২০৩১ সালে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন ভেঙে পড়বে পৃথিবীতে

আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনছবি: রয়টার্স

২০৩০ সাল পর্যন্ত নিয়মিত কার্যক্রম চালিয়ে যাবে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন (আইএসএস)। এর পরের বছরের শুরুর দিকে এটি প্রশান্ত মহাসাগরের একটি নির্দিষ্ট জায়গায় ভেঙে পড়তে পারে। গত সপ্তাহে মার্কিন মহাকাশ সংস্থা নাসার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে। খবর বিবিসির।

প্রতিবেদনে নাসা জানিয়েছে, প্রশান্ত মহাসাগরে পয়েন্ট নিমো নামে একটি জায়গা রয়েছে। পুরোনো মহাকাশযানের ভাগাড় হিসেবে পরিচিত এই জায়গা। অনেক পুরোনো মহাকাশযান ও মহাকাশবর্জ্য এখানে পড়েছে। এর মধ্যে রুশ মহাকাশ স্টেশন মির রয়েছে। ২০০১ সালে মির এখানে ভেঙে পড়ে। ২০৩১ সালের শুরুতে এই জায়গায় পড়বে আইএসএস।

যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, জাপান, কানাডা এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের পাঁচটি মহাকাশ সংস্থার যৌথ উদ্যোগে আইএসএস পরিচালিত হয়ে আসছে। ১৯৯৮ সালে পৃথিবীর কক্ষপথে এটি স্থাপন করা হয়। চলতি শতকের শুরু থেকে মহাকাশে তিন হাজারের বেশি গবেষণা কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে এই স্টেশনে। ২০২৪ সাল পর্যন্ত আইএসএসের কার্যক্রম পরিচালনার কথা ছিল। তবে পাঁচটি মহাকাশ সংস্থা এই স্টেশনের কার্যক্রম ২০৩০ সাল পর্যন্ত চালিয়ে নেওয়ার বিষয়ে নীতিগতভাবে একমত হয়েছে।

আরও পড়ুন

একই সঙ্গে প্রতিবেদনে নাসা জানিয়েছে, ভবিষ্যতে পৃথিবী থেকে পরিচালিত মহাকাশ কার্যক্রম বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে পরিচালনা করা হতে পারে। বিশেষত পৃথিবীর কক্ষপথ ও এর আশপাশে যেসব অভিযান পরিচালিত হবে, সেগুলো বাস্তবায়নে ভূমিকা রাখবে বাণিজ্যিক খাত। এর মধ্য দিয়ে ভবিষ্যতের মহাকাশ গবেষণা ও অভিযানে বড় ধরনের পরিবর্তনের আভাস দিয়েছে সংস্থাটি।

এ বিষয়ে নাসার বাণিজ্যিক মহাকাশ বিভাগের পরিচালক ফিল ম্যাকঅ্যালিস্টার বলেন, পৃথিবীর কক্ষপথে অভিযান পরিচালনায় বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলো কারিগরি ও আর্থিকভাবে সক্ষম। এ বিষয়ে নাসার পক্ষ থেকে তাদের সব ধরনের সহায়তা দেওয়া হবে।

আইএসএসে সংযুক্ত করার জন্য একটি বাসযোগ্য মডিউল তৈরিতে ২০২০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসভিত্তিক বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান অ্যাক্সিওম স্পেসের সঙ্গে চুক্তি করেছে নাসা। একই সঙ্গে মহাকাশ স্টেশনসহ পৃথিবীর কক্ষপথে বিভিন্ন বাণিজ্যিক গন্তব্যের নকশা প্রণয়নে আরও তিনটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সংস্থাটির পক্ষ থেকে চুক্তি করা হয়েছে।

আরও পড়ুন

আশা করা হচ্ছে, এখন চালু থাকা আইএসএসের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই এসব নতুন প্রকল্পের কার্যক্রম আংশিক হলেও চালু হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে মহাকাশে বাণিজ্যিক কার্যক্রম এগিয়ে নিতে নানাভাবে চেষ্টা করছে নাসা। ইতিমধ্যে ধনকুবের ইলন মাস্কের স্পেসএক্সসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান আইএসএসে মহাকাশচারী ও পণ্য নিয়ে বাণিজ্যিক মহাকাশযান পাঠাতে শুরু করেছে। মার্কিন ধনকুবের জেফ বেজোসের মহাকাশ পর্যটন সংস্থা ব্লু অরিজিন চলতি দশকের দ্বিতীয়ার্ধে নতুন একটি মহাকাশ স্টেশন উৎক্ষেপণ করতে চায়।

নাসা জানিয়েছে, মহাকাশ কার্যক্রমে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে যুক্ত করা, এই খাতে ব্যয়সাশ্রয়ী উদ্যোগ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এর ফলে সংস্থাটির ১৩০ কোটি ডলার সাশ্রয় হতে পারে। কেননা, আইএসএসের পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের ব্যয়ভার এটির ব্যবহারকারী বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোর হাতে চলে যাবে। নাসা যেসব সেবা নেবে, শুধু সেসবের জন্য অর্থ ব্যয় করবে। তবে পৃথিবীর কক্ষপথ থেকে দূরবর্তী অভিযানগুলো নাসা নিজ অর্থে পরিচালনা করবে।