ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিলেন ট্রাম্প

হোয়াইট হাউসে চুক্তি বাতিলের ঘোষণা দিচ্ছেন ট্রাম্প। ছবি: রয়টার্স
হোয়াইট হাউসে চুক্তি বাতিলের ঘোষণা দিচ্ছেন ট্রাম্প। ছবি: রয়টার্স

ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। একই সঙ্গে ইরানের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ অর্থনৈতিক অবরোধের ঘোষণাও এসেছে যুক্তরাষ্ট্র প্রেসিডেন্টের কাছ থেকে। স্থানীয় সময় মঙ্গলবার হোয়াইট হাউসের ডিপ্লোমেটিক কক্ষে চুক্তি বাতিলের ঘোষণা দেন ট্রাম্প। 

২০১৫ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সময়ে করা চুক্তিটিকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ‘ক্ষয়ে যাওয়া, পচা’ বলে মন্তব্য করেন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, ‘ইরানের সঙ্গে করা এই পরমাণু চুক্তির কারণে মার্কিন নাগরিক হিসেবে আমি লজ্জিত।’ বিবিসি অনলাইনের এক প্রতিবেদনে এসব বলা হয়েছে।

এদিকে এক বিবৃতিতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এই ঘোষণার বিরোধিতা করেছে ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য ও জার্মানি। আর ইসরায়েল, সৌদি আরব ট্রাম্পের চুক্তি বাতিলের ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে বলে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে বলা হয়েছে।
এর আগে ইরানের সঙ্গে ছয় বিশ্বশক্তির করা পরমাণু চুক্তি থেকে যেকোনো সময় যুক্তরাষ্ট্র বেরিয়ে যেতে পারে বলে হুমকি দিয়েছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তাঁর মতে, এটি যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে বাজে চুক্তি। ২০১৬ সালে নির্বাচনী প্রচারণার সময় ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছিলেন, তিনি ক্ষমতায় গেলে তাঁর পূর্বসূরি বারাক ওবামার করা এই চুক্তি বাতিল করবেন।

২০১৫ সালে ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তি করা হয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্র, জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য দেশগুলো এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) এই চুক্তির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিল। দীর্ঘ আলোচনার পর এই চুক্তিতে পৌঁছায় সব পক্ষ।
ইরানের সঙ্গে হওয়া এই পরমাণু চুক্তির আনুষ্ঠানিক নাম জয়েন্ট কম্প্রিহেনসিভ প্ল্যান অব অ্যাকশন (জেসিপিওএ)। চুক্তি মোতাবেক ইরান পরমাণু কর্মসূচি সীমিত করতে সম্মত হয়েছিল। তেজস্ক্রিয় পদার্থ ইউরেনিয়ামের মজুত কমিয়ে আনতে রাজি হয় দেশটি। এই ইউরেনিয়াম পরমাণু অস্ত্র তৈরির কাজে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এ ছাড়া ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার জন্য ব্যবহৃত সেন্ট্রিফিউজের সংখ্যা কমিয়ে আনার শর্তও ছিল চুক্তিতে।

এসব শর্ত মেনে চলার বদলে ইরানের ওপর আরোপ করা বিভিন্ন ধরনের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়। বিশেষ করে জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউয়ের দেওয়া নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়। এসব নিষেধাজ্ঞার কারণে ইরানের অর্থনীতি সংকুচিত হয়ে পড়েছিল। পরমাণু চুক্তি হওয়ার ফলে ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিদেশি বিনিয়োগসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রবেশের সুযোগ পায় ইরান। এ ছাড়া বিভিন্ন দেশে বাজেয়াপ্ত থাকা কোটি কোটি ডলারের সম্পদের অধিকারও ফিরে পেয়েছিল দেশটি।

ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তিটি করেছিল জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচ স্থায়ী সদস্য। এই দেশগুলো হলো যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, চীন ও রাশিয়া। এর সঙ্গে জার্মানিও ছিল। অবশ্য চুক্তির আগে ও পরে ইরান বরাবরই দাবি করে এসেছে যে তাদের পরমাণু কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ ছিল। তবে যুক্তরাষ্ট্র না চাইলেও চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী অন্যান্য দেশ চায় চুক্তিটি অটুট থাকুক। জাতিসংঘও ট্রাম্পকে চুক্তি থেকে না সরার পরামর্শ দিয়েছিল। ট্রাম্পকে ঠেকাতে গত রোববার যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াশিংটন যান। অন্যদিকে, ফ্রান্স ও জার্মানিও বলেছে ২০১৫ সালের চুক্তিকে সম্মান জানাতে চায় তারা।

এদিকে ট্রাম্পের চুক্তি বাতিলের হুমকির পরিপ্রেক্ষিতে ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি বলেছেন, প্রাথমিকভাবে কিছু সমস্যা হলেও বিশ্বের সঙ্গে কাজ চালিয়ে যাবে তাঁর দেশ। মঙ্গলবার সকালে তেহরানে এক সম্মেলনে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞায় ‘দু-তিন মাস কিছু সমস্যা হলেও’ তা ‘কাটিয়ে ওঠা যাবে’। তবে ইরানের সুপ্রিম ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের সচিব বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র সংঘাত সৃষ্টি করলে ইরান বসে থাকবে না।

আরও পড়ুন: