তাঁর কাজের হাত ধরে

‘ইউনিভার্স’, শিল্পী: হামিদুজ্জামান খান
‘ইউনিভার্স’, শিল্পী: হামিদুজ্জামান খান

হামিদুজ্জামান খানের ভাস্কর্য ও জলরঙের কাজ দেখে বিস্ময়ে চোখ জুড়িয়ে যায়! আমার মতে, শিল্পী হচ্ছে চোখ, যাঁর জন্য বাস্তবতাকে দৃশ্যমান করা হয়েছে৷ এখানেই হামিদুজ্জামানের চোখ আদর্শ৷ তাঁর চোখের মানবিক মহত্ত্ব এখানেই—এই দেখার মধ্যেই৷
হামিদুজ্জামান খানের ভাস্কর্য দেখে মনে হয়, এসব তিনি নির্মাণ করেছেন প্রাকৃতিক বিশৃঙ্খলার বিরুদ্ধে৷ জলরঙের কাজ দেখে মনে হয়, নাটকীয়ভাবে বদলে গেছে তাঁর স্টাইল৷ বিশৃঙ্খলা বিরুদ্ধে তাঁর অবস্থান৷ এ শিল্পীর স্টাইলের পরিবর্তমানতা সবই তঁার কাজের নতুন মডেল, ব্যক্তিগত বৃদ্ধির দিক থেকে৷ তিনি কি নিজের কাজের কৃত্রিম উদাহরণ তৈরি করেছেন আমাদের জন্য? মনে হয় না৷ তিনি আমাদের জন্য এবং তাঁর নিজের জন্যও একধরনের মরাল ভ্যালুজ তুলে ধরেছেন৷ তিনি একা, তাঁকে ঘিরে আছে প্রকৃতি, সেখানে তাঁর অভিজ্ঞতা বিভিন্ন দিকে হাত বাড়িয়ে আছে, এসব অভিজ্ঞতাই তাঁকে শিল্পী করে তুলেছে৷
প্রকৃতি তা-ই, যা তিনি দেখেন অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে৷ শিল্পী হিসেবে ব্যক্তিগত দায়বদ্ধতা তাঁর বিবিধ ও বিভিন্ন অভিজ্ঞতাকে প্রকৃতির মধ্যে বাস্তব করেছে৷ তাঁর ভাস্কর্য ও জলরঙ এভাবেই তাঁকে উপস্থাপন করেছে অন্যদের কাছে—অর্থাৎ আমাদের কাছে; আমরা যারা পাঠ করছি তাঁর কাজ৷
হামিদুজ্জামান খানের কাজ কী ব্যাখ্যা করব? কিংবা তাঁর কাজ নান্দনিকাতা দিয়ে দেখার চেষ্টা করব?
হামিদুজ্জামানের শিল্পের ভুবন ভাস্কর্য অথবা পেইন্টিং বিভিন্ন ফর্মে ছড়ানো—উৎপাদনের ফর্ম, উপস্থাপনার ফর্ম, দেখার ফর্ম, সমালোচনার ফর্ম, ব্যাখ্যার ফর্ম৷ তাঁর কাজের সাড়া, সে ভাস্কর্য কিংবা পেইন্টিং; নির্ভর করছে তাঁর কাছে শিল্পের অর্থ কী এবং তার চরিত্র কী, এর ওপর৷ আর এসব বিষয়ে হামিদুজ্জামানের নিজস্ব একটা ব্যাখ্যা আছে৷ নিজস্ব একটা নান্দনিকতা আছে৷ তাঁর কাজের দিকে গভীরভাবে তাকালে দেখা যায়, কাজের বাখ্যানমূলক ক্ষমতা, এখানেই তাঁর অপারেটিভ ফর্ম৷ এই পটভূমিতে তাঁর শিল্পভুবন উদ্ভাসিত৷

হামিদুজ্জামান খানের কাজ ভাস্কর্য হোক কিংবা জলরঙ, ইমেজ ফিজিক্যাল সীমানা ছাড়িয়ে যায়৷ প্রতিটি সারফেস ওভারল্যাপ করে তিনি কিংবা তাঁর কাজ ফের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে৷ আর আমরা দর্শকেরা, আরও দূর যেতে থাকি৷ যত দূর যাওয়া যায় বাস্তবের দিকে, ​তা কেবলই আমাদের কল্পনাকে নস্টালজিক করে৷ হামিদুজ্জামানকে সালাম৷

গ্যালারি অ্যাথেনাতে এখন চলছে শিল্পী হামিদুজ্জামান খানের ‘আর্থলি ট্রেজার্স’ নামে একক শিল্পকর্ম প্রদর্শনী৷ এটি চলবে ৩১ মার্চ পর্যন্ত৷