প্রতিদিন রেকর্ড ভাঙছে করোনা সংক্রমণ

করোনাভাইরাস
প্রতীকী ছবি

বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়ানোর ১০ মাস পূর্ণ হতে চলেছে। এখন পর্যন্ত এই মহামারি নিয়ন্ত্রণে আসার কোনো লক্ষণ নেই। বরং দিনে দিনে সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা ও মৃত্যু বাড়ছে। বৃহস্পতিবার বিশ্বজুড়ে এক দিনে প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ করোনায় সংক্রমিত রোগী শনাক্ত হয়েছেন। এক দিনে শনাক্ত হওয়া রোগীর সংখ্যার দিক থেকে এটিই এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ রেকর্ড। এর আগের দিন বুধবার শনাক্ত হয় পাঁচ লাখের বেশি রোগী। করোনা মহামারি ছড়ানোর পর এদিনই প্রথম এক দিনে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা পাঁচ লাখ ছাড়ায়। বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ তথ্য জানিয়েছে।

চীন থেকে গত জানুয়ারিতে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। শুরুর দিকে এই মহামারি আঘাত হানে ইউরোপে। এরপর তা আমেরিকা হয়ে এশিয়ায়, বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়ায় ছড়ায়। ইউরোপের দেশগুলোয় করোনার প্রথম ঢেউয়ের পর এখন দ্বিতীয় ঢেউ এসেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে নেদারল্যান্ডস, ইতালি, স্পেন, ফ্রান্স, জার্মানি, যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশ পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে।

মহামারির শুরুতেই ইতালি ও স্পেনে লকডাউনের পাশাপাশি জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছিল। দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় স্পেনে আবারও জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে।

ইতালিতেও আরোপ করা হয়েছে বিধিনিষেধ। এ ছাড়া ফ্রান্সে আজ শুক্রবার থেকে এক মাসের জন্য গোটা দেশ লকডাউন করা হবে। এ ছাড়া জার্মানিতেও ২ নভেম্বর থেকে কার্যকর হবে নতুন কঠোর বিধিনিষেধ।

করোনা মহামারির সার্বক্ষণিক তথ্য প্রকাশকারী ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডোমিটারস ডট ইনফোর তথ্যমতে, বুধবার বিশ্বজুড়ে শনাক্ত হন ৫ লাখ ৭ হাজারের বেশি করোনায় সংক্রমিত রোগী। আর বৃহস্পতিবার শনাক্ত হয়েছেন ৫ লাখ ৪৫ হাজারের বেশি রোগী।

সংক্রমণের এই বৃদ্ধির যুক্তি হিসেবে কেউ কেউ দাবি করছেন, বিভিন্ন দেশে নমুনা পরীক্ষার হার বাড়ায় এমনটা হচ্ছে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নমুনা পরীক্ষার হার বাড়লেও করোনার সংক্রমণ ছড়ানোর হারও যে বেড়েছে, তা স্বীকার করতেই হবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক তেদরোস আধানোম গেব্রেয়াসুস সম্প্রতি হুঁশিয়ার করে দিয়ে বলেছেন, এখন হাল ছেড়ে দিলে পরিণাম হবে ভয়াবহ।

সংক্রমণ বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে করোনায় মৃত্যুও আবার বাড়ছে। ওয়ার্ল্ডোমিটারসের তথ্যমতে, বুধবার বিশ্বজুড়ে মারা যান ৭ হাজার ১১৬ জন করোনায় সংক্রমিত রোগী। আর বৃহস্পতিবার মৃত্যু হয়েছে ৭ হাজার ১৭২ জনের। মোটের ওপর করোনায় এ পর্যন্ত মারা গেছেন ১১ লাখ ৮৮ হাজারের বেশি রোগী। আর এ পর্যন্ত সুস্থ হয়ে উঠেছেন ৩ কোটি ৩০ লাখের বেশি করোনায় সংক্রমিত মানুষ।

বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, বেশির ভাগ পশ্চিমা দেশ এবং লাতিন আমেরিকার কিছু অংশে কয়েক সপ্তাহ ধরেই রোগী বাড়ছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া অন্যান্য দেশ সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছে। ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা ও লাতিন আমেরিকার মোট করোনা রোগীর সংখ্যা বিশ্বজুড়ে মোট রোগীর ৬৬ শতাংশ। করোনায় বৈশ্বিক মৃত্যুর ৭৬ শতাংশও হয়েছে এসব অঞ্চলে।

