যত খুশি চকলেট কেক খান আজ

বেলজিয়ামে চকলেট কেক বানানো হচ্ছে একটি বেকারিতে।ছবি: রয়টার্স

চকলেট আর কেক দুটিই বেশির ভাগ মানুষের পছন্দের খাবার। আর দুয়ে মিলে যখন হয় চকলেট কেক, তখন তো কথাই নেই। ছোটরা তো বটেই, বড়দেরও জিবে জল এসে যায়। জন্মদিন, বিবাহবার্ষিকী তো বটেই, ঘরোয়া অনুষ্ঠানেও অনেক সময় আসরের মধ্যমণি হয়ে থাকে চকলেট কেক। চকলেট কেকপ্রেমীদের খাওয়ার জন্য যেন একটা অজুহাত চাই। তবে চকলেট কেক যাঁরা পছন্দ করেন তাঁরা শুনলে খুশি হবেন, এই কেক খাওয়ার জন্য দারুণ এক উপলক্ষ রয়েছে। আছে পুরো একটা দিন। আজ সেই চকলেট কেক ডে (চকলেট কেক দিবস)।

কথা যখন চকলেট কেক দিবস নিয়ে, তখন চকলেটের ইতিহাসটা তো জানতেই হয়। তাকানো যাক একটু পেছনে। বিভিন্ন দিবসকেন্দ্রিক ওয়েবসাইট ন্যাশনাল টুডে সূত্রে জানা যায়, ১৭৬৪ খ্রিষ্টাব্দে যুক্তরাষ্ট্রে ড. জেমস বেকার নামের এক ব্যক্তি কোকো বিন গুঁড়া করে চকলেট বানানোর উপায় উদ্ভাবন করেন। তিনি চিকিৎসকও ছিলেন। বেকারের চকলেট পরে বিশ্বজুড়ে সুখ্যাতি অর্জন করে।

১৮৭৯ খ্রিষ্টাব্দে আরও নরম ও উন্নত চকলেট তৈরির কৌশল বের করেন রুডলফ লিন্ট। সুইজারল্যান্ডের বাসিন্দা লিন্ট চকলেটের মিশ্রণের জন্য বিশেষ যন্ত্র তৈরি করেন। পরে লিন্ট চকলেট কারখানা গড়ে তোলেন। সেখানে উন্নতমানের চকলেট তৈরি হতো।

সুস্বাদু চকলেট তৈরির পর কেকের সঙ্গে মেশানোর চিন্তা মাথায় আসে। যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়া অঙ্গরাজ্যের পিটর্সবার্গের দ্য ডাফ কোম্পানি প্রথম চকলেট কেকের সঙ্গে পরিচিত করে মানুষকে। তৈরি হয় ডেভিলের চকলেট কেক। দিন দিন আরও সুস্বাদু ও উন্নত চকলেট কেক তৈরির নতুন নতুন কৌশল বের হয়। যুক্তরাষ্ট্রের জেনারেল মিলস কোম্পানির বেটিহ ক্রকা শুকনা ধরনের চকলেট কেক তৈরি করে। তাদের তৈরি কেক যথেষ্ট জনপ্রিয় হয়। ১৯৯০ সালে তরল চকলেটের তৈরি কেক জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।

যুক্তরাষ্ট্রের ডেলাওয়ার অঙ্গরাজ্যের সাপ্তাহিক পত্রিকা ডোভার পোস্ট জানায়, জনপ্রিয় ফিলাডেলফিয়া কুকবুকের লেখক এলিজা লেসলি ১৮৪৭ খ্রিষ্টাব্দে দ্য লেডিস রেসিপ্ট বুকে চকলেট কেকের রেসিপি জানান। তবে আজকের চকলেট কেকের তুলনায় সেটি ছিল নস্যি। সেটিকে বলা যেতে পারে চকলেটের টুকরা অংশ। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সারাহ টাইসন রোরার, মারিয়া পারলোয়ারের রেসিপিতে বানানো হয় সুস্বাদু, নরম চকলেট কেক। তাঁরা কুকবুকের লেখক।

