শিগগিরই কাটছে না ইউরোপ-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের তিক্ততা

জো বাইডেন ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প
ফাইল ছবি: রয়টার্স

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের চার বছরের শাসনামলে দেশটির সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সম্পর্ক তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ মিত্র ইইউর সঙ্গে এই সম্পর্ক এতটাই তিক্ত হয়েছে যে পরবর্তী প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের চার বছরের শাসনামলেও তা আগের অবস্থায় ফেরানো কঠিন হবে। যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম সিএনএনের বিশ্লেষণে এমন তথ্য উঠে এসেছে।

ট্রাম্প প্রশাসনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও তাঁর শেষ ইউরোপ সফর বাতিল করেছেন। ওই সফরে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও পশ্চিমা দেশগুলোর সামরিক জোট ন্যাটোর নেতাদের সঙ্গে তাঁর বৈঠকের কথা ছিল। পম্পেওর সফর বাতিলের কারণ হিসেবে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর দাবি করেছে, বাইডেনের ক্ষমতা হস্তান্তর টিমের সঙ্গে কাজ করার জন্যই পররাষ্ট্রমন্ত্রী পম্পেও ইউরোপ সফর বাতিল করেছেন। যদিও ইউরোপের কর্মকর্তাদের সন্দেহ, যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ এই কূটনীতিক বুঝতে পেরেছেন, ট্রাম্প সরকারের মেয়াদের শেষ পর্যায়ে ইউরোপের কোনো নেতাই তাঁর সফর নিয়ে এখন খুব একটা আগ্রহ দেখাবেন না। তাই তিনি সফরটি বাতিল করেছেন।

৬ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্ট ভবন ক্যাপিটলে ট্রাম্প-সমর্থকেরা তাণ্ডব চালান। এই ঘটনার পর দেশে-বিদেশে সমালোচনার শিকার হন ট্রাম্প। ওই হামলার ঘটনার আগেও যদি পম্পেও ইউরোপ সফরে যেতেন, সেখানে তিনি উষ্ণ অভ্যর্থনা পেতেন না। কারণ, ট্রাম্প প্রশাসনের বিষয়ে ইউরোপীয় নেতাদের নেতিবাচক মনোভাব অত্যন্ত গভীরে পৌঁছে গেছে।

ট্রাম্পের মেয়াদের পুরোটা সময় ইউরোপের নেতারা কঠিন অবস্থার মধ্য দিয়ে পার করেছেন। এরপরও ট্রাম্পের ধ্বংসাত্মক আচরণের সরাসরি নিন্দা জানানোর বিষয়ে ভারসাম্য রক্ষার চেষ্টা করেন তাঁরা। কিন্তু ইউরোপের অনেক কূটনীতিককে কোনো রাখঢাক না রেখেই ট্রাম্পের সমালোচনা করতে দেখা গেছে। ক্যাপিটল ভবনে হামলার ঘটনায় উসকানি দেওয়ার জন্য ট্রাম্পকে সরাসরি ‘মানসিক রোগী’ হিসেবে মন্তব্য করেন লুক্সেমবার্গের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। ক্যাপিটলে হামলাসহ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পর থেকে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির জন্য ট্রাম্পকে দায়ী করেন ইউরোপের কূটনীতিকেরা।

পম্পেওর ইউরোপ সফরের বিষয়ে ইউরোপবিষয়ক জ্যেষ্ঠ বিশ্লেষক ও সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা প্রশাসনের পররাষ্ট্র দপ্তরের কর্মকর্তা টাইসন বেকার বলেন, ওই সফর যে বন্ধুত্বপূর্ণ হতে যাচ্ছে না, সেটা পরিষ্কার ছিল। ইউরোপের অনেক প্রতিষ্ঠান ও কূটনীতিক ট্রাম্প প্রশাসন থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারেই সচেষ্ট ছিলেন। ইউরোপ যে বাইডেন প্রশাসনের সঙ্গে কাজ করতে মুখিয়ে রয়েছে, তা গোপন কোনো বিষয় না।

পণ্যে শুল্ক আরোপসহ ইউরোপের মিত্রদেশগুলোর ওপর ট্রাম্প প্রশাসনের একের পর এক বিতর্কিত সিদ্ধান্ত দুই পক্ষের মধ্যকার সম্পর্কে ব্যাপক ক্ষতি করে। ইউরোপের একজন জ্যেষ্ঠ কূটনীতিক সিএনএনকে বলেছেন, তাঁদের দৃষ্টিতে, ট্রাম্প ইউরোপকে শত্রু হিসেবে দেখেন। ট্রাম্পের ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতির দীর্ঘ প্রভাবের কারণে ইউরোপের অনেক মিত্র হারিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

ইউরোপীয় ইউনিয়ন বিশ্ব পরিমণ্ডলের অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে কাজ করতে এগিয়ে এলেও ট্রাম্প প্রশাসন তা নস্যাৎ করে দিয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে বিস্তর। প্যারিস জলবায়ু চুক্তি, ইরানের সঙ্গে পারমাণবিক চুক্তির মতো বিষয়গুলো এর অন্যতম আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টায় এসব চুক্তি স্বাক্ষরিত হলেও পরে ট্রাম্প প্রশাসন যুক্তরাষ্ট্রকে চুক্তি থেকে প্রত্যাহার করে নেয়। এটা ঠিক, নতুন মার্কিন প্রশাসনের অধীনে আন্তমহাদেশীয় সম্পর্কের উন্নতি হবে। তবে তা আগের অবস্থায় ফিরতে অনেক সময় লাগবে। কারণ, গত চার বছরে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সম্পর্ক এতটাই খারাপ হয়েছে যে তা রাতারাতি আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়।

যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড কেনেডি স্কুলের ইউরোপ অ্যান্ড ট্রান্স–আটলান্টিক রিলেশনশিপ প্রজেক্টের নির্বাহী পরিচালক ক্যাথরিন ক্লুভার আশব্রুক বলেছেন, ইউরোপ সম্পর্কে পরিবর্তন ঘটেছে। এখন এটা সন্দেহের বাতাবরণে আবৃত হবে। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ উত্তরসূরি বারাক ওবামার জন্য ইউরোপ-যুক্তরাষ্ট্রের যে খারাপ সম্পর্ক রেখে গিয়েছিলেন, বাইডেনের জন্য ট্রাম্প আরও খারাপ অবস্থা রেখে যাচ্ছেন। দুই পক্ষের সম্পর্ক মেরামতের জন্য আরও অনেক বছর পাড়ি দিতে হবে বলে মনে করেন আশব্রুক।