বিক্ষোভের পর দিল্লি সীমান্তে কৃষকদের গণ–অনশন

কৃষকদের উদ্দেশে বক্তব্য দিচ্ছেন নেতারা। ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লির সীমান্তবর্তী গাজিপুরে
ছবি: এএফপি

মহাত্মা গান্ধীর মৃত্যুবার্ষিকীর দিনে ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লি সীমান্তে অবস্থানরত হাজারো কৃষক আজ শনিবার অনশনের মাধ্যমে ‘সদ্‌ভাবনা দিবস’ পালন করলেন। দেশের সবাইকে এই দিনে অনশন করার আহ্বানও জানান কৃষকনেতারা।
তবে প্রবীণ গান্ধীবাদী আন্না হাজারে অবশ্য অনশনের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এলেন। কারণ, হিসেবে তিনি জানালেন, ন্যূনতম সহায়ক মূল্য (এমএসপি) ৫০ শতাংশ বাড়ানো ছাড়াও তাঁর তোলা ১৫টি দাবি সরকার মেনে নিয়েছে।

প্রজাতন্ত্র দিবসের হাঙ্গামার পর সাময়িকভাবে হতাশাগ্রস্ত কৃষক নব উদ্যমে সীমান্তে জড়ো হতে শুরু করেছেন। উত্তর প্রদেশ, হরিয়ানা ও পাঞ্জাব থেকে হাজার হাজার কৃষক দিল্লির তিন সীমান্তে অবস্থানরত কৃষকদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন। তিন রাজ্য থেকে অনেকে আসাও শুরু করেছেন। এই বাড়তি জমায়েতের কারণে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গতকাল রাত ১১টা থেকে আগামীকাল রোববার পর্যন্ত সীমান্তজুড়ে ইন্টারনেট–সেবা বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে। একই সঙ্গে ২৪ নম্বর জাতীয় সড়কে যান চলাচল পুরোপুরি বন্ধ করে দিয়েছে, যাতে আরও কৃষক আসতে না পারেন।

এই সাবধানতার পাশাপাশি দিল্লি পুলিশ জোর কদমে তদন্ত এগিয়ে নিয়ে চলেছে। দিল্লিতে দাঙ্গার সময় পুলিশ দুষ্কৃতকারীদের চিনতে যে ধরনের ‘ফেশিয়াল রেকগনিশন’–এর সাহায্য নিয়েছিল, এবার কৃষক হামলার ক্ষেত্রেও তা নেওয়া শুরু করেছে। প্রায় সব কৃষকনেতার বিরুদ্ধেই দেশদ্রোহিতার অভিযোগ আনা হয়েছে। যদিও তাতে কৃষকদের মনোবলে চিড় ধরানো যায়নি।

এই পরিস্থিতিতে বিরোধীদলীয় নেতারা নতুন করে কৃষক দমন নীতির প্রতিবাদ জানাতে শুরু করেছেন। সংসদে যার প্রতিফলন ঘটেছে। রাষ্ট্রপতির ভাষণ বর্জন করেছেন বিরোধীরা। বাজেট অধিবেশনেও এই নিয়ে বিরোধীরা সরকারকে চাপে ফেলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এর মোকাবিলায় আজ সর্বদলীয় বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন, আইন দেড় বছর স্থগিত রাখার প্রস্তাবে সরকার এখনো রাজি। কৃষকনেতারা একটা ফোন করলেই আলোচনা শুরু করা যেতে পারে।

এই প্রস্তাব কৃষিমন্ত্রী নরেন্দ্র সিং টোমার আগেই কৃষকদের দিয়েছিলেন। কৃষকনেতারা রাজি হননি। তাঁরা আইন বাতিলের দাবিতে এখনো অনড়। সর্বদলীয় বৈঠকে আজ একাধিক বিরোধী নেতা সরকারকে দেশের স্বার্থে ‘ইগো’ ছাড়ার পরামর্শ দেন।

রাজস্থানের কংগ্রেস মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলট আজ দিল্লি হাঙ্গামার বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি জানান। দিল্লিতে তিনি সংবাদমাধ্যমকে বলেন, যাঁরা দুই মাস ধরে শান্তিতে অবস্থান আন্দোলন চালাচ্ছেন, তাঁরা হঠাৎ কেন হিংস্র হবেন? ওই হিংসার পেছনে কারা ছিল, তা বিচার বিভাগীয় তদন্তেই জানা যাবে। দিল্লির শাসক দল আম আদমি পার্টি একই সঙ্গে কৃষকনেতাদের বলেছে, তাঁরা দিল্লি এলে বিজলি–পানিসহ রাজ্য সরকার যাবতীয় নাগরিক সুবিধার ব্যবস্থা করে দেবে। আম আদমি পার্টির অভিযোগ, হাঙ্গামা বিজেপিরই চক্রান্ত।