বিশ্বের উষ্ণতম তিন বছরের একটি হচ্ছে ২০২০

খরতাপে মুখে পানি ঢেলে প্রশান্তির চেষ্টা।
ফাইল ছবি প্রথম আলো

বিশ্বের ইতিহাসে রেকর্ড তিনটি উষ্ণতম বছরের একটি হতে চলেছে ২০২০ সাল। বুধবার জাতিসংঘের জলবায়ুবিষয়ক একটি বৈশ্বিক প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে। ওই প্রতিবেদন প্রকাশের পর জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস সতর্ক করে বলেছেন, বিশ্ব ‘জলবায়ু বিপর্যয়ের’ দ্বারপ্রান্তে রয়েছে।

বার্তা সংস্থা এএফপির খবরে বলা হয়েছে, জাতিসংঘের বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার (ডব্লিউএমও) ২০২০ সালের জলবায়ুবিষয়ক প্রাথমিক প্রতিবেদনমতে, ১৮৫০ সাল থেকে আবহাওয়ার আধুনিক রেকর্ড সংগ্রহ শুরুর পর ২০১৫ থেকে ২০২০ সাল—এই ছয় বছর উষ্ণতম সময়কাল হতে চলেছে। গত পাঁচ বা গত ১০ বছরের গড় তাপমাত্রাও সবচেয়ে বেশি বলে রেকর্ড করা হয়েছে। এই প্রতিবেদনটি জানুয়ারি থেকে অক্টোবরের তাপমাত্রার তথ্যের ভিত্তিতে প্রস্তুত করা হয়েছে। চূড়ান্ত প্রতিবেদনটি আগামী বছরের মার্চে প্রকাশ করা হবে।

এ প্রতিবদনের তথ্যে শঙ্কা প্রকাশ করে জাতিসংঘ মহাসচিব গুতেরেস বলেছেন, ‘আমরা জলবায়ু বিপর্যয়ের কতটা কাছে পৌঁছে গেছি, এই প্রতিবেদন সেটাই প্রকাশ করেছে।’

আমরা জলবায়ু বিপর্যয়ের কতটা কাছে পৌঁছে গেছি, এই প্রতিবেদন সেটাই প্রকাশ করেছে
আন্তোনিও গুতেরেস, জাতিসংঘ মহাসচিব


যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটিতে জলবায়ু পরিস্থিতি নিয়ে দেওয়া বক্তৃতায় আন্তোনিও গুতেরেস আরও বলেন, ‘ভয়াবহ দাবানল, বন্যা–সাইক্লোন ও হারিকেন (ঘূর্ণিঝড়) বেড়েই চলেছে। মানুষ প্রকৃতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালাচ্ছে। এটা আত্মঘাতী। প্রকৃতির সঙ্গে যেমন আচরণ করা হবে, প্রকৃতিও ঠিক সেভাবেই ফিরিয়ে দেবে। এটা ইতিমধ্যে ভয়ংকরভাবে করে যাচ্ছে।’

২০১৫ সালে প্যারিস জলবায়ু চুক্তি হয়। বৈশ্বিক উষ্ণতা ভয়াবহ পর্যায়ে পৌঁছানো ঠেকাতে ওই চুক্তিতে সই করে ১৯৬ দেশ। চুক্তির শর্ত পূরণে দেশগুলো জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমাতে শুরু করে, যাতে কার্বন নিঃসরণ কমে আসে। প্যারিস চুক্তির শর্তমতে, প্রাকশিল্প (১৮৫০–১৯০০) স্তরের চেয়ে বিশ্বের তাপমাত্রা দুই ডিগ্রির বেশ খানিকটা নিচে রাখার নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া তাপমাত্রা বৃদ্ধি দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে রাখার চেষ্টার কথা বলা হয়েছে।

ডব্লিউএমওর মহাসচিব পেতেরি তালাস বলেছেন, ‘২০২০ সাল আমাদের জলবায়ুর জন্য আরেকটি খারাপ বছর।’

অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নের মোনাশ ইউনিভার্সিটির নেভিল নিকোলস বলেছেন, ২০২০ সালের তাপমাত্রা বৃদ্ধির প্রতিবেদনকে বৈশ্বিক উষ্ণতা দ্রুত বেড়ে যাওয়ার প্রমাণ বহন করে। তিনি বলেন, ‘আমরা এক শতাব্দী ধরে গ্রিনহাউস গ্যাসের মাধ্যমে বৈশ্বিক উষ্ণতা ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়িয়েছি। আগামী মাত্র ৩০ বছরে আরও ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়ানোর পথে আছি।’


জাতিসংঘের বার্ষিক উৎপাদন গ্যাপ মূল্যায়ন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিপর্যয়কর বৈশ্বিক উষ্ণায়ন রোধ করতে এই বছরে তেল, গ্যাস ও কয়লা উৎপাদন ৬ শতাংশ অবশ্যই কমাতে হবে।

গ্রিনহাউস গ্যাস জলবায়ু পরিবর্তনের প্রধান চালক। গত বছর এই গ্যাস নির্গমনে রেকর্ড সৃষ্টি হয়। করোনা মহামারির কারণে কলকারখানা বন্ধ থাকলেও এ বছরও এই গ্যাস নির্গমনের ধারা ঊর্ধ্বগামী রয়েছে।

ডব্লিউএমওর মহাসচিব তালাস বলেছেন, এ বছর স্থল, সমুদ্র ও বিশেষত আর্কটিকের (পৃথিবীর উত্তরমেরু) তাপমাত্রা নতুন করে চরমভাবে বেড়ে গেছে। ফলে অস্ট্রেলিয়া, সাইবেরিয়া, যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিম উপকূল ও দক্ষিণ আমেরিকার বিস্তৃত অঞ্চলে দাবানল গ্রাস করে। আফ্রিকা ও দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন অংশে বন্যা দেখা দেয়। বন্যা বিরাটসংখ্যক মানুষকে বাস্তুচ্যুত করে এবং লাখ লাখ মানুষকে খাদ্যসংকটের মধ্যে ফেলে দেয়।

এ বছর স্থল, সমুদ্র ও বিশেষত আর্কটিকের (পৃথিবীর উত্তরমেরু) তাপমাত্রা নতুন করে চরমভাবে বেড়ে গেছে। ফলে অস্ট্রেলিয়া, সাইবেরিয়া, যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিম উপকূল ও দক্ষিণ আমেরিকার বিস্তৃত অঞ্চলে দাবানল গ্রাস করে। আফ্রিকা ও দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন অংশে বন্যা দেখা দেয়। বন্যা বিরাটসংখ্যক মানুষকে বাস্তুচ্যুত করে এবং লাখ লাখ মানুষকে খাদ্যসংকটের মধ্যে ফেলে দেয়।
পেতেরি তালাস, মহাসচিব, জাতিসংঘের বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা (ডব্লিউএমও)


এ বছর শীতের অঞ্চল উত্তর সাইবেরিয়ার ভারখোয়ানস্কও উষ্ণ ছিল। গত ২০ জুনে সেখানে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। ডব্লিউএমও বলেছে, সমুদ্র অঞ্চলের ৮০ শতাংশ এ বছর অন্তত একবার দাবদাহের শিকার হয়েছে। এ ছাড়া আটলান্টিক সমুদ্রে ১৩টি হারিকেনসহ ৩০টি ঘূর্ণিঝড় ইতিমধ্যে আঘাত হেনেছে।