বন্য প্রাণী কমে যাচ্ছে ব্যাপকভাবে, বিজ্ঞানীদের সতর্কতা

বনভূমি উজাড় হওয়ায় বন্য প্রাণীরা বিপদে পড়েছেছবি: রয়টার্স

মানুষ গাছপালা ধ্বংস করায় উজাড় হয়ে যাচ্ছে বন। হারিয়ে যাচ্ছে বন্য প্রাণীর থাকার জায়গা। গত ৫০ বছরের কম সময়ে বন্য প্রাণীর সংখ্যা দুই-তৃতীয়াংশের নিচে নেমে এসেছে। ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ডলাইফ ফান্ডের (ডব্লিউডব্লিউএফ) সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এ তথ্য। বিবিসি অনলাইনের প্রতিবেদনে এ কথা জানানো হয়।

বন্য প্রাণী সংরক্ষণে নিয়োজিত ডব্লিউডব্লিউএফের প্রতিবেদনে জানানো হয়, বন্য প্রাণী নিশ্চিহ্ন হওয়ার মাত্রা আশঙ্কাজনক। এটি কমার কোনো লক্ষণ নেই। প্রকৃতি তাকে রক্ষা করতে ব্যাকুল–বার্তা পাঠাচ্ছে, মানুষের সাড়া নেই।

প্রতিবেদনে সতর্ক করা হয়েছে, মানুষের দ্বারা প্রকৃতি এমন হারে ধ্বংস হচ্ছে, যা আগে কখনো দেখা যায়নি।

ডব্লিউডব্লিউএফের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা তানিয়া স্টিল বলেছেন, ‘বন্য জীবন অবাধে ঝরে যাচ্ছে। আমরা বন পুড়িয়ে ফেলছি, সাগরে বেশি বেশি মাছ শিকার করছি। বনভূমি বিরান করে ফেলছি। এভাবে আমরা আমাদের বিশ্বকে ধ্বংস করে দিচ্ছি, অথচ এ জায়গাকে নিজেদের বসতি বলি। এতে আমাদের স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা ও পৃথিবীতে টিকে থাকার ক্ষেত্রে ঝুঁকি তৈরি করে চলেছি। প্রকৃতি ব্যাকুলভাবে বলছে তাকে রক্ষা করতে। আমাদের সময় কিন্তু দ্রুত ফুরিয়ে আসছে।’

প্রতিবেদনে সারা বিশ্বের আবাসস্থলগুলোতে জীব সংরক্ষণ বিজ্ঞানীদের পর্যবেক্ষণ করা হাজারো বন্য প্রজাতির দিকে নজর দেওয়া হয়েছিল। ১৯৭০ সালের পরে ২০ হাজার স্তন্যপায়ী, উভচর, সরীসৃপ এবং মাছের ২০ হাজার প্রজাতির মধ্যে ৬৮ শতাংশই হারিয়ে গেছে।

যুক্তরাজ্যের জুলজিক্যাল সোসাইটি অব লন্ডনের (জেডএসএল) সংরক্ষণ পরিচালক অ্যান্ড্রু টেরি বলেন, বন্য জীবন ধ্বংসের বিষয়টি পরিষ্কারভাবে মানুষের দ্বারা প্রাকৃতিক বিশ্বে ক্ষতির বিষয়টি প্রমাণ করে। যদি কোনো পরিবর্তন না হয়, তবে তাদের সংখ্যা কমার বিষয়টি অবিরত থাকবে। এতে বন্য জীবন বিলুপ্ত হয়ে আমরা যে বাস্তুসংস্থানের ওপর নির্ভরশীল, তাতে ঝুঁকি তৈরি করবে।’

প্রতিবেদনে বলা হয়, কোভিড-১৯ মহামারিটি প্রকৃতি এবং মানুষ কীভাবে জড়িত রয়েছে, তার এক চূড়ান্ত অনুস্মারক।

বিশ্লেষকেরা ধারণা করেন, মহামারির মতো জরুরি অবস্থা সৃষ্টির জন্য আবাসস্থল হারানো ও বন্য প্রাণীর অবৈধ ব্যবহার ও বাণিজ্য যুক্ত থাকতে পারে। বন্য প্রাণীর বাণিজ্যের মতো অনেক কারণে বন্য জীবন ধ্বংস হচ্ছে। এ অবস্থায় জরুরি সংরক্ষণের মতো পদক্ষেপ নেওয়ার পাশাপাশি আমাদের খাদ্য উৎপাদন ও খাদ্য গ্রহণের পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনলে এ প্রক্রিয়া রোধ করা সম্ভব।