মক্কায় হাজিদের পশু কোরবানির প্রস্তুতি

ফাইল ছবি: রয়টার্স

এবার ১০ লাখ মানুষ পবিত্র হজ পালন করবেন। তাই ধরে নেওয়া হচ্ছে, মক্কায় এবার শুধু হাজিরাই প্রায় ১০ লাখ পশু কোরবানি দেবেন। বাংলাদেশ থেকে ৬০ হাজার মানুষ হজ পালন করছেন। তাঁরা হজের পাশাপাশি পশু কোরবানির প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

বাংলাদেশি হাজিরা তিনটি বিকল্প উপায়ে কোরবানির পশু কিনতে পারেন। এক. নিজে পশুর হাটে গিয়ে, দুই. প্রবাসীর মাধ্যমে, তিন. আইডিবির কুপন কিনে।

হাজিদের একটি অংশ নিজে মুস্তাহালাকায় (পশুর হাট ও জবাই করার স্থান) গিয়ে কোরবানি দেন। একটি অংশ ইসলামি উন্নয়ন ব্যাংকে (আইডিবি) ৮০৯ রিয়াল জমা দিয়ে তাদের মাধ্যমে কোরবানি দেন। এতে সময় বাঁচে, এ প্রক্রিয়া নিরাপদ; প্রতারিত হওয়ার আশঙ্কাও নেই।

বাংলাদেশি হাজিদের একটি অংশ প্রবাসীদের মাধ্যমে, বিশেষ করে নিজের এলাকার প্রবাসী কাউকে পেলে তাঁদের মাধ্যমে কোরবানি দেন। এই প্রবাসীরা মূলত হজ উপলক্ষে পশু ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত থাকেন।

অন্যকে দিয়ে কোরবানি দেওয়ার ক্ষেত্রে কিছু প্রতারণার ঘটনা ঘটে থাকে। হজে কোরবানির পশুর মধ্যে ছাগল, দুম্বা, উট অন্যতম। বাংলাদেশিরা খুব কমই উট কোরবানি দিয়ে থাকেন।

পশু ব্যবসায় জড়িত প্রবাসীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ৭ জিলহজের পর পশু কেনা শুরু হয়। আইডিবির তত্ত্বাবধানে সবচেয়ে বেশি কোরবানি হয় মক্কায়। আইডিবির মাধ্যমে কোরবানি কুপন মূল্য ৮০৯ রিয়াল। পশুর দাম, কসাইখানার খরচ, হিমাগারে মাংস সংরক্ষণ ও পৃথিবীর বিভিন্ন মুসলিম দেশের গরিব মানুষের মধ্যে এই মাংস বিতরণের খরচ বাবদ এই অর্থ নেওয়া হয়। প্রতিবছর বাংলাদেশেও কোরবানির ‘দুম্বার মাংস’ যায়। এই মাংস দেশের দরিদ্র্য জনগোষ্ঠীর মধ্যে বিলি করা হয়।

আবার অনেকে যেসব এজেন্সির তত্ত্বাবধানে হজে আসেন, তাদের মাধ্যমে কোরবানি দিয়ে থাকেন। এ ক্ষেত্রে এজেন্সিগুলো তাদের ভাড়া বাড়িতে থাকা হাজিদের খাবারের সঙ্গে এই মাংস পরিবেশন করতে পারে।

বাংলাদেশি হাজিদের একটি অংশ প্রবাসী বাংলাদেশিদের মাধ্যমে কোরবানি দিয়ে থাকেন। অভিযোগ রয়েছে, হাজিদের একটি অংশ, বিশেষ করে বয়স্ক হাজিরা প্রবাসীদের মাধ্যমে কোরবানি দিতে গিয়ে প্রতারণার শিকার হন। কোরবানিতে সহায়তার নামে তাঁরা বয়স্ক হাজিদের কাছ থেকে অর্থ নিয়ে কোরবানি দেন না। কেউ কেউ বেশ কয়েকজন হাজির কাছ থেকে অর্থ নিলেও দু-তিনটি পশু কোরবানি দিয়ে দায়িত্ব শেষ করেন। তবে এ ধরনের প্রতারণার সংখ্যা কত, তার কোনো সঠিক হিসাব কারও কাছে নেই।

মক্কায় পশু ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত কয়েক বাংলাদেশি বলেন, মক্কায় প্রায় প্রতিটি বাড়িতে শতাধিক হাজি থাকেন। কিছু বাংলাদেশি নিজ জেলা থেকে আসা বয়স্ক হাজিদের খুঁজে বের করে তাঁদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়ান। একপর্যায়ে তাঁকে দায়িত্ব দিলে কম খরচে (৪৫০ বা ৫০০ রিয়াল) কোরবানি করে দেওয়ার প্রস্তাব দেন এবং মিনা থেকে ফিরলে সেই মাংস খাওয়ানোরও প্রতিশ্রুতি দেন। ব্যাংক বা এজেন্সির মাধ্যমে কোরবানি দিলে মাংস পাওয়া যায় না। এতে বয়স্ক হাজিরা নিজ এলাকার প্রবাসীদের বিশ্বাস করে কোরবানির দায়িত্ব দেন। কিন্তু প্রতারিত হওয়ার তথ্য তাঁদের অজানাই থেকে যায়।

মক্কায় পশু ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ইসমাইল বলেন, হাজিরা মক্কা, আরাফাতের ময়দান, মিনাসহ বিভিন্ন স্থানে হজ-সংশ্লিষ্ট কাজে ব্যস্ত থাকেন। তাঁরা কোরবানির খবর নিতে পারেন না। তাঁদের কাছ থেকে অর্থ নেওয়া ব্যক্তি বা ব্যক্তিরা দু-তিনটি পশু কোরবানির দৃশ্য মুঠোফোনে ধারণ করে তাঁদের দেখান, যাতে তাঁরা কোনো সন্দেহ না করেন। হাজিদের কেউ কেউ কোরবানির জায়গায় হাজির হলে তাঁদের সামনে দু-একটি পশু জবাই করা হয়।

কোরবানির পশুর জন্য আইডিবির কুপন ব্যাংকের বুথ ও পোস্ট অফিসে পাওয়া যায়। এ ছাড়া মসজিদুল হারাম ও মসজিদে নববির পাশে ছোট ছোট টংঘরে আইডিবির বুথ রয়েছে, যেখানে অর্থ জমা দেওয়ার পর আইডিবি কুপন দেয়। সেই কুপন দেখিয়ে হাজিরা তাঁদের নামে দেওয়া কোরবানির মাংস চাইলে তাঁদের দেখানো হয়। মক্কায় খাইতে চাইলে ওই কুপন দেখিয়ে ব্যাংকের হিমাগার থেকে কিছু মাংস আনাও যায়।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১৯৮৩ সাল থেকে আইডিবির এই প্রকল্প চলছে। ৪০ হাজারের বেশি জনবল এতে কর্মরত।