ইউরোপে গত দুই সপ্তাহে দৈনিক সংক্রমিত রোগী শনাক্ত হওয়ার হার দ্বিগুণ হয়েছে। রয়টার্সের হিসাব অনুসারে, বুধবার এই মহাদেশে শনাক্ত হয়েছেন আড়াই লাখের বেশি রোগী। এর মধ্যে যুক্তরাজ্যে গত সপ্তাহজুড়ে দিনে গড়ে ২০ হাজারের বেশি করে রোগী শনাক্ত হয়েছেন। এই সময়ে দৈনিক মৃত্যুর হার ছিল ২০০ জনের অধিক। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় যুক্তরাজ্যে এরই মধ্যে অঞ্চলভিত্তিক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোমিনিক রাব বলেছেন, তাঁদের এই কৌশল কাজ করছে বলে মনে হচ্ছে। বিবিসি টিভিকে তিনি বলেন, ‘কিছু কিছু এলাকায় সংক্রমণ ছড়ানোর হার কমে আসছে বলে আমরা তথ্যপ্রমাণ পাচ্ছি।’

এদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) স্বাস্থ্যবিষয়ক কমিশনার স্টেলা কাইরিয়াকিডস শুক্রবার বলেছেন, ইইউ দেশগুলোর আরও বিধিনিষেধ আরোপের জন্য প্রস্তুত হওয়া উচিত।

রাশিয়ায়ও করোনার সংক্রমণ বাড়ছে। দেশটিতে শুক্রবার ১৮ হাজারের বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছেন। এ নিয়ে দেশটিতে শনাক্ত হওয়া মোট সংক্রমিত রোগী ১৬ লাখ ছুঁই ছুঁই। বিগত ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন ৩৫৫ জন। রাশিয়ায় এ নিয়ে করোনায় মোট মৃত্যু বেড়ে ২৭ হাজার ৬৫৬ জন হলো।

করোনায় সংক্রমিত রোগী ও মৃত্যুর দিক থেকে যুক্তরাষ্ট্র এখনো শীর্ষে রয়েছে। দেশটিতে বৃহস্পতিবার ৯১ হাজারের বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছেন, যা এক দিনে এ পর্যন্ত সর্বোচ্চ। এই পরিস্থিতিতে হোয়াইট হাউসের করোনা মহামারিবিষয়ক টাস্কফোর্সের অন্যতম সদস্য এবং ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব অ্যালার্জি অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজের পরিচালক অ্যান্থনি ফাউসি বলেছেন, ‘আমরা ভুল পথে অগ্রসর হচ্ছি।’

অবশ্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শুরু থেকেই করোনা মহামারিকে গুরুত্ব দিচ্ছেন না। এমনকি করোনায় সংক্রমিত হওয়ার পরও তিনি এই ভাইরাসকে পাত্তা দিতে রাজি নন।

এদিকে করোনার সংক্রমণে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা দক্ষিণ এশিয়ার দেশ ভারতে কিছুদিন ধরে দৈনিক সংক্রমণ কিছুটা কমে এসেছে। রয়টার্স জানায়, দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় শুক্রবার বলেছে, বিগত ২৪ ঘণ্টায় ভারতে ৪৮ হাজার ৬৪৮ জন করোনায় সংক্রমিত রোগী শনাক্ত হয়েছেন। এ দিন দেশটিতে মৃত্যু হয়েছে ৫৬৩ জনের। ওয়ার্ল্ডোমিটারসের তথ্যমতে, ভারতে এ পর্যন্ত প্রায় ৮১ লাখ রোগী শনাক্ত হয়েছেন। এর মধ্যে মারা গেছেন ১ লাখ ২১ হাজারের বেশি।

মধ্যপ্রাচ্যেও করোনার সংক্রমণ আবার বাড়ছে। রয়টার্স জানায়, ইরানে শুক্রবার মোট রোগীর সংখ্যা ৬ লাখ ছাড়িয়েছে। এ দিন শনাক্ত হয়েছেন ৮ হাজারের বেশি করোনায় সংক্রমিত রোগী। দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সিমা সাদত লারি রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনকে বলেছেন, বিগত ২৪ ঘণ্টায় ইরানে ৩৬৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে দেশটিতে করোনায় মোট মৃত্যু ৩৪ হাজার ৪৭৮ জনে দাঁড়াল।