পেগাসাস স্পাইওয়্যার নিয়ে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে আলোচনা

প্রথম ব্রিটিশ বাংলাদেশি হিসেবে ১৯৯৮ সালে যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টের হাউস অব লর্ডসের সদস্য হন মঞ্জিলা পলা উদ্দিন।
ছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়া

পেগাসাস স্পাইওয়্যার ব্যবহার করে ফোনে আড়ি পাতা নিয়ে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষে আলোচনা হয়েছে। হাউস অব লর্ডসে প্রসঙ্গটি তুলেছিলেন ব্রিটিশ-বাংলাদেশি ব্যারোনেস মঞ্জিলা পলা উদ্দিন। তাঁর জবাবে যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দক্ষিণ এশিয়া ও কমনওয়েলথ–বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী লর্ড আহমেদ বলেছেন, ব্রিটিশ নাগরিকদের ওপর এ ধরনের কর্মকাণ্ড প্রতিরোধে কাজ করবেন তারা।

ব্রিটিশ দৈনিক গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, বিভিন্ন দেশে পেগাসাস স্পাইওয়্যার ব্যবহার করে ফোনে নজরদারি চালানো হয়েছে বা তার চেষ্টা করা হয়েছে, এমন ৫০ হাজার ফোন নম্বরের যে তালিকা ফাঁস হয়েছে, সেখানে চার শতাধিক ব্যক্তির যুক্তরাজ্যের ফোন নম্বর রয়েছে। তালিকায় হাউস অব লর্ডসের সদস্য ব্যারোনেস মঞ্জিলা পলা উদ্দিনও রয়েছেন। ২০১৭ ও ২০১৮ সালের তালিকায় তাঁর ফোন নম্বর রয়েছে।

পেগাসাস স্পাইওয়্যারের নির্মাতা ইসরায়েলি প্রতিষ্ঠান এনএসও গ্রুপ। কোনো ব্যক্তির স্মার্টফোনে একবার এই স্পাইওয়্যার ঢুকলে ছবি, ই-মেইল, কল রেকর্ড, ফোনে সংরক্ষিত যাবতীয় নম্বর হাতিয়ে নেওয়া যায়। এমনকি হোয়াটসঅ্যাপ, সিগন্যালের মতো এনক্রিপটেড অ্যাপে আদান-প্রদান করা বার্তাও নজরদারির আওতায় চলে যায়। বিভিন্ন দেশের সরকারি সংস্থা পেগাসাস স্পাইওয়্যারের গ্রাহক। ধারণা করা হচ্ছে, তালিকায় যুক্তরাজ্যের ফোন নম্বরগুলো আসার পেছনে প্রধানত সংযুক্ত আরব আমিরাতের ভূমিকা রয়েছে।

গত বৃহস্পতিবার এ খবর প্রকাশের পর হাউস অব লর্ডসে বিষয়টি তুলে ব্যারোনেস মঞ্জিলা পলা উদ্দিন জানতে চান, সরকারের পদক্ষেপের ফলে এ ধরনের ঘটনা বন্ধ হবে বলে নিশ্চয়তা দেওয়া যাবে কি না! আপাতদৃষ্টে বন্ধু দেশ বা অংশীদারদের কাছ থেকে আগামীতে যুক্তরাজ্যের নাগরিক ও প্রতিষ্ঠানের ওপর এ ধরনের হামলা বন্ধে সরকার যেন ব্যর্থ না হয়, সেই নিশ্চয়তা চান তিনি।

জবাবে প্রতিমন্ত্রী লর্ড আহমেদ বলেন, সাইবার জগতের প্রতিটি উপকরণেরই সামর্থ্যের ব্যবহার করতে হবে একটি আইনি কাঠামোর মধ্যে, সামঞ্জস্য রেখে ও দায়িত্বশীলতার সঙ্গে। ব্যারোনেস মঞ্জিলা পলা উদ্দিন যে বিষয়টি তুলেছেন, সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সরকারগুলোর সঙ্গে তাঁরা কাজ করবেন।

