স্বাধীনতার ৪০ বছরেও নারী সাংসদ পায়নি দেশটি

যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সের কাছ থেকে ১৯৮০ সালে স্বাধীনতা লাভ করে ভানুয়াতু। ১২ হাজার ১৯০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের দ্বীপরাষ্ট্রটির জনসংখ্যা প্রায় তিন লাখ। খ্রিষ্টান সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশটির জনগণের প্রধান ভাষা বিসলামা, ফরাসি ও ইংরেজি।

দ্বীপরাষ্ট্র ভানুয়াতুর পার্লামেন্ট স্বাধীনতার ৪০ বছরেও কোনো নারী প্রতিনিধি পায়নিফাইল ছবি: রয়টার্স

চার দশকের বেশি আগে স্বাধীন হয়েছে দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরের দ্বীপরাষ্ট্র ভানুয়াতু। এত দিনেও দেশটির পার্লামেন্ট কোনো নারী প্রতিনিধি পায়নি। দীর্ঘদিন ধরে নারী প্রতিনিধি না পাওয়া বিশ্বের হাতে গোনা যে কয়টি দেশ আছে, তার মধ্যে ভানুয়াতু প্রজাতন্ত্র অন্যতম।


তবে এ পরিস্থিতি পরিবর্তনের লক্ষ্য নিয়ে অনেকের সঙ্গে কাজ করছেন দুজন নারী অধিকারকর্মী। তাঁরা চাইছেন, দেশটির শীর্ষ সিদ্ধান্ত গ্রহণের সিদ্ধান্তের জায়গায় যেতে। এঁদেরই একজন হচ্ছেন অ্যানথিয়া আরুকোলা। তিনি ভানুয়াতু সরকারের রাজনৈতিক পরামর্শক। ২০০৮ সাল থেকে তিনি দেশটির পার্লামেন্টের প্রথম নারী প্রতিনিধি নির্বাচিত হওয়ার জন্য স্বপ্ন নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন।

ভানুয়াতুর রাজনীতি পুরোটাই পুরুষকেন্দ্রিক। কোনো নারীকে নেতৃত্ব পর্যায়েও দেখা যায়নি। এখানে নারীরা কেবল পরিবারের যত্ন ও সামাজিক দায়িত্ব পালনেই সময় কাটিয়ে দেন।
জর্জিলা ওরওর, নারী অধিকারকর্মী


অ্যানথিয়ার মতোই আরেকজন হচ্ছেন আইনের শিক্ষার্থী ও অধিকারকর্মী জর্জিলা ওরওর। তাঁর স্বপ্ন আরও বড়। তিনি দেশটির ভোটারদের আস্থা অর্জন করে দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার কথা ভাবছেন।

ইউএন নিউজের প্রতিবেদনে ভানুয়াতুর ওই দুজন নারী অধিকারকর্মীর স্বপ্নের কথা তুলে ধরা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ভানুয়াতুতে লিঙ্গবৈষম্য প্রকট। তবে বিভিন্ন খাতের নারী অধিকারকর্মীরা এই পরিস্থিতি উন্নয়নের চেষ্টা করে যাচ্ছেন। জাতিসংঘের স্মল আইল্যান্ড ডেভেলপমেন্ট স্টেটস (ওএইচআরএলএলএস) প্রকল্প থেকে জর্জিলা ও অ্যানথিয়ার লক্ষ্যের বিষয়টি তুলে ধরা হয়।

জর্জিলা ওরওর


জর্জিলা বলেছেন, ‘ভানুয়াতুর পার্লামেন্টের দিকে তাকালে দেখবেন সেখানে সবাই পুরুষ। দেশটির প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী, এমপি সবাই পুরুষ। আমি ভানুয়াতুর আদিবাসী নারী। আমি এখন এ দেশকে আমাদের চাওয়ামতো গড়ার স্বপ্ন দেখি। যেখানে সবাই নারীকে সম্মান ও মূল্য দেবে। এ ছাড়া সর্বক্ষেত্রে নারীদের জন্য সুযোগ সৃষ্টি হবে। আমার একটি স্বপ্ন আছে এবং আমি তা নিয়ে কাজ করছি। আমি নিজেকে সিদ্ধান্ত গ্রহণের, নেতৃত্ব দেওয়ার জায়গায় দেখি। এমনকি আমি দেশটির প্রধানমন্ত্রী হওয়ার স্বপ্ন দেখি।’

