বাল্যবিবাহের ঝুঁকিতে অতিরিক্ত ১ কোটি মেয়ে

বাল্যবিবাহ
প্রতীকী ছবি

চলতি দশক শেষ হওয়ার আগেই বিশ্বজুড়ে অতিরিক্ত এক কোটি মেয়ে বাল্যবিবাহের সম্মুখীন হতে পারে বলে সতর্ক করে দিয়েছে ইউনিসেফ। প্রতিষ্ঠানটি বলছে, এ পরিস্থিতি বাল্যবিবাহ রোধে সাম্প্রতিক অগ্রগতিকে নতুন করে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলতে পারে।

আজ সোমবার আন্তর্জাতিক নারী দিবসে প্রকাশিত ‘কোভিড-১৯: শিশুবিয়ের বিরুদ্ধে অগ্রগতির জন্য হুমকি’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এ সতর্কবার্তা জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
প্রতিবেদনে ইউনিসেফ জানিয়েছে, বিশ্বজুড়ে করোনা প্রাদুর্ভাবের আগেও ১০ কোটি মেয়ে বাল্যবিবাহের ঝুঁকিতে ছিল। করোনার কারণে এখন অতিরিক্ত আরও এক কোটি মেয়ে ঝুঁকির মুখে পড়েছে।

বিশ্বব্যাপী বর্তমানে জীবিত প্রায় ৬৫ কোটি নারীর বিয়ে হয়েছিল তাঁদের শৈশবে, যার প্রায় অর্ধেকই ঘটেছে বাংলাদেশ, ব্রাজিল, ইথিওপিয়া, ভারত ও নাইজেরিয়ায়।

তবে বাল্যবিবাহ রোধে সাম্প্রতিক বছরগুলোয় বেশ কিছু অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে। ইউনিসেফ বলছে, বিগত ১০ বছরে বিশ্বব্যাপী বাল্যবিবাহের শিকার তরুণীদের অনুপাত ১৫ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে, যা প্রায় আড়াই কোটি বাল্যবিবাহ প্রতিরোধের সমতুল্য। আগে প্রতি চারজন মেয়েশিশুর মধ্যে একজন বাল্যবিবাহের শিকার হতো। এখন এ হার পাঁচজনের মধ্যে একজনে নেমেছে। এ অর্জনকে ঝুঁকির মুখে ফেলেছে করোনা মহামারি।

করোনা মহামারির কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকা মেয়েদের বাল্যবিবাহের ঝুঁকি বাড়ানোর অন্যতম কারণ বলে মনে করছে ইউনিসেফ। এ ছাড়া অর্থনৈতিক চাপ, সেবা বিঘ্নিত হওয়া, গর্ভাবস্থা এবং মা–বাবার মৃত্যুজনিত ঘটনা সবচেয়ে ঝুঁকির মুখে থাকা মেয়েদের বাল্যবিবাহের দিকে ঠেলে দিচ্ছে বলে প্রতিবেদেন জানানো হয়েছে।

সাম্প্রতিক বছরগুলোয় উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সত্ত্বেও বাংলাদেশে বাল্যবিবাহের ব্যাপকতা বিশ্বে চতুর্থ সর্বোচ্চ। লাখ লাখ মেয়েশিশু যে কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলা করছে, তা আরও জটিল করে তুলেছে কোভিড-১৯ মহামারি। স্কুল বন্ধ থাকা, বন্ধুবান্ধব ও সহায়তা কার্যক্রম থেকে বিচ্ছিন্ন থাকা এবং ক্রমবর্ধমান দারিদ্র্য মেয়েদের বাল্যবিবাহের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিয়েছে।
বাংলাদেশে ইউনিসেফের প্রতিনিধি টোমো হোজুমি

করোনা মহামারি মেয়েদের জীবন গভীরভাবে প্রভাবিত করেছে। মহামারি-সম্পর্কিত ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা এবং শারীরিক দূরত্বের কারণে মেয়েদের জন্য স্বাস্থ্যসেবা, সামাজিক পরিষেবা ও কমিউনিটি সহায়তা পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। এসব সেবা ও সহায়তা তাদের বাল্যবিবাহ, অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভাবস্থা এবং লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা থেকে সুরক্ষিত রাখতে ভূমিকা রাখে।

দীর্ঘ সময় ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় অনেক মেয়ের পড়াশোনা বন্ধ হয়ে গেছে। পুনরায় পড়াশোনা শুরু করতে না পারার শঙ্কায় ভুগছে অনেকে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে কাজ হারানোর চাপ ও বর্ধিত অর্থনৈতিক নিরাপত্তাহীনতা। এ কারণে অনেক পরিবার অল্প বয়সে মেয়েদের বিয়ে দিয়ে দিতে চাইছে।

বিশ্বব্যাপী বর্তমানে জীবিত প্রায় ৬৫ কোটি নারীর বিয়ে হয়েছিল তাঁদের শৈশবে, যার প্রায় অর্ধেকই ঘটেছে বাংলাদেশ, ব্রাজিল, ইথিওপিয়া, ভারত ও নাইজেরিয়ায়। করোনা মহামারির প্রভাবগুলো কাটিয়ে উঠতে ও টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ২০৩০ সালের মধ্যে বাল্যবিবাহের সমাপ্তি ঘটাতে এসব দেশকে আরও কার্যকর কৌশল বাস্তবায়ন করতে হবে।

এ বিষয়ে টোমো হোজুমি জানান, মহামারির এক বছরে বাংলাদেশ বাল্যবিবাহের ক্ষেত্রে কষ্টার্জিত অর্জন হারানোর ঝুঁকির মুখে পড়েছে। এ ঝুঁকি কার্যকর উপায়ে মোকাবিলায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিতে হবে। স্বাস্থ্য ও সামাজিক সুরক্ষা পরিষেবাগুলোর প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে জরুরি পদক্ষেপ নিতে হবে।