সাহিত্যের নোবেল এবার মার্কিন কবির হাতে

লুইস গ্লাক
ছবি: নোবেল প্রাইজ ডট ওআরজি

সাহিত্যে এ পর্যন্ত নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন ১১৭ জন। এর মধ্যে নারী মাত্র ১৬ জন। তালিকায় সংযোজিত হলো নতুন নাম, লুইস গ্লাক। মার্কিন এই কবি পেয়েছেন চলতি বছরের সাহিত্যের নোবেল। গতকাল বৃহস্পতিবার পুরস্কার ঘোষণার সময় সুইডিশ একাডেমি বলেছে, লুইস গ্লাকের ‘নিরাভরণ সৌন্দর্যের অভ্রান্ত কাব্যকণ্ঠ ব্যক্তির অস্তিত্বকে সর্বজনীন করে তোলে’।

৭৭ বছর বয়সী লুইস গ্লাকের জন্ম ১৯৪৩ সালে, নিউইয়র্কে। ১৯৬৮ সালে প্রথম বই ফার্স্টবর্ন দিয়ে কবি হিসেবে তাঁর অভিষেক। অল্প সময়েই তিনি মার্কিন সমকালীন সাহিত্যে নিজের স্বতন্ত্র জায়গা করে নেন।

সাধারণত প্রতিবছর ১০ ডিসেম্বর সুইডেনের স্টকহোমে জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজনের মাধ্যমে বিজয়ীদের হাতে নোবেল পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়। করোনাভাইরাসের অতিমারির কারণে এ বছর সে অনুষ্ঠান বাতিল করা হয়েছে।

বার্তা সংস্থা এএফপি বলেছে, এবার সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পাওয়ার দৌড়ে লুইস গ্লাকের নাম শুরুতে তেমন আলোচনায় আসেনি। সুইডিশ একাডেমির নোবেল কমিটির প্রধান অ্যান্ডার্স ওলসন বলেছেন, লুইস যে খুব পরিচিত, তা নন; বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে। তাঁর লেখা বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদও কম হয়েছে বলে খেদ প্রকাশ করেছেন ওলসন।

গতকাল পুরস্কার ঘোষণার সময় এ নিয়ে কথা বলেন সুইডিশ একাডেমির স্থায়ী সচিব ম্যাটস মালম। তিনি বলেন, পুরস্কার ঘোষণার কিছু আগে লুইস গ্লাকের সঙ্গে কথা হয়। তিনি নোবেল সাহিত্য পুরস্কার পাওয়ার খবর শুনেই বিস্মিত হয়ে পড়েন।

কবি লুইস গ্লাক পেশাজীবনে শিক্ষক। শিক্ষকতা করেন কানেটিকাট অঙ্গরাজ্যের ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ে। পৌরাণিক কাহিনির অনুপ্রেরণার চিহ্ন তাঁর কবিতার বৈশিষ্ট্য। ১৯৯৩ সালে দ্য ওয়াইল্ড আইরিস কাব্যগ্রন্থের পেয়েছিলেন পুলিৎজার পুরস্কার। ফেইথফুল অ্যান্ড ভার্চ্যুয়াস নাইট কাব্যসংকলনের জন্য ২০১৪ সালে পান ন্যাশনাল বুক অ্যাওয়ার্ড।

এবিসি নিউজের খবরে বলা হয়েছে, সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার নিয়ে কয়েক বছর ধরেই বিতর্ক চলছে। এসব মাথায় রেখেই এবার বেছে নেওয়া হয়েছে মার্কিন এই কবিকে। লুইস গ্লাক একটি পদক পাবেন। তার সঙ্গে পাবেন নোবেল পুরস্কারের অর্থ, প্রায় ১১ লাখ ২১ হাজার ডলারের সমপরিমাণ ১ কোটি সুইডিশ ক্রোনার।

নোবেল কমিটিতে যৌন হয়রানির অভিযোগ ওঠায় ২০১৮ সালে সব শাখায় নোবেল দেওয়া হলেও সাহিত্যকে বাদ রাখা হয়। গত বছর একসঙ্গে দেওয়া দুই বছরের পুরস্কার। ২০১৮ সালের জন্য সে পুরস্কার পেয়েছিলেন পোল্যান্ডের লেখক ওলগা তোকারচুক এবং ২০১৯ সালের জন্য অস্ট্রিয়ার সাহিত্যিক পিটার হান্ডকে। সেবারও বিতর্ক ওঠে। পিটার গণহত্যার সমর্থক, এই ছিল সমালোচকদের বক্তব্য। ১৯৯০–এর দশকের যুগোস্লাভ যুদ্ধে হান্ডকে সার্বদের প্রতি প্রকাশ্যে সমর্থন জানিয়েছিলেন। এমনকি গণহত্যা ও যুদ্ধাপরাধের জন্য কুখ্যাত সার্ব নেতা স্লোবোদান মিলোসেভিচের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়াতেও অংশ নিয়েছিলেন তিনি। এ নিয়ে তপ্ত হয়ে ওঠে বিশ্ব সাহিত্যের অঙ্গন। নোবেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিল, রাজনৈতিক বিবেচনায় নয়, বরং শুধুই সাহিত্যিক মানদণ্ডে হান্ডকে পুরস্কৃত হয়েছেন।

বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, এসব কারণে এবারও সাহিত্যের নোবেল নিয়ে কিছুটা সতর্ক ছিল কর্তৃপক্ষ। তাই বেছে নেওয়া হয়েছে পাদপ্রদীপের আলোয় তুলনামূলকভাবে কম আসা লুইস গ্লাককে।

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মানবিক হতে চাওয়ার যন্ত্রণাদায়ক বাস্তবতার কথা উঠে আসে লুইসের কবিতায়। মৃত্যু, শৈশব ও পারিবারিক জীবনকে উপজীব্য করে তিনি লিখেছেন অজস্র কবিতা। এই সূত্রেই তাঁর কবিতার যোগসূত্র ঘটেছে গ্রিক পুরাণ ও পৌরাণিক চরিত্রের সঙ্গে।

সুইডিশ একাডেমি বলছে, লুইস গ্লাকের ২০০৬ সালের সংকলন অ্যাভারনো ছিল সুনিপুণ এক সৃষ্টিকর্ম, যেখানে পৌরাণিক চরিত্রগুলোর ভেতর দিয়ে মানবপ্রকৃতির এক দূরদর্শী ব্যাখ্যা দিয়েছেন কবি। নোবেল পুরস্কারের বিচারকমণ্ডলী বলছেন, কবি হিসেবে লুইস নিয়ত পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে গেছেন। কবিতায় বারবার নতুন নতুন রূপবদল ঘটেছে তাঁর।