মহামারির মূল কারণ প্রকৃতির বিনাশ

  • আন্তর্জাতিক গবেষকদের একটি টাস্কফোর্স মহামারি মোকাবিলায় উৎস চিহ্নিত করতে কাজ করছে।

  • মহামারি ব্যবস্থাপনার চেয়ে শুরুতেই প্রতিরোধের ব্যয় খুব সামান্য।

গবেষকেরা বলছেন, বনাঞ্চল বিনষ্ট করা ও বন্য প্রাণী শিকারের ফলে প্রাণী ও তাদের বহন করা জীবাণু ক্রমাগতভাবে মানুষ ও গবাদিপশুর সংস্পর্শে চলে আসছে।
রয়টার্স ফাইল ছবি।

মহামারি সৃষ্টির মূল কারণ প্রকৃতি ধ্বংসের বিষয়টিকেই উপেক্ষা করা হচ্ছে বলে বিজ্ঞানীরা সতর্ক করেছেন। তাঁরা বলছেন, বিশ্বনেতারা ভবিষ্যৎ মহামারি রোধে সাশ্রয়ী ও কার্যকরী কৌশলকে অবহেলা করে চলেছেন। বিশ্বনেতাদের পদক্ষেপের কোথাও প্রকৃতি রক্ষার বিষয়টিকে ঠিকভাবে রাখা হচ্ছে না।

দ্য গার্ডিয়ান-এর এক বিশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়, গবেষকেরা বলছেন, বনাঞ্চল বিনষ্ট করা ও বন্য প্রাণী শিকারের ফলে প্রাণী ও তাদের বহন করা জীবাণু ক্রমাগতভাবে মানুষ ও গবাদিপশুর সংস্পর্শে চলে আসছে। নতুন সংক্রামক রোগের প্রায় ৭০ শতাংশ বিভিন্ন প্রাণী থেকে উৎপত্তি হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে কোভিড-১৯, সার্স, বার্ড ফ্লু, ইবোলা, এইচআইভি প্রভৃতি।

বিশ্বনেতারা ভবিষ্যৎ মহামারি রোধে সাশ্রয়ী ও কার্যকরী কৌশলকে অবহেলা করে চলেছেন

যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রিভেনটিং প্যানডেমিকস অ্যাট দ্য সোর্সের (পিপিএস) গঠন করা আন্তর্জাতিক গবেষকদের নতুন একটি স্বতন্ত্র টাস্কফোর্স মহামারি মোকাবিলায় উৎস চিহ্নিত করতে কাজ করছে। সংস্থাটির বিজ্ঞানীরা বলছেন, মহামারির মূল কারণ প্রতিরোধের বিষয়গুলো বিশ্বনেতা ও কর্তৃপক্ষ খুব কমই উল্লেখ করে থাকে। পিপিএসের পক্ষ থেকে বলা হয়, বিশ্ব স্বাস্থ্য সম্মেলন (ওয়ার্ল্ড হেলথ অ্যাসেম্বলি) ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার করোনা মহামারির প্রতিবেদনেও বিষয়টিকে উপেক্ষা করা হয়েছে।

সাম্প্রতিক এক গবেষণায় পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে, আগামী এক দশকে আরও মহামারি দেখা দিলে তা প্রতিরোধে বার্ষিক ব্যয় ২৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে নামিয়ে আনা যাবে। বর্তমান করোনা মহামারিতে যে আর্থিক ক্ষতি হয়েছে, এই ক্ষতি তার মাত্র ২ শতাংশ। ক্ষতি ঠেকাতে বনাঞ্চল রক্ষা, ঝুঁকিপূর্ণ বন্য প্রাণী ব্যবসা বন্ধ, ফার্মের পশুপাখিকে সংক্রমণ থেকে উন্নত সুরক্ষা, বন্য প্রাণী বাজার এলাকায় দ্রুত রোগ শনাক্তকরণের মতো পদক্ষেপ নিতে হবে।

নতুন এই টাস্কফোর্সে বিশ্বের প্রায় সব অঞ্চল থেকেই বিজ্ঞানীদের রাখা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় এই টাস্কফোর্স তৈরি করেছে। গ্রীষ্মের শেষ নাগাদ এই টাস্কফোর্স মহামারি রোধে কার্যকর পরিকল্পনা প্রণয়ন করবে।

টাস্কফোর্সের নেতৃত্বে থাকা হার্ভার্ড সেন্টার ফর ক্লাইমেট, হেলথ অ্যান্ড দ্য গ্লোবাল এনভায়রনমেন্টের গবেষক অ্যারন বার্নস্টেইন বলেছেন, ‘কোভিড-১৯ পুরো প্রকৃতি থেকে আমাদের জন্য একটি সতর্কবার্তা ছিল। কিন্তু এখন পর্যন্ত বিশ্বনেতারা পদক্ষেপ গ্রহণ থেকে দূরে রয়েছেন। মহামারি প্রতিরোধ বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ সম্পর্কে তাঁদের কাছ থেকে কিছু শুনে থাকলেও এর মূল কারণ ঠেকানোর বিষয়ে তাঁদের কাছ থেকে খুব কম কথা শোনা গেছে।’

অ্যারন বার্নস্টেইন আরও বলেছেন, ‘বর্তমানে বিশ্বনেতারা যেসব কথা বলেন, তার বেশির ভাগই স্বাস্থ্য খাতের প্রস্তুতি, রক্ষণাবেক্ষণ ও টিকাসংক্রান্ত। কিন্তু এগুলো হচ্ছে রোগ ছড়ানোর পর তা প্রতিরোধের উপায়। কিন্তু আমরা এটা শিখেছি যে মুক্তির পথ আরও সাশ্রয়ী হতে পারে। মহামারি উৎপত্তির পর তা ব্যবস্থাপনার চেয়ে মহামারি শুরুতেই প্রতিরোধের ব্যয় খুব সামান্য। এসব পদক্ষেপের অধিকাংশই আবার জলবায়ু ও জীববৈচিত্র্য সংকটের মোকাবিলা করার ক্ষেত্রে কাজে লাগে।’