হন্ডুরাসের ‘ঘুষ’-রাজনীতি

হন্ডুরাসের প্রেসিডেন্ট হুয়ান অরল্যান্ডো হার্নান্দেজ
ছবি : এএফপি

হন্ডুরাসের প্রেসিডেন্টের আসন কাঁপিয়ে দিয়েছে একটি মামলার ঘটনা। যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে একটি মামলায় হুয়ান অরল্যান্ডো হার্নান্দেজের বিরুদ্ধে ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে বেশ টালমাটাল অবস্থায় কাটাতে হয়েছে হন্ডুরাসের প্রেসিডেন্টকে।

নিউইয়র্ক শহরে মাদক চোরাচালানের অভিযোগে অভিযুক্ত জিওভান্নি ফুয়েন্তেসের বিচারকাজ চলছে। এ মামলায় জোহ নামে পরিচিত হন্ডুরাসের প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধেও ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ উঠেছে। তিনি যুক্তরাষ্ট্রে কোকেইন পাচারে সাহায্য করার বিনিময়ে ঘুষ নিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

গত ১৬ মার্চ ওই মামলার একজন সাক্ষী বলেছেন, ২০১৩ সালে হার্নান্দেজ প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগে দুবার ঘুষ নিয়েছেন। কিছুদিন আগে আরেক চোরাচালানকারী গোষ্ঠীর নেতা তাঁর জবানবন্দিতে বলেছেন, তিনি গ্রেপ্তার থেকে রক্ষা পেতে হার্নান্দেজকে আড়াই লাখ ডলার ঘুষ দিয়েছিলেন। ব্রিটিশ সাময়িকী দ্য ইকোনমিস্টের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

মার্কিন আইনজীবীরা যেসব নথি জোগাড় করছেন, তাতে অবশ্য অভিযুক্ত হিসেবে সরাসরি হার্নান্দেজের নাম উল্লেখ করা হয়নি। তবে তাতে যেসব তথ্য তাঁরা সংগ্রহ করেছেন, তা মূলত হন্ডুরাসের প্রেসিডেন্টকেই অভিযুক্ত হিসেবে শনাক্ত করে।

হন্ডুরাস থেকে যুক্তরাষ্ট্র অভিমুখী মানুষের ঢল নেমেছে। গুয়াতেমালা সীমান্তে তাদের ঠেকানোর চেষ্টা করছে নিরাপত্তা বাহিনী
ছবি: রয়টার্স

সেখানে তাঁর মন্তব্য ব্যবহার করা হয়েছে। তিনি বলেছেন, গ্রিংগোদের (যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক) নাকের ডগা দিয়ে মাদক পাচার করতে চান। অবশ্য অরল্যান্ডো হার্নান্দেজ এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

মাদক অপরাধের সঙ্গে প্রেসিডেন্ট হার্নান্দেজের নাম যুক্ত হওয়ার বিষয়টি অবশ্য একেবারে নতুন নয়। ২০১৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রে হওয়া এক মামলায় প্রেসিডেন্ট অরল্যান্ডোর ভাই টনি হার্নান্দেজ অভিযুক্ত হন। টনি নিজেও দেশটির সাবেক আইনপ্রণেতা। তবে মাদক চোরাচালানের সঙ্গে যুক্ত থাকার বিষয়ে তাঁর নাম এসেছিল। তাঁর বিরুদ্ধে কুখ্যাত মেক্সিকান ড্রাগ লর্ড এল চাপোর কাছ থেকে এক মিলিয়ন ডলার ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল।

বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, টনি হার্নান্দেজকে যুক্তরাষ্ট্রের একটি আদালত মাদক চোরাচালানের অভিযোগে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন।

হন্ডুরাসের প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে ঘুষদুর্নীতির অভিযোগ উঠল অস্থির এক সময়ে। আগামী নভেম্বরে দেশটির প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। ওই নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট ও ১২৮ জন কংগ্রেস সদস্য নির্বাচন করবেন ভোটাররা। নির্বাচনী প্রচারে দুর্নীতি ও মাদকের অর্থ বড় হয়ে উঠবে বলে মনে করছেন অলাভজনক প্রতিষ্ঠান মোর জাস্ট সোসাইটির লিস্টার রামরেজ।

দেশটির প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হতে পারেন, এমন কারও জন্য হুয়ান অরল্যান্ডো হার্নান্দেজের ঘুষদুর্নীতির বিষয়টি তুলে ধরা ভালো সুযোগ হতে পারে।

নির্বাচনে অরল্যান্ডোর প্রতিদ্বন্দ্বী হতে পারে বিরোধী লিবারেল পার্টির প্রার্থী ইয়ানি রোসান্থাল। সম্প্রতি তিনি মানি লন্ডারিংয়ের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তিন বছরের জেলের মেয়াদ শেষ করেছেন। তিনি হার্নান্দেজের বিরুদ্ধে ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ করেছেন। অন্যদিকে ক্ষমতাসীন ন্যাশনাল পার্টির প্রিয়মুখ হন্ডুরাসের রাজধানী টেগুসিগাল্পার মেয়র নাসরি আসফুরা ক্ষমতার অপব্যবহার, জালিয়াতি, পাবলিক তহবিলের আত্মসাৎ, ভুয়া নথি পরিবেশন এবং অর্থ পাচারের অভিযোগে প্রাথমিক শুনানির মুখোমুখি হয়েছেন।

এদিকে বামপন্থী দল লিবারেল সম্ভবত সাবেক প্রেসিডেন্ট মানুয়েল জেলায়ার স্ত্রী শিওমারা কাস্ত্রোকে মাঠে নামাতে পারে। ফুয়েন্তেসের বিচারের সময় শিওমারার বিরুদ্ধেও ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ ওঠে। তিনিও এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
সাবেক অর্থমন্ত্রী হুগো নো পিনোর মতে, মাদকের অর্থ ও দুর্নীতি হন্ডুরাসের রাজনীতির প্রতিটি স্তরে অনুপ্রবেশ করেছে।


রামিরেজ বলেন, কেবল অন্যকে ঘুষ দেওয়ার ঘটনাই ঘটছে না। মাদক ব্যবসায়ী ও সংঘবদ্ধ অপরাধের সঙ্গে যুক্ত চক্রও নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। গত বছর অরল্যান্ডো হার্নান্দেজ কিছু আইনপ্রণেতাদের দুর্নীতির বিষয়টি তদন্ত করার পরে দুর্নীতি দমন সংস্থাকে পুনরুজ্জীবিত করতে ব্যর্থ হন। বর্তমান কংগ্রেসে তাঁর ও মিত্রদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে। এ ছাড়া সুপ্রিম কোর্ট ও নির্বাচন সংস্থার ওপরও প্রভাব রাখেন তাঁরা।

হন্ডুরাসবাসী বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বিরক্ত হয়ে উঠছে। এক কোটির মতো জনসংখ্যার দেশটিতে স্থানীয় সহিংসতা ও দারিদ্র্যের হার বাড়ছে। সেখানে গত বছরের করোনা মহামারি ও ঘূর্ণিঝড়ে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে বাজে শাসন আর সইতে পারছে না হন্ডুরাসবাসী।

অনেক লোক আমেরিকা যাওয়ার আশায় ইতিমধ্যে দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছেন। আরও অনেকেই তাঁদের পথ অনুসরণ করছেন। যাঁরা এর মধ্যেও দেশে থেকে যাবেন, তাঁরা রাজনীতিবিদদের কাছে আরও ভালো কাজ আশা করেন।