‘ পালানোর চেষ্টা কোরো না, জঙ্গলে মরে পড়ে থাকবে’

নাইজেরিয়ার ক্যাটসিনা রাজ্যের ক্যানকারা জেলায় এই বোর্ডিং স্কুলে হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা।ফাইল ছবি, রয়টার্স

সেদিন মধ্যরাতে গুলির শব্দে ঘুম ভাঙে আন্নাস শুয়াইবুর (১৬)। বোর্ডিং স্কুলে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে শুয়াইবুসহ শতাধিক কিশোরকে জোর করে জঙ্গলে ধরে নিয়ে যায় বন্দুকধারীরা। বেশ কয়েক ঘণ্টা হাঁটার পর বন্দুকধারীদের নির্দেশে শুয়াইবুরা থামে। বন্দুকধারীরা তখন তাদের পালানোর চেষ্টা না করতে হুমকি দেয়।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে শুয়াইবু বলে, ‘তারা বলেছিল, তোমরা যদি পালানোর চেষ্টা করো বা আমরা তোমাদের সে সুযোগ দিই, তোমরা অন্য কোথাও যেতে পারবে না। বরং জঙ্গলে স্রেফ মরে পড়ে থাকবে।’    

১১ ডিসেম্বর নাইজেরিয়ার ক্যাটসিনা রাজ্যের ক্যানকারা শহরে ছেলেদের একটি বোর্ডিং স্কুলে হামলা চালায় বন্দুকধারীরা। সেখান থেকে শুয়াইবুসহ ৩৪৪ জন কিশোরকে অপহরণ করে হামলাকারীরা।
নাইজেরিয়ার নিরাপত্তা বাহিনী উদ্ধার করার আগে ছয় দিন জঙ্গলেই আটক ছিল কিশোরেরা। স্থানীয় সময় গত বৃহস্পতিবার রুগু জঙ্গলে অভিযান চালিয়ে তাদের উদ্ধার করে নাইজেরিয়ার নিরাপত্তা বাহিনী।
এ ঘটনার পর আফ্রিকার জনসংখ্যাবহুল দেশটিতে নিরাপত্তাহীনতা ইস্যুতে জনবিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। বোর্ডিং স্কুল থেকে অপহরণের এ ঘটনা ২০১৪ সালের কথা মনে করিয়ে দেয়। ২০১৪ সালে নাইজেরিয়ার ‘জঙ্গিগোষ্ঠী’ বোকো হারাম চিবক শহর থেকে ২৭০ জন কিশোরীকে অপহরণ করেছিল।
রয়টার্সের সঙ্গে কথা বলার সময় শুয়াইবু বন্ধুদের সঙ্গে ফুটবল খেলছিল। বন্দিদশা থেকে ফিরে পরিবারের সঙ্গে দেখা হওয়ার পরের দিন তাকে বেশ ভাবনাহীন দেখাচ্ছিল। কিন্তু জঙ্গলে বন্দী থাকা দিনের কথা বর্ণনার সময় শুয়াইবুর ফুরফুরে মেজাজ গায়েব হয়ে যায়। শুয়াইবু বর্ণনা করে, সে ও তার সঙ্গে থাকা ছেলেরা কেমন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে গেছে। শুয়াইবুর ভাষায়, ‘আমি সত্যি ভয় পেয়েছিলাম। কারণ, আমি জানতাম না আমরা কোথায় যাচ্ছি।’ নিচের দিকে তাকিয়ে বেশ নরম গলায় এসব কথা বলছিল শুয়াইবু। সে জানায়, জঙ্গলের মধ্য দিয়ে হাঁটার সময় অপহরণকারীরা তাদের মারধর করেছিল।

তবে অপহরণকারীরা ঠিক কতজন ছিল, এ বিষয়ে নিশ্চিত নয় শুয়াইবু। সে জানায়, তাদের মাঝেমধ্যে খাবার দেওয়া হতো। অনেক সময় তাদের গাছের পাতা, জঙ্গলে জমে থাকা পানিও খেতে হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে অপহরণের শিকার হওয়া আরেক কিশোর বলে, ‘যুদ্ধবিমান দেখার পর অপহরণকারীরা দ্রুত তাদের জায়গা পরিবর্তন করে। তারা আমাদের খাবার দিয়েছিল, কিন্তু পরিমাণে খুব কম ছিল।’
উদ্ধারের পর গত শুক্রবার কিশোরদের স্থানীয় গভর্নরের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর তাদের প্রেসিডেন্ট মুহাম্মাদু বুহারির সঙ্গে দেখা করানো হয়।
এ অপহরণের ঘটনার অনেক কিছুই এখনো অস্পষ্ট। কারা অপহরণ করেছে, অপহরণকারীদের মুক্তিপণ দেওয়া হয়েছিল কি না বা তাদের উদ্ধারের প্রক্রিয়া কী ছিল—এসব বিষয়ে কিছুই খোলাসা হয়নি। ‘জঙ্গিগোষ্ঠী’ বোকো হারাম এ ঘটনার দায় স্বীকার করলেও, তার সপক্ষে কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।