জিভে জল আনা চকলেট কেক।
ছবি: টুইটার

বাংলাদেশেও চকলেট কেক বেশ জনপ্রিয়। নতুন ধরনের চকলেট কেক বানানো হয় এখন। এগুলোর চাহিদাও অনেক। রন্ধন বিশারদ আলপনা হাবিব বলেন, ‘আগেকার চকলেট ও ক্রিম লেয়ারের কেকের বদলে এখন কোটেট, ড্রাই, প্লেন, ব্ল্যাক ফরেস্টসহ হরেক রকম কেক রয়েছে। বিভিন্ন চকলেট এখন বাংলাদেশে পাওয়া যায়। এগুলো দিয়েও নতুন ধরনের চকলেট কেক বানানো হয়।’ নিজের তৈরি ময়েস্ট চকলেট কেক বেশ জনপ্রিয় বলে জানান তিনি। তবে চকলেট কেক দিবস উপলক্ষে আলাদা করে কোনো আয়োজন দেশে চোখে পড়েনি বলে জানালেন এই রন্ধন বিশারদ।

আসলে যুক্তরাষ্ট্র বা ইউরোপের তুলনায় এশিয়ায় চকলেট কেক দিবস উদ্‌যাপনের চল কম। সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থার কারণেই এমনটা ঘটে। বাংলাদেশেও চকলেট কেক ডে সেভাবে উদ্‌যাপিত হয় না।

আগেকার চকলেট ও ক্রিম লেয়ারের কেকের বদলে এখন কোটেট, ড্রাই, প্লেন, ব্ল্যাক ফরেস্টসহ হরেক রকম কেক রয়েছে। বিভিন্ন চকলেট এখন বাংলাদেশে পাওয়া যায়। এগুলো দিয়েও নতুন ধরনের চকলেট কেক বানানো হয়।
রন্ধন বিশারদ আলপনা হাবিব

প্রাণের ব্র্যান্ড ম্যানেজার বোরহানউদ্দিন চৌধুরী জানান, চকলেট কেক দিবস হিসেবে ক্রেতারা আলাদা করে খুব বেশি কিছু কেনেন না। ছাড় ও উপহার থাকায় দিনটিতে ক্রেতাদের সাড়া কিছুটা বেশি থাকে। ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামে চকলটে কেক দিবস উপলক্ষে ক্যাম্পেইন চালাবে প্রাণ। চকলেট কেক দিবসে এবার দুই ধরনের চকলেট কেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত ছাড় দেবে প্রাণ। এ ছাড়া চকলেট কেকের সঙ্গে চারটি চকলেট উপহার হিসেবে দেওয়া হবে।

যুক্তরাষ্ট্রে চকলেট কেক দিবস বেশি জমজমাট হয়। চকলেট কেক দিবস কীভাবে উদ্‌যাপন করা হয়, তা নিয়ে একটি ধারণা দিয়েছে মজার দিবসবিষয়ক ওয়েবসাইট ন্যাশনাল ডে ক্যালেন্ডার। চকলেট কেক দিবস উদ্‌যাপনে বেশি আয়োজনের প্রয়োজন নেই। এই দিবসে একটাই কাজ, খাওয়াদাওয়া আর মজা করা। চকলেট কেক দিবসে বন্ধু ও স্বজনের সঙ্গে কেক খাওয়া হয়। অনেকেই যান নিজের পছন্দের কেকের দোকানে। ভালো কেক তৈরির জন্য তাঁদের ধন্যবাদ জানান। চাইলে কেকের দোকানে নিজের কেকের রেসিপিও দেন অনেকে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিজের তৈরি চকলেট কেকের ছবি, চকলেট কেকের রেসিপি, চকলেট কেক খাওয়ার ছবি পোস্ট করা হয়। শুধু ছবি নয়, পোস্ট করা হয় সুস্বাদু চকলেট কেকের ভিডিও।

মজাদার চকলেট কেক।
ছবি: টুইটার

ডেজ অব দ্য ইয়ার ডটকম জানিয়েছে, হরেক রকম চকলেট কেকের কথা। লেমন কেক, অরেঞ্জ কেক নতুন নতুন যত কেকই আসুক না কেন, চকলেট কেককে বলা যায় কেকের রাজা। যুক্তরাষ্ট্রের চকলেট কেকের পাশাপাশি জার্মান চকলেট কেকও যথেষ্ট জনপ্রিয়। এমনকি চিলির চকলেট কেকও যথেষ্ট সুস্বাদু। চকলেট কেক দিবসে ইউটিউব ঘেঁটে বানানো যেতে পারে নতুন নতুন কেক। বিংশ শতাব্দীর শেষে ও একবিংশ শতাব্দীর শুরু থেকে চকলেট কেক দিবস সংস্কৃতির একটি অংশ হয়ে ওঠে।