তিনি বলেন, ‘গুরুত্বপূর্ণ এ বিষয়ে আমরা আমাদের মিত্রদের সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করছি। সাইবার হুমকি মোকাবিলা ও নিরাপত্তা বাড়াতে এই কাজ চলছে। যেমনটি আমরা চীনের ক্ষেত্রে করেছিলাম। যুক্তরাজ্যের নাগরিক ও প্রতিষ্ঠান, প্রকৃত অর্থে বিশ্বজুড়েই সবাই যেন সম্ভাব্য সবচেয়ে ভালোভাবে সুরক্ষিত থাকে, সে জন্য আমরা দায়িত্বশীলতার সঙ্গে কাজ চালিয়ে যাব। এ ধরনের কর্মকাণ্ড প্রতিরোধে আমরা কাজ করে যাব।’

ব্রিটেনের বাঙালি কমিউনিটিতে ব্যারোনেস পলা উদ্দিন একটি গুরুত্বপূর্ণ নাম। তাঁর জন্ম ১৯৫৯ সালে, রাজশাহী জেলায়। প্রথম ব্রিটিশ বাংলাদেশি হিসেবে ১৯৯৮ সালে তিনি যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টের হাউস অব লর্ডসের সদস্য হওয়ার গৌরব অর্জন করেন।

১৯৭৩ সালে মাত্র ১৩ বছর বয়সে পরিবারের সঙ্গে লন্ডনে যান ব্যারোনেস পলা উদ্দিন। নর্থ লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক উন্নয়ন বিভাগ থেকে ডিপ্লোমা করেন। সত্তরের দশকের শেষ দিক থেকেই তিনি ব্রিটেনের সামাজিক ও রাজনৈতিক বিভিন্ন ক্ষেত্রে সম্পৃক্ত হতে থাকেন। এরই ধারাবাহিকতায় আশির দশকে ইয়ুথ অ্যান্ড কমিউনিটি ওয়ার্কারের সঙ্গে যুক্ত হন। বাঙালি-অধ্যুষিত পূর্ব লন্ডনের টাওয়ার হ্যামলেটস সোশ্যাল সার্ভিসের কর্মী হিসেবে বেশ সুনাম অর্জন করেন তিনি।

আশির দশকেরই শেষ দিকে মঞ্জিলা পলা উদ্দিন টাওয়ার হ্যামলেটস উইমেন্স হেলথ প্রজেক্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৮ সালে তিনি নিউহাম সামাজিক উন্নয়ন সংস্থার সঙ্গে যুক্ত হন। প্রথম কোনো বাঙালি হিসেবে লেবার পার্টি থেকে ১৯৯০ সালে তিনি দ্য লন্ডন বারা অব টাওয়ার হ্যামলেটস অঞ্চলের কাউন্সিলর নির্বাচিত হওয়ার পর সফলতার সঙ্গে দুই বছর দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৪ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত লন্ডনের টাওয়ার হ্যামলেটসের নির্বাহী প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালনকালেও কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখেন মঞ্জিলা পলা উদ্দিন।

ব্যারোনেস মঞ্জিলা পলা উদ্দিন ১৯৯৯ সালে যুক্তরাজ্যে এশিয়ান নারীদের উন্নয়নের লক্ষ্যে জাগো নারী নামে একটি সংস্থা তৈরি করেন, যা তাঁকে স্থানীয়ভাবে আরও বেশি পরিচিত করে তোলে। বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এই ব্রিটিশ লর্ডসকে বিবেচনা করা হয়ে থাকে পশ্চিম ইউরোপের অন্যতম প্রভাবশালী মুসলিম নারী হিসেবে। বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাজ্যের পরীক্ষিত বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ভিত মজবুত করতে ব্যারোনেস মঞ্জিলা পলা উদ্দিনের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে।