বিজেপির জন্য কঠিন পরীক্ষা

আজ তৃতীয় দফার ভোট হাওড়া, হুগলি ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার ৩১টি আসনে।

পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী অরূপ বিশ্বাসের পক্ষে প্রচারে অংশ নেন সমাজবাদী দলের নেতা জয়া বচ্চন। গতকাল কলকাতার কুদঘাটে।
ছবি: এএনআই

পশ্চিমবঙ্গে তৃতীয় দফার ভোট আজ। এটা ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) জন্য কঠিন পরীক্ষা। কারণ হাওড়া, হুগলি ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার যে ৩১টি আসনে ভোট হবে, তাতে ভালো ফল করাটা দলটির জন্য অত্যন্ত জরুরি। এই ভোটকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা চরমে, নানা জায়গা থেকে গতকাল সহিংসতার খবর পাওয়া গেছে।

এসব আসনে বরাবরই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল কংগ্রেসের দাপট। ২০১৯–এর লোকসভা নির্বাচনে এই ৩১ আসনের ২৯টিতে এগিয়ে ছিল তৃণমূল। ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনেও তৃণমূল পেয়েছিল ২৯টি আসন। এ অবস্থায় এ দফার ভোট বিজেপির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে। এসব আসনে জিততে গেলে বিজেপির দক্ষিণপন্থী ও বামপন্থী দুই পক্ষেরই সাহায্য লাগবে।

দক্ষিণ ২৪ পরগনা এবারের নির্বাচনে সম্ভবত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জেলা। ২০১৯–এ লোকসভা নির্বাচনে এখানে তৃণমূল এগিয়ে ছিল। এই জেলায় তফসিলি জাতি ও উপজাতির ভোট তখন তৃণমূলের বাক্সে পড়েছিল, যা তারা অন্য অনেক জেলাতেই পায়নি। এখানে তফসিলি জাতি ও উপজাতির মিলিয়ে ২৫ শতাংশ ভোট রয়েছে। এই ভোটব্যাংকে বিজেপির দিকে টানতে গত কয়েক বছরে নানা কার্যক্রম চালিয়েছে হিন্দুত্ববাদী সংগঠন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (আরএসএস)।

দক্ষিণ ২৪ পরগনায় মুসলমান ভোট রয়েছে ৩৫ শতাংশ। আব্বাস সিদ্দিকীর দল ইন্ডিয়ান সেক্যুলার ফ্রন্ট, কংগ্রেস ও সিপিএম নিয়ে গঠিত সংযুক্ত মোর্চা যদি এখানে মুসলমান ভোট কিছুটা কাটতে পারে, তবে তাতে সমস্যা বাড়বে তৃণমূল কংগ্রেসের।

তবে তৃণমূলের সুবিধা হলো, এখানে অধিকাংশ আসনে তারা ৫০ শতাংশের বেশি ভোট পেয়েছিল ২০১৯–এর লোকসভা নির্বাচনে। বিজেপির থেকে অধিকাংশ আসনেই তৃণমূল ১৫ থেকে ২০ শতাংশ বেশি ভোটে এগিয়েছিল। এই ফারাক বিজেপির পক্ষে মেটানো খুব সহজসাধ্য নয়।

প্রচারে জয়া বচ্চন

তবে এই ধাপের ভোটের উত্তেজনাকে ছাপিয়ে গতকাল সোমবার রাজ্যে যে বিষয়টি প্রধান খবর হয়ে ওঠে তা হলো, মুম্বাই ও কলকাতার একসময়কার জনপ্রিয় অভিনেত্রী জয়া বচ্চনের তৃণমূলের হয়ে প্রচারে নামা।

অভিনেতা মিঠুন চক্রবর্তীকে বিজেপি প্রচারে নামানোর সপ্তাহ দেড়েকের মধ্যেই তৃণমূল কংগ্রেসের হয়ে গতকাল কলকাতায় প্রচারে নামলেন জয়া বচ্চন। জয়া সুপারস্টার অমিতাভ বচ্চনের স্ত্রী, অভিনেতা অভিষেক বচ্চনের মা এবং বিশিষ্ট সাংবাদিক ও লেখক তরুণ ভাদুড়ির মেয়ে। তিনি গতকাল সাংবাদিকদের বললেন, তিনি প্রবাসী বাঙালি।

উত্তর প্রদেশের সমাজবাদী দলের সাংসদ জয়া বচ্চন বলেন, ‘আমি মমতার জন্য বাংলায় এসেছি। একজন মহিলা একা এভাবে লড়াই চালাচ্ছে। সমস্ত অত্যাচারের বিরুদ্ধে গিয়ে তাঁকে সমর্থন দিতেই আমি এসেছি। মমতার শরীর, পা ভেঙে গিয়েছে কিন্তু হৃদয় ভাঙেনি। লড়াই করছে।’

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতা ‘বাংলার মাটি, বাংলার জল’ থেকে দুই লাইন আবৃত্তি করে জয়া সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘বাঙালিকে ভয় দেখিয়ে, চাপ দিয়ে কোনো লাভ হয়নি। ভবিষ্যতেও হবে না। আমি শুধু বলব, আমার ধর্মকে কেউ যেন অপহরণ না করে, আমার গণতান্ত্রিক অধিকারকে কেউ যেন হত্যা না করে। দেশে যাবতীয় আক্রমণের বিরুদ্ধে মমতা লড়াই করছে। আজ ওর পাশে দাঁড়ানোর প্রয়োজন।’

জয়া বচ্চন আগামী তিন দিন পশ্চিমবঙ্গে প্রচার চালাবেন। মূলত প্রচার করবেন টালিগঞ্জের স্টুডিওপাড়ায়, যেখানে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী হলেন মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী বিজেপির সাংসদ ও সংগীতশিল্পী বাবুল সুপ্রিয়।

বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেছেন, ‘জয়া ভাদুড়ির সঙ্গে বাংলার কোনো সম্পর্কই নেই। বাংলার এই প্রজন্ম জয়াকে চেনে না। ওদিকে মিঠুনদা বাংলার সঙ্গে সব সময় জড়িয়ে রয়েছেন, এখানকার ছবিতে অভিনয় করছেন, এখানে রিয়েলিটি শো করেন।’

‘সারদার গলার লকেট’

গতকাল প্রচারে নেমে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হুগলিতে বিজেপির প্রার্থী লকেট চট্টোপাধ্যায় সম্পর্কে মন্তব্য করেন, ‘লকেট আসলে সারদার (অর্থ কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িত প্রতিষ্ঠান) গলার লকেট।’ তিনি বলেন, বিজেপির মিটিংয়ে ৫ কোটি টাকা খরচ হয়। কিন্তু বাবুল সুপ্রিয় ও লকেটের বিরুদ্ধে কোনো মামলা হয় না। লকেটেরও পাল্টা মন্তব্য, পরাজয় টের পেয়ে মমতা উল্টাপাল্টা বলছেন।