মহাকাশে ভাসবে জাপানি কাঠের কৃত্রিম উপগ্রহ

কাঠের কৃত্রিম উপগ্রহের মডেল
ছবি: সুমিটোমো ফরেস্ট্রির সৌজন্যে

মহাকাশে দিনে দিনে আবর্জনা বাড়ছে। এই আবর্জনা বাসাবাড়ির বর্জ্য নয়। মেয়াদোত্তীর্ণ কৃত্রিম উপগ্রহ বা স্যাটেলাইটের যন্ত্রাংশসহ বিভিন্ন জিনিস। এই সমস্যা সমাধানে অভিনব এক কৌশল নিয়েছেন জাপানের বিজ্ঞানীরা। তাঁরা কাঠের কৃত্রিম উপগ্রহ উদ্ভাবনের চেষ্টা করছেন। এই চেষ্টায় তাঁরা সফল হলে তা হবে বিশ্বের প্রথম কাঠের কৃত্রিম উপগ্রহ।

জাপানের কিয়োটো বিশ্ববিদ্যালয় ও নির্মাণ প্রতিষ্ঠান সুমিটোমো ফরেস্ট্রির একদল গবেষক কৃত্রিম উপগ্রহটি উদ্ভাবনের চেষ্টা করছেন বলে এক খবরে জানিয়েছে যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যম বিবিসি। ২০২৩ সালের মধ্যে উপগ্রহটি তৈরির লক্ষ্য ওই গবেষকদের।

সুমিটোমো গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান সুমিটোমো ফরেস্ট্রি গড়ে উঠেছে ৪০০ বছর আগে। প্রতিষ্ঠানটির কর্তৃপক্ষ বলেছে, তারা এরই মধ্যে গাছের বৃদ্ধি ও মহাকাশে কাঠের উপকরণ ব্যবহার বিষয়ে গবেষণা শুরু করে দিয়েছে। কিয়োটো বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে তারা যৌথভাবে পৃথিবীতে বিভিন্ন প্রতিকূল পরিবেশে বিভিন্ন ধরনের কাঠের নমুনা নিয়ে গবেষণা করবে। তারা আরও বলেছে, তারা এমন কাঠের উপকরণ তৈরির চেষ্টা করছে, যা তাপমাত্রার পরিবর্তন মোকাবিলা ও সূর্যালোক প্রতিরোধে অত্যন্ত কার্যকর হয়।

গবেষকেরা বলছেন, যত দিন যাচ্ছে, মহাকাশে উৎক্ষেপণ করা কৃত্রিম উপগ্রহের সংখ্যা ততই বাড়ছে। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের তথ্যমতে, বর্তমানে পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করছে ছয় হাজারের মতো কৃত্রিম উপগ্রহ। এর মধ্যে ৬০ শতাংশেরই মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে গেছে। অর্থাৎ এগুলো এখন মহাকাশের আবর্জনায় পরিণত হয়েছে। এ ছাড়া পৃথিবী থেকে উৎক্ষেপণ করা মহাকাশযানের যন্ত্রাংশসহ নানা যন্ত্রাংশও মহাকাশে আবর্জনা বাড়াচ্ছে। গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইউরোকনসাল্ট জানায়, চলতি দশকে প্রতিবছর গড়ে ৯৯০টি কৃত্রিম উপগ্রহ উৎক্ষেপণ করা হবে। অর্থাৎ ২০২৮ সাল নাগাদ পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করবে ১৫ হাজারের মতো কৃত্রিম উপগ্রহ।

ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের তথ্যমতে, বর্তমানে পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করছে ছয় হাজারের মতো কৃত্রিম উপগ্রহ। এর মধ্যে ৬০ শতাংশেরই মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে গেছে। গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইউরোকনসাল্ট জানায়, চলতি দশকে প্রতিবছর গড়ে ৯৯০টি কৃত্রিম উপগ্রহ উৎক্ষেপণ করা হবে।

মহাকাশের বর্জ্যগুলো আকারে ছোট হলেও এগুলো প্রচণ্ড গতিতে ছুটতে পারে। বিজ্ঞানীরা হিসাব করে দেখেছেন, এসব কণার গতি ঘণ্টায় ২২ হাজার ৩০০ মাইলের বেশি হতে পারে। ফলে এগুলো অনেক বড় ক্ষতি করার সক্ষমতা রাখে। ২০০৬ সালে মহাকাশের এমনই এক ছোট বর্জ্য আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে আঘাত করেছিল। এতে মহাকাশ স্টেশনে অত্যন্ত দৃঢ়ভাবে সংযুক্ত জানালা থেকে একটি চিপ খসে পড়েছিল।

এ ক্ষেত্রে কাঠের কৃত্রিম উপগ্রহ একটি সমাধান হতে পারে। কারণ, বায়ুমণ্ডলের সঙ্গে ঘর্ষণে কাঠ পুড়ে যাবে, কোনো রকম ক্ষতিকর উপাদান ছড়িয়ে পড়বে না। এ ছাড়া এসব কৃত্রিম উপগ্রহ পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনার সময় যন্ত্রাংশের ‘বৃষ্টি’ও হবে না।

কিয়োটো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও মহাকাশচারী তাকাও দই বিবিসিকে বলেন, ‘যেসব কৃত্রিম উপগ্রহ পৃথিবীতে আবার ফিরিয়ে আনা হয়, সেগুলো বায়ুমণ্ডলের সঙ্গে ঘর্ষণে উত্তপ্ত হয়ে পোড়ার সময় অ্যালুমিনার খুব সূক্ষ্ম কণা ছড়িয়ে দেয়। এসব কণা বায়ুমণ্ডলের ওপরের স্তরে অনেক বছর ধরে ভেসে থাকতে পারে। বিষয়টি নিয়ে আমরা খুবই উদ্বিগ্ন। কারণ, এসব কণা একটা পর্যায়ে পৃথিবীর পরিবেশের ওপরই বিরূপ প্রভাব ফেলবে।’

তাকাও দই ২০০৮ সালের মার্চে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে গিয়েছিলেন। ওই সময় তিনি মহাকাশে একটি বুমেরাং ছুড়েছিলেন। ওই বুমেরাংটি এমনভাবে তৈরি করা হয়েছিল, যেন তা খুব কম মাধ্যাকর্ষণ বলের মধ্যেও কাজ করতে পারে।