অ্যানথিয়া আরুকোলা


ভানুয়াতু প্রসঙ্গে অ্যানথিয়া বলেন, ‘৪০ বছর হলো ভানুয়াতু স্বাধীন হয়েছে। আমি এখন বুড়ো হতে চলেছি। আমার পাঁচ বছর বয়সে দেশের স্বাধীন পতাকা ওড়ে। কিন্তু প্রতিবছরের ৩০ জুলাই আমার চোখে পানি গড়িয়ে পড়ে। দেশটির ৪০ বছর পূর্তিতে আমরা জাতি হিসেবে কোথায় আছি, তা উপলব্ধি করতে পেরেছি। জাতি হিসেবে আমরা কারা, কিসের প্রতিনিধিত্ব করি এবং কী অর্জন করেছি, তার আলোচনা শুরু হয়েছে।’
জর্জিলার মতে, ভানুয়াতু জাতির অনেক গর্বের ইতিহাস রয়েছে। সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে এটি স্বাধীন একটা দেশ।

অ্যানথিয়া বলেন, ‘জর্জিলার মতোই আমার কাছে আত্মপরিচয় জানাটা বড় বিষয়। আমরা স্কুলে ইংরজি ও ফ্রেঞ্চ পড়াই। কিন্তু বাড়িতে আবার আমাদের শিক্ষাটা আলাদা। সেখানে আদিবাসী ভাষা শেখানো হয়, যা আমার সংজ্ঞা দেয়। ভানুয়াতু মিশ্র সংস্কৃতির দেশ।’ ভানুয়াতুর রাজনীতি প্রসঙ্গে অ্যানথিয়া বলেন, ‘ভানুয়াতুর রাজনীতিতে পরিবারতন্ত্র বড় ভূমিকা রয়েছে। এখানে সেভাবেই নেতাদের তুলে আনা হয়। তবে আমি চাই, মানুষের জীবনে পার্থক্য গড়ে দিতে পারে, এমন নেতা নির্বাচন করতে।’

ভানুয়াতুর রাজনীতিতে পরিবারতন্ত্র বড় ভূমিকা রয়েছে। এখানে সেভাবেই নেতাদের তুলে আনা হয়। তবে আমি চাই, মানুষের জীবনে পার্থক্য গড়ে দিতে পারে, এমন নেতা নির্বাচন করতে
অ্যানথিয়া আরুকোলা, নারী অধিকারকর্মী


জর্জিলার মতে, তাঁর কাছে ভানুয়াতুর রাজনীতি পুরোটাই পুরুষকেন্দ্রিক। সেখানে কোনো নারী রাজনীতিবিদ নেই। কোনো নারীকে নেতৃত্ব পর্যায়েও দেখা যায়নি। সেখানে নারীরা কেবল পরিবারের যত্ন ও সামাজিক দায়িত্ব পালনেই সময় কাটিয়ে দেন।
অ্যানথিয়া নিজের মূল্যায়ন করে বলেন, ‘তিনি ভালো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারেন। তিনি তাই সংসদ সদস্য হওয়ার লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছেন।’ অ্যানথিয়া আরও বলেন, ‘এখনকার নারীরা রাজনীতি, সিদ্ধান্ত গ্রহণ, নেতৃত্ব ও রাজনৈতিক লক্ষ্য নিয়ে কথা বলছেন, এটাই রোমাঞ্চকর। আমি প্রত্যেককে বলব যে প্রথমে আগে নিজের মধ্যে নেতৃত্ব তৈরি কর। যদি নিজেকে নেতৃত্ব দিতে পারো, তখন অন্যদের নেতৃত্ব দিতে পারবে।’