেশ কয়েকজন মন্ত্রী তাঁর মন্ত্রিসভায় থাকবেন।

সুগার মন্ত্রিসভায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী তোশিমিৎসু মোতেগি ও অর্থমন্ত্রী তারো আসো তাঁদের দায়িত্বে বহাল থাকবেন। তারো কোনোর বদলে প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন আবের ভাই নোবুও কিশি। নোবুও কিশিকে আবের চাচা দত্তক নিয়েছিলেন।

আবের নেতৃত্বাধীন সরকারে তিনজন নারী মন্ত্রিসভায় দায়িত্ব পালন করেছেন। সুগার মন্ত্রিসভায় থাকছেন দুজন নারী। তাঁরা অলিম্পিকমন্ত্রী ও বিচারমন্ত্রী পদে দায়িত্ব পালন করবেন।

গত সোমবার এলডিপির নেতা নির্বাচিত হন সুগা। শিনজে আবের নীতিই তিনি পরিচালনা করবেন বলে মনে করেন বিশ্লেষকেরা।

শারীরিক অসুস্থতার কারণে মেয়াদ শেষ হওয়ার এক বছর আগেই পদত্যাগ করতে হয় আবেকে।

প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ার আগে সুগা চিফ কেবিনেট সেক্রেটারি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। জাপানের অভিজাত রাজনৈতিক ব্যক্তিদের থেকে তাঁর শৈশব ও জীবন আলাদা।

সুগা জাপানের গ্রামাঞ্চলকে উন্নত করার জন্য কাজ করেছেন। তিনি মতাদর্শিকের তুলনায় বেশি বাস্তববাদী। প্রচার চলাকালে তিনি প্রশাসনিক বাধা দূর করার প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছেন। তিনি নীতিমালা বাস্তবায়নের জন্য আমলাতান্ত্রিকতা দূর করার কথা বলেছেন।

সুগা বলেছেন, অর্থনীতিকে পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা তাঁর কাছে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পাবে। একই সঙ্গে করোনার প্রাদুর্ভাব রোধেও তিনি কাজ করবেন। ২০২০ সালের স্থগিত হওয়া টোকিও অলিম্পিক ২০২১ সালের জুলাই মাসে অনুষ্ঠিত হওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। এ জন্য এই দুটি বিষয় দরকারি।

এলডিপি নেতা নির্বাচিত হওয়ার পর গত সোমবার সুগা বলেন, ‘সংকট কাটিয়ে উঠতে ও জাপানের জনগণকে স্বস্তি দিতে শিনজো আবে যা বাস্তবায়ন করেছেন এতে আমাদের সফল হওয়া প্রয়োজন।’

সুগার বৈদেশিক নীতিবিষয়ক অভিজ্ঞতা কম। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সুগা এ ক্ষেত্রে তাঁর পূর্বসূরি আবের নীতি অনুসরণ করবেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ককে গুরুত্ব দেবেন।

বিতর্ক রয়েছে যে সুগা তাঁর অবস্থান সুদৃঢ় করতে ও ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন এড়াতে আরেকটি নির্বাচন দিতে পারেন। এতেও তাঁর জয়ের সম্ভাবনা অনেক বেশি।

আবে আইনপ্রণেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। বুধবার সকালে পদত্যাগের প্রস্তুতি নেওয়ার সময় তিনি বলেন, সব শক্তি দিয়ে তিনি নিজের দায়িত্ব পালন করেছেন। গৌরবের সঙ্গে তাঁর সময়কাল শেষ করেছেন। সবকিছুর জন্য তিনি জাপানি জনগণের কাছে ঋণী।

কে এই ইয়োশিহিদে সুগা

ইয়োশিহিদে সুগা ছিলেন কৃষকের সন্তান। কিন্তু বাবার পেশা বেছে না নিয়ে চলে আসেন শহরে। কাজ নেন কার্ডবোর্ড কারাখানায়। সঙ্গে চালিয়ে যান পড়াশোনা।

উত্তরাধিকার রাজনীতির আধিপত্য প্রবল এলডিপিতে। এর বাইরে কৃষক পরিবার থেকে উঠে এসেছেন সুগা। সুগার জন্ম উত্তরের আকিতা জেলার এক কৃষক পরিবারে, ১৯৪৮ সালে। তাঁর বাবা ছিলেন স্ট্রবেরিচাষি ও মা স্কুলশিক্ষক। তিনি কৃষিকাজে যুক্ত না হয়ে শহরে এসে কিছু একটা করতে চেয়েছিলেন। তিনি টোকিওতে কার্ডবোর্ড কোম্পানি থেকে শুরু করে ছোটখাটো নানা কারখানায় কাজ করেন। সেই অর্থ দিয়েই পড়েন টোকিওর একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে।

১৯৬৯ সালে জাপানে উত্তাল ছাত্ররাজনীতির সময় হলেও সেখান থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রেখেছেন সুগা। ছাত্রদের মধ্যে জনপ্রিয় ভিয়েতনাম যুদ্ধবিরোধী আন্দোলনও তাঁকে কাছে টানতে পারেনি। তবে খেলাধুলা, বিশেষ করে কারাতে নিয়ে তিনি উৎসাহী ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের লেখাপড়া শেষ করে একটি বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি রক্ষণাবেক্ষণ প্রতিষ্ঠানে তিনি চাকরি নেন। তবে সেই কাজ তাঁকে বেশি দিন করতে হয়নি। একজন সাংসদের সচিব পদে নিয়োগ পাওয়ার সূত্রে রাজনীতি নিয়ে তিনি উৎসাহী হয়ে ওঠেন। ১৯৮৭ সালে ইয়োকোহামা নগর পরিষদের নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে জয়লাভ করার মধ্য দিয়ে রাজনীতির জগতে প্রবেশ করেন তিনি।

পরবর্তী সময়ে ভাগ্য সুপ্রসন্ন না হলে স্থানীয় পর্যায়ের রাজনীতিতে তাঁর বিচরণ হয়তো সীমিত থেকে যেত। ১৯৯৬ সালে একজন বয়স্ক সাংসদের ছেলে বাবার আসনে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। হঠাৎ তিনি মারা যাওয়ায় সুগা প্রার্থী হন। এরপর আর তাঁর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।