বাড়িতে বাংকার গড়েছিলেন সেই সুফিয়ান

আল-কায়েদার জঙ্গি সন্দেহে পশ্চিমবঙ্গে গ্রেপ্তার আবু সুফিয়ানের বাড়ির পাতালঘর বা বাংকার।
ছবি: ভাস্কর মুখার্জি

পেশায় দরজি। চুপচাপ মানুষ। এলাকার বাজারে ছিল তাঁর দোকান। এলাকায় একটু একা একাই থাকতেন। এমন একজন মানুষ যে জঙ্গিবাদের সঙ্গে যুক্ত, তা ভাবতেও পারেননি প্রতিবেশীরা। বলা হচ্ছে আবু সুফিয়ানের কথা। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের পুলিশ গত শনিবার সন্দেহভাজন ছয় আল-কায়েদা জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করে। তাঁদেরই একজন সুফিয়ান।

যখন সুফিয়ানকে পুলিশ গ্রেপ্তার করল, তখনো প্রতিবেশীদের সন্দেহ যায়নি। কিন্তু এরপরই দেখা যায় অন্য চিত্র। গ্রেপ্তারের পর সুবোধ-শান্ত সুফিয়ানের বাড়িতে মিলল বাংকার বা পাতালঘর। আর তাতে অনেকেরই ধারণা পাল্টে যায় সুফিয়ান সম্পর্কে।
রাজ্যের মুর্শিদাবাদ জেলায় গ্রেপ্তার আবু সুফিয়ানের বাড়িতে পুলিশের স্পেশাল টাস্কফোর্সের (এসটিএফ) একটি দল গত রোববার রাতে তল্লাশি করে ঘরের মধ্যে একটি বাংকারের সন্ধান পায়। এসটিএফ খতিয়ে দেখছে, কেন ওই বাংকার গড়েছিলেন আবু সুফিয়ান। এমন এক ছাপোষা মানুষের বাড়িতে বাংকার থাকবেই–বা কেন।
পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলা থেকে গ্রেপ্তার আল-কায়েদা জঙ্গিকে গতকাল সোমবার রাতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে রাজধানী দিল্লিতে। সেখানে গিয়ে তাঁরা হাজির হবেন দিল্লির পাতিয়ালা হাউস কোর্টে। গতকাল রাতে নিরাপত্তার কারণে এই ছয় জঙ্গিকে কলকাতা বিমানবন্দর থেকে আলাদা তিনটি বিমানে পাঠানো হয়। প্রতিটিতে ছিলেন দুজন করে। গ্রেপ্তার ছয় জঙ্গি হলেন নাজমুস সাকিব, আবু সুফিয়ান, মনিরুল মণ্ডল, আতিউর রহমান, আল মামুন কামাল ও লিউ ইয়ান আহমেদ। মুর্শিদাবাদ জেলার ডোমকল ও জলঙ্গি থেকে গ্রেপ্তার করা হয় ছয়জনকে। এ ছাড়া ওই দিন কেরালার এর্নাকুলাম থেকে গ্রেপ্তার করা হয় আল–কায়দার আরও তিন জঙ্গিকে। তাঁদের বাড়িও মুর্শিদাবাদে। কেরালায় গ্রেপ্তার হওয়া সন্দেহভাজন জঙ্গিরা হলেন মুরশিদ হাসান, ইয়াকুব বিশ্বাস ও মোশারেফ হোসেন।

এদিকে ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা এনআইএর হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার পর এনআইএ ওই জঙ্গিদের জেরা করে পেয়েছে নানা তথ্য। এনআইএ সূত্র জানায়, এই জঙ্গিরা মুর্শিদাবাদ জেলার ডোমকল, জলঙ্গি, রানীনগর এলাকায় আল–কায়েদার জাল বিস্তার করছিলেন। তাঁদের সঙ্গে ছিল আল–কায়েদার পাকিস্তানি নেতাদের সঙ্গে যোগসূত্র। এনআইএর গোয়েন্দারা মুরশিদ হাসানের স্মার্টফোন ঘেঁটে জানতে পেরেছে, এই জঙ্গিরা অ্যাপের মাধ্যমে যোগাযোগ রাখতেন পাকিস্তানের আল-কায়েদা জঙ্গিদের সঙ্গে। ভিডিও কল, মেসেজ শেয়ারিং, ফাইল ট্রান্সফারসহ নানা লেনদেন করতেন তাঁরা।
আবু সুফিয়ানের বাড়ির বাংকারে মিলেছে নানা ধরনের বৈদ্যুতিক তার ও যন্ত্রাংশ। সেগুলো বোমা বানানোর কাজে লাগত বলেই পুলিশের ধারণা।
এদিকে এনআইএর ডিআইজি গতকাল কলকাতার রাজ্য সচিবালয় নবান্নে গিয়ে কথা বলেন রাজ্য স্বরাষ্ট্র দপ্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে। কথা বলেন পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তা ব্যক্তিদের সঙ্গেও।