হাঙরের সুপারহাইওয়ের সন্ধান

হ্যামারহেড শার্ক
ছবি : এএফপি

প্রশান্ত মহাসাগরের গভীরে সামুদ্রিক প্রাণীর চলাচলের প্রায় ৭০০ কিলোমিটার (৪৩০ মাইল) বিস্তৃত একটি সুপারহাইওয়ের সন্ধান পেয়েছেন গবেষকেরা। সামুদ্রিক কচ্ছপ, তিমি হাঙর ও হ্যামারহেড হাঙর এই পথ ব্যবহার করে চলাচল করে থাকে।

ইকুয়েডরের গ্যালাপাগোস দ্বীপপুঞ্জ এবং কোকোস দ্বীপপুঞ্জের সামুদ্রিক জলাধার থেকে শুরু করে এই পথ কোস্টারিকা উপকূল পর্যন্ত বিস্তৃত।

মার্কিন গণমাধ্যম সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশেষজ্ঞরা সামুদ্রিক প্রাণীর চলাচলের এই সুপারহাইওয়ে সামুদ্রিক জীবের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করেছে। এই পথ ধরে কচ্ছপ ও হাঙর যাতায়াত করার সময় বাসা তৈরি বা খাবারের খোঁজ করে থাকে।

তবে এই পথ বিপজ্জনক। দুই প্রান্তেই সামুদ্রিক জলাধার থাকলেও বাকি পথটা সামুদ্রিক এসব পানির জন্য বিপদ ডেকে আনে। শিকারি জাহাজগুলো এ পথে চলাচল করে। তথ্য বিশ্লেষণ করে বিশেষজ্ঞরা দেখেছেন, বিপন্ন অনেক পরিযায়ী সামুদ্রিক প্রাণী কমে যাচ্ছে।

পরিবেশবাদী গ্রুপ ও বিজ্ঞানীদের জোট মাইগ্রামারের প্রতিষ্ঠাতা ও জীববিজ্ঞানের অধ্যাপক অ্যালেক্স হেয়ার্ন বলেন, শুধু দ্বীপগুলোর আশপাশে জীববৈচিত্র্যের হটস্পট সুরক্ষা দেওয়াটা যথেষ্ট নয়। তাঁরা সামুদ্রিক প্রাণীর চলাচলের এই পুরো সুপারহাইওয়ে সুরক্ষার জন্য প্রচার করছেন। তাঁরা ৯৩ হাজার বর্গমাইল বা যুক্তরাজ্যের সমান আয়তনের এলাকার সুরক্ষা চান।

এর ফলে কোকোস দ্বীপের চারপাশে বর্তমান ২২ কিলোমিটার ব্যাসার্ধ এবং গ্যালাপাগোস দ্বীপের চারপাশে ৭৪ কিলোমিটারের বেশি এলাকাজুড়ে মাছ ধরা নিষিদ্ধ থাকবে। এতে দুই এলাকার মধ্যে সমুদ্রের নিচের পাহাড়গুলোর শৃঙ্খলা মেনে সরু একটি সুরক্ষিত চ্যানেল তৈরি হবে।

গবেষক হেয়ার্ন বলেন, সমুদ্রে ল্যান্ডমার্কের মতো কাজ করা এই পাহাড়গুলো নেভিগেশনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। লাভায় তৈরি এসব পাহাড় বৈদ্যুতিক তরঙ্গ নির্গত করে, যা কাজে লাগিয়ে সামুদ্রিক কচ্ছপ ও হ্যামারহেড হাঙর নিজেদের অবস্থান নির্ধারণ করে থাকে। এসব পাহাড় সামুদ্রিক প্রাণীর স্থান বদলের সময় খাবার ও বিশ্রামের জায়গা হিসেবে কাজ করে।

গবেষকেরা বলছেন, এই পরিযায়ী প্রাণীগুলোর সবচেয়ে বড় হুমকি হচ্ছে মাছ ধরার বিষয়টি। প্রায়ই মাছ ধরার জালে ধরা পড়ে সামুদ্রিক কচ্ছপ ও বিভিন্ন ধরনের হাঙর।

হাঙরের মাংস ও পাখনার জন্য অবৈধভাবে শিকার করার ঘটনাও ঘটে। মাইগ্রামারের আরেক প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও টার্টল আইল্যান্ড রেস্টোরেশন নেটওয়ার্কের নির্বাহী পরিচালক টড স্টেইনার বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের মতো হুমকির সঙ্গে তুলনা করলে মাছ ধরার বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করা সহজ। উপকূলীয় দেশগুলো তাঁদের সমুদ্রসীমায় মাছ ধরার কার্যক্রমে বিধিনিষেধ আনতে পারে।

অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পরিবেশগত এই অঞ্চলের সুরক্ষায় কয়েকটি কাগজে সই করলেই সংরক্ষণপ্রক্রিয়া শুরু হতে পারে।