২০৭০ সাল নাগাদ ৩০০ কোটি মানুষ থাকবে চরম উষ্ণতায়

২০৭০ সাল নাগাদ বিশ্বের ৩০০ কোটি মানুষকে চরম উষ্ণ তাপমাত্রার মধ্যে থাকতে হবে। ছবি: রয়টার্স
২০৭০ সাল নাগাদ বিশ্বের ৩০০ কোটি মানুষকে চরম উষ্ণ তাপমাত্রার মধ্যে থাকতে হবে। ছবি: রয়টার্স

জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ২০৭০ সাল নাগাদ বিশ্বের ৩০০ কোটি মানুষকে 'প্রায় বসবাস–অযোগ্য' চরম উষ্ণ তাপমাত্রার মধ্যে থাকতে হবে। যদি গ্রিন হাউজ গ্যাস নিঃসরণ উল্লেখযোগ্য হারে কমানো না যায়, তাহলে পৃথিবীর বেশির ভাগ মানুষকে গড়ে ২৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসের চেয়েও বেশি তাপমাত্রায় বসবাস করতে হবে। নতুন এক সমীক্ষার ফলাফলে এ পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করেছেন গবেষকেরা।

যুক্তরাজ্যের এক্সেটার বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্লোবাল সিস্টেমস ইনস্টিটিউটের পরিচালক ও জলবায়ু বিশেষজ্ঞ টিম লেন্টন চীন, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের বিজ্ঞানীদের নিয়ে এই সমীক্ষা চালান। বিবিসি অনলাইনে দেওয়া সাক্ষাৎকারে টিম লেন্টন বলেন, এই গবেষণায় জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবকে আরও বেশি মানব সভ্যতার ওপর প্রয়োগ করে দেখা হয়েছে।

গবেষকেরা জাতিসংঘের জনসংখ্যা অনুমিতি ও প্রত্যাশিত বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির ওপর ভিত্তি করে ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস উষ্ণায়ন পরিস্থিতির তথ্য–উপাত্ত ব্যবহার করেছেন।জাতিসংঘের একটি প্রতিবেদনে দেখা গেছে, বিভিন্ন দেশ প্যারিস জলবায়ু চুক্তি মেনে চলার পরও বিশ্বের তাপমাত্রা ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়ে যাবে।

সমীক্ষায় বলা হয়েছে, বেশির ভাগ মানুষ এমন স্থানে বাস করে, যেখানে গড় তাপমাত্রা ১১ থেকে ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অল্প কিছু মানুষ গড়ে ২০ থেকে ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় বাস করে।হাজার বছর ধরে এই জলবায়ু পরিস্থিতিতে বসবাস করে আসছে মানুষ।তবে বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ফলে তাপমাত্রা ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়ে গেলে, বিপুল সংখ্যক মানুষ এই 'অনুকূল জলবায়ুর' সীমার বাইরে বলে বিবেচিত তাপমাত্রায় চলে যাবে।

লেন্টন বলেন, সমুদ্রের তুলনায় ভূমি উষ্ণ হয় দ্রুত। ভূমির উষ্ণ হওয়ার হার ৩ ডিগ্রি বেশি। উষ্ণ এলাকাগুলোতে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাবে, বিশেষ করে আফ্রিকার সাবসাহারান অঞ্চলে। ফলে গড়ে ওই এলাকার সব মানুষকে উষ্ণ আবহাওয়ায় বাস করতে হবে।এতে আরও বেশি জনগোষ্ঠী উষ্ণ আবহাওয়ায় চলে যাবে। মানুষকে তখন গড়ে ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় বাস করতে হবে। ওই সময় বৈশ্বিক তাপমাত্রা বেড়ে দাঁড়াবে ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এই বিরূপ প্রভাব যে অঞ্চলগুলোতে সবচেয়ে বেশি পড়ার আশঙ্কা রয়েছে, এর মধ্যে উত্তর অস্ট্রেলিয়া, ভারত, আফ্রিকা, দক্ষিণ আমেরিকা এবং মধ্যপ্রাচ্যের কিছু অংশ রয়েছে। সমীক্ষায় উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে, সেসব দরিদ্র জনগোষ্ঠীর ওপর এই বিরূপ প্রভাব পড়বে, এই তাপামাত্রায় তারা আশ্রয় খুঁজে পাবে না।

লেন্টন বলেন, 'এই গবেষণায় ধনীদের বিষয়টি নিয়ে ভাবা হয়নি। কারণ তাঁরা শীতাতপনিয়ন্ত্রিত ভবনে বাস করতে পারবেন। যেকোনো কিছু থেকে নিজেদের রক্ষা করতে সক্ষম হবেন।আমাদের উদ্বেগের বিষয় হলো, আবহাওয়া ও জলবায়ুর এই পরিস্থিতি থেকে যারা নিজেদের রক্ষা করতে পারবেন না, সেই মানুষগুলোর জন্য।'

লেন্টন বলেন, এই গবেষণার মূল বার্তা হলো জলবায়ু পরিবর্তনকে সীমাবদ্ধ করে যত বেশি সম্ভব মানুষকে 'অনুকূল জলবায়ু' সীমার বাইরে চলে যাওয়া থেকে ঠেকানো। তিনি বলেন, এই জলবায়ু পরিবর্তনের মানে হলো প্রতি ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে ১০০ কোটি মানুষকে হয় তুলনামূলক শীতল অঞ্চলে সরে যেতে হবে, নয়তো চরম উষ্ণ তাপমাত্রায় বাস করতে হবে।