হাইতি ছেড়ে যাব না: মার্টিন মইসি

জোভেনেল মইসি ও মার্টিন মইসি
ছবি : এএফপি

ভবিষ্যতে হাইতির জনগণের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন হাইতির প্রয়াত প্রেসিডেন্টের স্ত্রী মার্টিন মইসি। ফেসবুকে জনগণের উদ্দেশে দেওয়া এক বার্তায় মার্টিন বলেছেন, ‘আমি আপনাদের ছেড়ে যাব না।’ এদিকে বার্তা সংস্থা এএফপি বলছে, মইসি হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় হাইতির রাজনৈতিক পরিস্থিতি অস্থিতিশীল হয়ে পড়েছে। দেশটির রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ গভীর অনিশ্চয়তায় পড়ে গেছে।

বন্দুকধারীদের হামলায় আহত হওয়ার পর এ নিয়ে প্রথম কথা বলেছেন হাইতির নিহত প্রেসিডেন্ট জোভেনেল মইসির স্ত্রী মার্টিন মইসি। গত বুধবার বন্দুকধারীরা প্রেসিডেন্ট জোভেনেল মইসির বাসায় হামলা চালিয়ে তাঁকে হত্যা করে। এ হামলায় তাঁর স্ত্রী মার্টিন মইসি আহত হন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রে চিকিৎসাধীন।

গত শনিবার মার্টিন মইসি তাঁর টুইটার ও ফেসবুক পেজে একটি ‘ভয়েস মেসেজ’ পোস্ট করেন। এই বার্তা যে মার্টিন মইসির, তা একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। বার্তায় মার্টিন মইসি বলেন, মধ্যরাতে চোখের পলকের মধ্যে ভাড়াটে হত্যাকারীরা তাঁদের বাড়িতে ঢোকে। তারা গুলি করে তাঁর স্বামীকে ঝাঁঝরা করে দেয়।

জোভেনেল মইসি ২০১৭ সাল থেকে হাইতির প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। তাঁর পদত্যাগ দাবি করে দেশটিতে একাধিকবার বিক্ষোভ হয়। জোভেনেল মইসি নিহত হওয়ায় হাইতির সরকারের দায়িত্ব নিয়েছেন অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী ক্লদে জোসেফ।

হাইতির প্রেসিডেন্ট হত্যার পর অস্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় দেশটিতে প্রেসিডেন্ট ও আইনসভা নির্বাচন সামনে রেখে এগিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। চলতি বছরের শেষের দিকে এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। দেশটির অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী ক্লদে জোসেফ বলেছেন, তিনি এখনো দায়িত্বে বহাল আছেন।

দেশটির একদল সিনেটরের পক্ষ থেকে সিনেট নেতা জোসেফ ল্যামবার্টকে অস্থায়ী প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিয়োগের পরিকল্পনায় সমর্থন দেওয়া হয়েছে। কিছু বিরোধীদলীয় নেতা এতে সমর্থন দিচ্ছেন। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রী হিসেবে এরিয়েল হেনরিকেও সমর্থন দিচ্ছেন তাঁরা। উল্লেখ্য, মইসি নিহত হওয়ার আগে হেনরিকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করেন। তবে অস্থায়ী প্রেসিডেন্ট হিসেবে ল্যামবার্ট দায়িত্ব নেবেন কি না, তা পরিষ্কার নয়। তবে এই মুহূর্তে অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী ক্লদে জোসেফের পক্ষে রয়েছে পুলিশ ও অন্য নিরাপত্তা বাহিনী।

জোসেফ গত শনিবার মার্কিন গণমাধ্যম সিএনএনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘সংবিধানে স্পষ্ট করা আছে যে আমাকে নির্বাচন আয়োজন করতে হবে এবং নির্বাচিত কারও হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে।’

যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা বলেছেন, নিরাপত্তার পাশাপাশি তদন্তসংক্রান্ত কাজে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা চেয়েছে হাইতি। হোয়াইট হাউসের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, হত্যার তদন্তে এফবিআইয়ের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের হাইতিতে পাঠানো হয়েছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র হাইতিতে সেনা পাঠাবে কি না, তা নিশ্চিত করেননি তিনি। এদিকে জাতিসংঘের কাছেও সেনাসহায়তা চেয়েছে হাইতি। এ বিষয়ে সংস্থাটি কোনো মন্তব্য করেনি।

এদিকে পোর্ট-অ–প্রিন্সে দোকানপাট আবার ধীরে ধীরে খুলতে শুরু করেছে। গত শনিবার থেকে লোকজন আবার রাস্তায় বের হয়েছে। দেশটির মার্কিন দূতাবাসের সামনে ২০০ জনের বেশি নাগরিককে পাসপোর্ট হাতে রাজনৈতিক আশ্রয়ের জন্য জড়ো হতে দেখা যায়।

কড়া নিরাপত্তায় থাকা মার্কিন দূতাবাস ভবনের সামনে লুইস লিমেজ নামের এক ব্যক্তি বলেন, ‘এখানে প্রেসিডেন্টকে যদি হত্যা করা হতে পারে, আমার মতো সাধারণ নাগরিকের কোনো মূল্য নেই। আমাকে আশ্রয়ের জন্য ছুটতে হবে, যাতে অন্য কোথাও ভালোভাবে জীবন যাপন করতে পারি।’