'সরকার অনুগত সংবাদমাধ্যম বেশি হলে প্রকৃত সাংবাদিকতা কঠিন হয়ে পড়ে'

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম স্বাধীনতা দিবস সামনে রেখে যুক্তরাজ্যে কর্মরত বাংলাদেশি সাংবাদিকদের সংগঠন ‘ইনডিপেনডেন্ট মিডিয়া ক্লাব’ একটি সেমিনারের আয়োজন করে। যুক্তরাজ্যের হাউস অব লর্ডসের কমিটি কক্ষে অনুষ্ঠিত হয় এই সেমিনার। ছবি: খালিদ হোসাইন
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম স্বাধীনতা দিবস সামনে রেখে যুক্তরাজ্যে কর্মরত বাংলাদেশি সাংবাদিকদের সংগঠন ‘ইনডিপেনডেন্ট মিডিয়া ক্লাব’ একটি সেমিনারের আয়োজন করে। যুক্তরাজ্যের হাউস অব লর্ডসের কমিটি কক্ষে অনুষ্ঠিত হয় এই সেমিনার। ছবি: খালিদ হোসাইন

সরকার অনুগত সংবাদমাধ্যমের সংখ্যা বেশি হলে প্রকৃত সাংবাদিকতা যাঁরা করেন তাঁদের দায়িত্ব পালন আরও কঠিন হয়ে পড়ে। গত বুধবার যুক্তরাজ্যের হাউস অব লর্ডসের কমিটি কক্ষে অনুষ্ঠিত এক সেমিনারে এমন অভিমত ব্যক্ত করেছেন বক্তারা। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম স্বাধীনতা দিবস সামনে রেখে যুক্তরাজ্যে কর্মরত বাংলাদেশি সাংবাদিকদের সংগঠন ‘ইনডিপেনডেন্ট মিডিয়া ক্লাব’ এই সেমিনারের আয়োজন করে।

সেমিনারে বেশ কয়েকজন বক্তার কণ্ঠে উঠে আসে বাংলাদেশে সংবাদমাধ্যমের ওপর ক্ষমতাসীনদের অদৃশ্য নিয়ন্ত্রণ এবং মালিকপক্ষের অন্যায্য কর্তৃত্ব আরোপের কথা। গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় ক্ষমতাসীন ও মালিকপক্ষের হস্তক্ষেপ, সাংবাদিকতা পেশায় নৈতিকতার বিচ্যুতি, প্রাতিষ্ঠানিক গণমাধ্যমগুলোর সঠিক দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতা এবং সাংবাদিকতার ওপর প্রযুক্তিনির্ভর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোর প্রভাবসহ নানা বিষয়ে অভিমত তুলে ধরেন বক্তারা।

ব্রিটিশ আইনসভার উচ্চকক্ষ হাউস অব লর্ডসের সদস্য রোবার্ট এইমস এই আয়োজনে পৃষ্ঠপোষকতা দেন এবং আলোচনায় সভাপতিত্ব করেন। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন দেশটির পররাষ্ট্র ও কমনওয়েলথ দপ্তরের প্রতিমন্ত্রী তারিক মাহমুদ আহমদ। ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার কয়েকজন সাংবাদিকও এতে বক্তব্য দেন।

যুক্তরাজ্যের আইনপ্রণেতারা পার্লামেন্টে সভা আয়োজনের পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে বিভিন্ন গোষ্ঠী ও সংগঠনকে মুক্তভাবে মতামত প্রকাশের সুযোগ করে দেন। দেশটির ‘চ্যাথাম হাউস রুলস’ অনুযায়ী এসব আয়োজনের বক্তাদের উদ্ধৃত করে খবর ছাপানোর নিয়ম নেই। তাই উক্ত সেমিনারে কে কী বক্তব্য দিয়েছেন, সেটি উল্লেখ থেকে বিরত থাকছে প্রথম আলো।

সেমিনারে একজন বক্তা বলেন, সরকার অনুগত সংবাদমাধ্যমের সংখ্যা বেশি হলে প্রকৃত সাংবাদিকতা যাঁরা করেন, তাঁদের দায়িত্ব পালন আরও কঠিন হয়ে পড়ে। তিনি বলেন, জবাবহিদি নিশ্চিতের নামে এমন সব আইন করা হয়েছে, যা ভিন্নমত প্রকাশের সুযোগই বদ্ধ করে দিয়েছে। সরকারের এসব পদক্ষেপ ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ স্লোগানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে তিনি মন্তব্য করেন।

আরেক বক্তা বলেন, যুক্তরাজ্যে প্রকাশিত বাংলা সংবাদমাধ্যমগুলোকেও বাংলাদেশের সংবাদ ছাপার আগে দ্বিতীয়বার চিন্তা করতে হয়। কেননা প্রকাশিত সংবাদ দেখে কে কোন পক্ষে, সেটি নির্ধারণ করা হয়। ফলে এখানকার সাংবাদিকেরাও বাংলাদেশে ঝুঁকিমুক্ত নন। সেমিনারে বক্তারা সাংবাদিকতায় নিরপেক্ষতা, বস্তুনিষ্ঠতা ও পেশাদারি বজায় রাখার তাগিদ দেন।

সেমিনারে প্রধান অতিথি প্রতিমন্ত্রী তারিক মাহমুদ আহমদ বলেন, মানবাধিকার রক্ষা ও কার্যকর গণতন্ত্রের অন্যতম অনুষঙ্গ হলো স্বাধীন গণমাধ্যম। রাজনীতিকদের কাজের বিষয়ে বেশি বেশি জবাবদিহি করার জন্য সাংবাদিকদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

সেমিনারে বক্তব্য দেন বিবিসি বাংলা বিভাগের সম্পাদক সাবির মুস্তাফা, বিবিসি নিউজের মাহফুজ সাদিক, চ্যানেল ফোর নিউজের ফ্রিল্যান্স প্রযোজক বেকি হর্সব্রো, তুরস্কের টিআরটি ওয়ার্ল্ড টেলিভিশনের প্রতিনিধি শামীম আরা চৌধুরী, চ্যানেল এস-এর কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স এডিটর ও একাত্তর টিভির যুক্তরাজ্য প্রতিনিধি সাইদ তানভীর আহমদ, সাংবাদিক বুলবুল হাসান, চ্যানেল আইয়ের মসরুর এলাহী, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের ইউনিয়ন প্রেসিডেন্ট আনিশা ফারুক প্রমুখ। আলোচনায় সঞ্চালক ছিলেন বিবিসি বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রযোজক ও ইনডিপেনডেন্ট মিডিয়া ক্লাবের প্রেসিডেন্ট মাসুদ হাসান খান।