যখন তার জন্মের কথা ছিল, ‘মায়ের’ বয়স তখন এক বছর

প্রতীকী ছবি
রয়টার্স

মলি গিবসনের জন্ম হওয়ার কথা ছিল ১৯৯২ সালে। সে সময় তার ‘মা’ টিনা গিবসনের বয়স ছিল এক বছর। সেই মলির জন্ম হয়েছে ২৭ বছর পরে গত অক্টোবরে। তার ‘মায়ের’ বয়স এখন ২৯ বছর। এমনই ঘটনা ঘটেছে যুক্তরাষ্ট্রে।

যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, যে ভ্রূণ থেকে মলির জন্ম, সেটি ১৯৯২ সালে হিমায়িত করে সংরক্ষণ করা হয়। এরপর গত ফেব্রুয়ারিতে তা স্থাপন করা হয় টিনার গর্ভে। সেই ভ্রূণ থেকে অক্টোবরে জন্ম হয় মলির। সে হিসাবে এখন পর্যন্ত ইতিহাসের দীর্ঘতম সময় হিমায়িত করে রাখা ভ্রূণ থেকে জন্ম নেওয়া শিশু হলো মলি। তবে বিশ্বে প্রথম ভ্রূণ হিমায়িত করে তার থেকে শিশু জন্ম নেওয়ার ঘটনা ঘটে ১৯৮৪ সালে অস্ট্রেলিয়ায়।

যুক্তরাষ্ট্রের টেনেসি অঙ্গরাজ্যের নক্সভিল শহরের একটি অলাভজনক সংগঠন ন্যাশনাল এমব্রায়ো ডোনেশন সেন্টার (এনইডিসি)। সন্তান দত্তক নেওয়ার মতো করে এ সংগঠন থেকে ভ্রূণ দত্তক নেওয়া যায়।

২৯ বছর বয়সী টিনা পেশায় স্কুলশিক্ষক। আর তাঁর স্বামী ৩৬ বছর বয়সী বেন গিবসন সাইবার নিরাপত্তা বিশ্লেষক। এই দম্পতির সন্তান হচ্ছিল না। চিকিৎসা নিয়েও কাজ হয়নি। হতাশাজনক এমন মুহূর্তে টিনার মা–বাবা স্থানীয় একটি সংবাদমাধ্যমে ভ্রূণ দত্তক নেওয়ার বিষয়ে জানতে পারেন। তাঁদেরই পরামর্শে টিনা ও বেন এনইডিসির শরণাপন্ন হন। তাদের সংগ্রহে থাকা একটি ভ্রূণ দত্তক নিয়ে ২০১৭ সালে জন্ম দেন ফুটফুটে এক শিশুর। তাঁরা শিশুটির নাম রাখেন এমা গিবসন। এমা যে ভ্রূণ থেকে জন্ম নেয়, সেটি হিমায়িত করে ২৪ বছর সংরক্ষণ করেছে এনইডিসি।

আমি যেন বাক্‌রুদ্ধ হয়ে আছি। কিছু বলার ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না। আমরা যেন চাঁদ হাতে পেয়েছি।
টিনা গিবসন, মলি গিবসন ও এমা গিবসনের মা

সাধারণত ভাইট্রো ফার্টিলাইজেশন প্রক্রিয়ার সময় কোনো দম্পতি ভ্রূণ দান করতে চাইলেই কেবল এনইডিসি তা সংগ্রহ করে সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয়। তারপর আগ্রহী দম্পতিরা দত্তক নেয় সেই ভ্রূণ।

এমার জন্মের দুই বছর পর এনইডিসির দরজায় আবারও কড়া নাড়েন টিনা ও বেন দম্পতি। এবার তাঁরা দত্তক নেন আরেকটি ভ্রূণ। গত ফেব্রুয়ারিতে সেটি টিনার গর্ভে স্থাপন করা হয়। সে ভ্রূণ থেকে অক্টোবরে জন্ম নিয়ে পৃথিবীর আলো দেখে মলি। মজার বিষয় হলো, এমা আর মলি সত্যিকার অর্থেই দুই বোন। একই নারীর কাছ থেকে তাদের ভ্রূণ সংগ্রহ করা হয়েছিল। আবার তারা জন্মেছেও একই মায়ের গর্ভে।

মলির জন্মের পর তার মা টিনা বলেন, ‘আমি যেন বাক্‌রুদ্ধ হয়ে আছি। কিছু বলার ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না। আমরা যেন চাঁদ হাতে পেয়েছি।’ এমার জন্মের সময়ের অনুভূতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, জীবনের সেরা ক্লান্তিকর আর আনন্দঘন মুহূর্ত ছিল সেটা।

মজার বিষয় হলো, এমা আর মলি সত্যিকার অর্থেই দুই বোন। একই নারীর কাছ থেকে তাদের ভ্রূণ সংগ্রহ করা হয়েছিল। আবার তারা জন্মেছেও একই মায়ের গর্ভে।

এনইডিসির তথ্যমতে, যুক্তরাষ্ট্রে বর্তমানে ১০ লাখের মতো হিমায়িত ভ্রুণ সংরক্ষিত রয়েছে। সংগঠনটির বিপণন ও উন্নয়নবিষয়ক পরিচালক মার্ক মেলিঙ্গার বলেন, সন্তান না হওয়ার সমস্যা অনেক পরিবেরই। তাঁদের অনেকেই ভ্রুণ দত্তক নিতে চান। এ পর্যন্ত তাঁর প্রতিষ্ঠান এক হাজারের বেশি ভ্রূণ দত্তক দিয়েছে। বর্তমানে প্রতিবছর ২০০টির মতো ভ্রূণ দত্তক নেওয়া হচ্ছে তাঁদের কাছ থেকে।

মার্ক মেলিঙ্গার বলেন, আগ্রহী দম্পতিদের সামনে ২০০ থেকে ৩০০ ভ্রুণ দাতা সম্পর্কে তথ্য হাজির করেন তাঁরা। এসব তথ্যের মধ্যে ভ্রুণ দাতার পুরো পারিবারিক ইতিহাসও থাকে।