সরে আসা ছাড়া কোনো উপায় ছিল না: হ্যারি

গতকাল রোববার লন্ডনে সেন্টেবালের এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখছেন প্রিন্স হ্যারি। ছবি: সেন্টেবালের টুইটার থেকে নেওয়া
গতকাল রোববার লন্ডনে সেন্টেবালের এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখছেন প্রিন্স হ্যারি। ছবি: সেন্টেবালের টুইটার থেকে নেওয়া

ব্রিটিশ রাজপরিবারের জ্যেষ্ঠ সদস্যের পদ ছেড়ে দেওয়ার ঘোষণা নিয়ে নানা তোলপাড়ের পর প্রকাশ্যে প্রথম মুখ খুললেন প্রিন্স হ্যারি। তিনি জানালেন, সরে আসা ছাড়া তাঁর কোনো উপায় ছিল না। 

গতকাল রোববার সন্ধ্যায় লন্ডনের এক অনুষ্ঠানে প্রিন্স হ্যারি বলেন, তিনি এবং তাঁর স্ত্রী মেগান সরকারি তহবিলের অর্থ ছাড়াই রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের হয়ে তাঁদের কাজ অব্যাহত রাখার আশা করেছিলেন।

হ্যারি-মেগান দম্পতি গত ৮ জানুয়ারি আকস্মিক এক ঘোষণায় রাজকীয় দায়িত্ব ছেড়ে দিয়ে স্বনির্ভর জীবনযাপনে যুক্তরাজ্যের পাশাপাশি কানাডায় বসবাসের কথা জানান। তাঁদের ওই ঘোষণায় ব্রিটিশ রাজপরিবারে তোলপাড় শুরু হয়। তাঁদের ওই সিদ্ধান্ত থেকে ফেরাতে ১৩ জানুয়ারি ইংল্যান্ডের নরফক কাউন্টির স্যান্ড্রিংহ্যাম প্রাসাদে হ্যারির সঙ্গে বৈঠক করেন রানি এলিজাবেথ ও তাঁর উত্তরাধিকারেরা। বৈঠকে রানি হ্যারি ও মেগানের নতুন সিদ্ধান্তের ব্যাপারে তাঁর ‘পূর্ণ সমর্থন’ থাকার কথা জানান। তবে রানি জানান, তিনি চাইছেন হ্যারি-মেগান রাজপরিবারের সদস্য হিসেবেই পুরো সময় দায়িত্ব পালন করুন। এর পরও হ্যারি-মেগান তাঁদের সিদ্ধান্ত থেকে সরে না আসায় গত শনিবার (১৮ জানুয়ারি) বাকিংহাম প্রাসাদ এক বিবৃতিতে জানায়, যুক্তরাজ্যের ডিউক অব সাসেক্স প্রিন্স হ্যারি ও তাঁর স্ত্রী ডাচেস অব সাসেক্স মেগান মার্কেল তাঁদের রাজকীয় উপাধি আর ব্যবহার করতে পারবেন না। চলতি বছরের বসন্ত থেকেই এটি কার্যকর হবে।

আজ সোমবার বিবিসি অনলাইনের খবরে বলা হয়েছে, পদ ছেড়ে দেওয়ার ঘোষণার পর গতকাল সন্ধ্যায় প্রথমবারের মতো এ নিয়ে প্রকাশ্যে কথা বলেন প্রিন্স হ্যারি। একটি সংস্থার আফ্রিকার দক্ষিণাঞ্চলের এইচআইভি-আক্রান্ত শিশুদের জন্য তহবিল সংগ্রহবিষয়ক এক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। সেন্টেবালে নামের ওই দাতব্য সংস্থাটির তিনি সহযোগী প্রতিষ্ঠাতা। হ্যারি বলেন, ‘সত্যিই আর কোনো উপায় ছিল না।’ তিনি স্পষ্ট করেন, জ্যেষ্ঠ সদস্যের পদ ছাড়লেও তিনি ও মেগান দূরে সরে যাচ্ছেন না। তিনি বলেন, ‘যুক্তরাজ্য আমার ঘর এবং এমন একটি স্থান, যা আমি ভালোবাসি, এটা কখনো পরিবর্তন হবে না।’

হ্যারি বলেন, ‘গত সপ্তাহগুলোতে আপনারা যা পড়েছেন, যা শুনেছেন, তা আমি শুধু অনুমান করতে পারি। তাই একজন প্রিন্স বা ডিউক হিসেবে নয়, হ্যারি হিসেবে আমি আপনাদের যতটুকু পারি সত্য জানাতে চাই।’ রানি এলিজাবেথের পাশে থাকার কথা উল্লেখ করে হ্যারি বলেন, ‘আমার পরম শ্রদ্ধেয় দাদি, আমার কমান্ডার ইন চিফের পাশে সব সময় থাকব।’ তিনি বলেন, ‘সরকারি তহবিল ছাড়া রানি, কমনওয়েলথ, সামরিক সংস্থার সঙ্গে কাজ অব্যাহত রাখার প্রত্যাশা ছিল আমাদের। তবে দুর্ভাগ্যজনকভাবে তা সম্ভব না। আমি এটা মেনে নিয়েছি এটা জেনেই যে, আমি কে অথবা আমি কতটা অঙ্গীকারবদ্ধ তা পরিবর্তন করতে পারব না।’

প্রিন্স হ্যারির বক্তব্যটি হ্যারি-মেগান দম্পতির ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে পোস্ট করা হয়। প্রিন্স বলেন, তিনি এবং মেগান যখন বিয়ে করেছিলেন, তখন তাঁরা অনেক রোমাঞ্চিত, অনেক আশাবাদী এবং যুক্তরাজ্যের সেবায় নিয়োজিত থাকার জন্য ছিলেন। তিনি বলেন, ‘ওই সব কারণে বিষয়গুলো এখন এ পর্যায়ে এসেছে বলে আমার অনেক দুঃখ হচ্ছে।’ সরে আসার সিদ্ধান্ত হঠাৎ নেননি জানিয়ে হ্যারি বলেন, ‘অনেক বছরের চ্যালেঞ্জের পর অনেক মাস আলোচনার পর এই সিদ্ধান্ত। বিষয়টি এমন পর্যায়ে চলে গিয়েছিল যে সত্যিই আর কোনো বিকল্প ছিল না।’