‘বিচারের নামে উপহাস’

নিহত সৌদি সাংবাদিক জামাল খাসোগি
ছবি: রয়টার্স

সৌদি আরবের সাংবাদিক জামাল খাসোগি হত্যার ঘটনায় নতুন করে যে রায় দেওয়া হয়েছে, তা নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়েছে। খাসোগির বাগ্‌দত্তা হেতিজে চেঙ্গিস এই রায়ের সমালোচনা করেছেন। সমালোচনা করেছে জাতিসংঘ ও তুরস্ক। বিচারের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে তারা। এএফপি ও রয়টার্সের খবর।

খাসোগি হত্যাকাণ্ডের মামলায় সন্দেহভাজন ১১ জনের বিচার শেষ হয় গত বছরের ডিসেম্বরে। এই মামলায় ৫ জনের মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। আর ৩ জনকে মোট ২৪ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু গত সোমবার নতুন যে রায় দেওয়া হয়েছে, তাতে ওই দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের সাজা কমিয়ে ৭ থেকে ২০ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। সৌদি প্রেস এজেন্সির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, খাসোগির পরিবার তাঁদের ক্ষমা করে দিয়েছে, তাই তাঁদের সাজা কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। দণ্ড পাওয়া ৮ জনের মধ্যে ৫ জনকে ২০ বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। আর একজনকে ১০ বছরের কারাদণ্ড এবং ২ জনকে ৭ বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। তবে দণ্ড পাওয়া এই ব্যক্তিদের কারও নাম প্রকাশ করা হয়নি। এর আগে গত ডিসেম্বরে যখন এই মামলার বিচার হয়েছিল, তখনো তা ছিল রুদ্ধদ্বার। তাই ওই সময়ও জানা যায়নি কারা সাজা পেলেন। এবারও সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হলো।

যুক্তরাষ্ট্রের পত্রিকা ওয়াশিংটন পোস্ট-এর কলাম লেখক এবং সৌদি যুবরাজের কঠোর সমালোচক ছিলেন খাসোগি। ২০১৮ সালের ২ অক্টোবর ব্যক্তিগত কিছু নথিপত্র সংগ্রহের জন্য তুরস্কের ইস্তাম্বুলে সৌদি আরবের কনস্যুলেট ভবনে গিয়েছিলেন তিনি। সেখানে তাঁকে হত্যা করা হয়। তুরস্কের কর্মকর্তারা বলেছিলেন, সৌদি আরব থেকে আসা ১৫ সদস্যের একটি স্কোয়াড খাসোগি হত্যায় অংশ নেয়। হত্যার পর তাঁর মরদেহ টুকরা টুকরা করে ফেলা হয়। সেই দেহাবশেষ আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। খাসোগির হত্যাকাণ্ডকে নৃশংস বলে আখ্যা দিয়েছিল রিয়াদ। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ এবং জাতিসংঘের তদন্তে বলা হয়েছিল, এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান সরাসরি জড়িত। যদিও সৌদি আরব এই অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করে আসছে।

এই হত্যাকাণ্ডের প্রায় দুবছর পর মামলার নিষ্পত্তি হলো। এর কারণ, চলতি বছরের নভেম্বরে জি-২০ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে। এই সম্মেলন সামনে রেখে দেশের ভাবমূর্তি উদ্ধারের তৎপরতা শুরু করেছে দেশটির সরকার। এরই অংশ হিসেবে এই রায়। কিন্তু রায়কে ঘিরে নতুন করে সমালোচনা শুরু হয়েছে। এই রায়কে ‘প্রহসন’ বলে উল্লেখ করেছেন হেতিজে। রায়ের পর তিনি টুইট করেন, সাজা কমানো হয়েছে। সৌদি আরব আবার বিচার নিয়ে বিদ্রূপ করল।

রায়ের সমালোচনা করে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনও (ওএইচসিএইচআর) বলেছে, বিচারপ্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতার অভাব ছিল। যুবরাজ সালমানের নাম উল্লেখ না করে তারা বলেছে, অপরাধের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনতে ব্যর্থ হয়েছে সৌদি আরব।

ওএইচসিএইচআরের মুখপাত্র রুপার্ট কলভিল সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, বিচারপ্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ছিল না। যাঁরা এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিলেন, তাঁদের বিচারের আওতায় আনতে হবে ও সাজার ব্যবস্থা করতে হবে।

খাসোগির হত্যাকাণ্ডের তদন্ত করেছিলেন জাতিসংঘের বিশেষ দূত অ্যাগনেস ক্যালামার্ড। তিনিও এই রায়ের সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেছেন, বিচারের নামে আরও একটি উপহাস। টুইট বার্তায় তিনি লিখেছেন, এই বিচারের কোনো ন্যায্যতা নেই, কোনো বৈধতা নেই। এই বিচারপ্রক্রিয়া না ছিল সঠিক, না ছিল নিরপেক্ষতা বা না ছিল স্বচ্ছতা। রায়ের সমালোচনা করেছে তুরস্ক।