রাশিয়ার করোনা টিকাও কার্যকর

প্রতীকী ছবি।

রাশিয়ার উদ্ভাবিত করোনাভাইরাসের টিকাটি নিরাপদ ও কার্যকর বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে। টিকাটির প্রাথমিক পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে রচিত এক গবেষণা নিবন্ধ থেকে এ তথ্য জানা গেছে। চিকিৎসাবিজ্ঞানবিষয়ক সাময়িকী দ্য ল্যানসেট গত শুক্রবার নিবন্ধটি প্রকাশ করেছে।

এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) সবাইকে আশ্বস্ত করে বলেছে, করোনার কোনো টিকা যদি নিরাপদ ও কার্যকর প্রমাণিত না হয়, তাহলে তারা কিছুতেই ওই টিকার স্বীকৃতি দেবে না। বিশ্বজুড়ে করোনার টিকা উদ্ভাবনের তোড়জোড়ের মধ্যেই সংস্থাটি আরও বলেছে, করোনার কার্যকর টিকা পেতে ২০২১ সালের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হতে পারে।

রাশিয়ার সম্ভাব্য করোনা টিকাটির নাম দেওয়া হয়েছে স্পুটনিক-ভি। সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের সময়কার কৃত্রিম উপগ্রহের নামে নামকরণ করা হয়েছে এই টিকার। রুশ সরকার এরই মধ্যে এই টিকার অনুমোদন দিয়ে দিয়েছে। সে দিক থেকে স্পুটনিক-ভি হলো বিশ্বের প্রথম অনুমোদনপ্রাপ্ত করোনা টিকা।

তবে রাশিয়ার এই টিকা নিয়ে শুরু থেকেই বিতর্ক ছিল। কয়েক মাস আগে দেশটি ঘোষণা দেয়, তারা আগস্টের মধ্যে বিশ্বের প্রথম করোনার টিকা আনতে যাচ্ছে। সে অনুযায়ী গত মাসে টিকাটির অনুমোদন দেওয়া হয়। এভাবে আগে থেকে ঘোষণা দিয়ে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে টিকা আনাই স্পুটনিক-ভি ঘিরে বিতর্কের অন্যতম কারণ। পশ্চিমা দেশগুলোর গবেষকদের সংশয়, রাশিয়ার এই টিকা ততটা কার্যকর হবে না। তাঁদের দাবি, রুশ বিজ্ঞানীরা সবার আগে টিকা আনার দৌড়ে নেমে হয়তো টিকা উদ্ভাবনের স্বাভাবিক ধাপগুলো কাটছাঁট করেছেন।

অবশ্য রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, তাঁর এক মেয়েও টিকাটির পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন। তাঁর শরীরে প্রয়োজনীয় অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে। সামান্য জ্বর ছাড়া তাঁর মধ্যে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বলতে তেমন কিছু দেখাই যায়নি।

এসব আলোচনা-সমালোচনার মধ্যেই দ্য ল্যানসেট-এ গবেষণা নিবন্ধটি প্রকাশিত হলো। এতে জানানো হয়, সীমিত পরিসরে দুই দফার পরীক্ষায় প্রমাণ পাওয়া গেছে যে টিকাটি নিরাপদ ও কার্যকর। প্রতি দফার পরীক্ষায় অংশ নেন ১৮ বছর থেকে ৬০ বছর বয়সী ৩৮ জন স্বেচ্ছাসেবী। তাঁদের ২১ দিনের ব্যবধানে দুই ডোজে টিকাটি প্রয়োগ করা হয়। এরপর ৪২ দিন পর্যন্ত তাঁদের পর্যবেক্ষণে রাখা হয়। এতে দেখা গেছে, পরীক্ষায় অংশ নেওয়া সব স্বেচ্ছাসেবীর শরীরেই প্রথম তিন সপ্তাহের মধ্যে প্রয়োজনীয় অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে। গবেষণা নিবন্ধে জানানো হয়, টিকাটির তৃতীয় ধাপের পরীক্ষায় বিভিন্ন বয়সের ও ঝুঁকিতে থাকা বিভিন্ন গোষ্ঠীর ৪০ হাজার স্বেচ্ছাসেবী অংশ নেবেন। এ ছাড়া প্রথম দুই দফার পরীক্ষায় অংশ নেওয়া স্বেচ্ছাসেবীরা পরবর্তী ১৮০ দিন পর্যবেক্ষণে থাকবেন বলেও এতে উল্লেখ করা হয়।

এই মহামারি মোকাবিলায় বিভিন্ন দেশেই টিকা উদ্ভাবনের চেষ্টা চলছে। গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত হালনাগাদকৃত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার খসড়া তালিকা অনুসারে, বিশ্বজুড়ে করোনার ১৭৬টি সম্ভাব্য করোনার টিকা নিয়ে কাজ চলছে।

টিকা নিরাপদ ও কার্যকর না হলে স্বীকৃতি নয়

সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় গত শুক্রবার ভার্চ্যুয়াল ব্রিফিংয়ের সময় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক তেদরোস আধানোম গেব্রেয়াসুস বলেন, করোনার কোনো টিকা নিরাপদ ও কার্যকর প্রমাণ না হওয়া পর্যন্ত তাঁর সংস্থা সেটার স্বীকৃতি দেবে না। তিনি ধনী-গরিব নির্বিশেষে সব দেশের জন্য সমহারে টিকার বণ্টন নিশ্চিত করার ওপর জোর দেন। তিনি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বৈশ্বিক টিকা বণ্টন পরিকল্পনা ‘কোভ্যাক্স’-এ যোগ দিতে সব দেশের প্রতি আহ্বান জানান। এ পর্যন্ত এই পরিকল্পনায় যোগ দিয়েছে ১৭০টি দেশ।

তবে করোনার টিকা উদ্ভাবনে তোড়জোড় যতই চলুক, কার্যকর ও নিরাপদ টিকার জন্য ২০২১ সালের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে বলে মনে করছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা সৌম্য স্বামিনাথান। শুক্রবার তিনি সংবাদ ব্রিফিংয়ের সময় বলেন, ‘২০২১ সালের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে আমরা দেখব যে বিভিন্ন দেশে টিকার সরবরাহ শুরু হয়েছে, সাধারণ মানুষে তা প্রয়োগ করা হচ্ছে।’