প্রবাসের কবিতা

.
.

দাউদ হায়দার
পৈতৃক আঙন
গোধূলিগগনে মেঘে ঢেকেছিল তারা,
যুদ্ধ ছাড়াই ধ্বংসাবশেষে বাস
তোমাকে দেখলে মনে হয় আজীবন বাস্তুহারা,
শূন্যতার ভিতরে হিংসতার সন্ত্রাস
প্রণয়বশে কিছুই দেবে না জন্মের দেশ,
কেটে যায় বেলা, সূর্যাস্তে আকাশকুসুমচয়ন
বহমান রক্ত যখন নিঃশেষ
ভস্মের ভিতরে মাতৃভূমি, পৈতৃক আঙন
জার্মানিপ্রবাসী

শামীম আজাদ
আর্তনাদ
রাত দুটো নিরানব্বুই, আমি দারুণ ঘুমার্ত
পারি না পারি না...আর পারি না
জরুরি ভিত্তিতে একটা ঘুমের পুকুর চাই
কে দিবি ঘুম, কে দিবি ঘুম মাখিয়ে চুম, পরিয়ে দিবি ধুন্ধুমার ঘুমের স্লিপার৷
পুকুর না পেলে বাথটাব দে, দে আমার গা চুবিয়ে দে, দে ডুবিয়ে ভাসিয়ে দে
না হলে এক গামলা অথবা এক বালতিই দে, টুপ করে চুব দেব
কিছু না পেলে এক কাপ ঘুমই না হয় দে...
ঘুমার্ত, প্রেমার্ত আর শোকার্ত—সকলেই সমান মহিষ

তাই তোরটাই নিলাম, নিলাম তোদেরটাও
এখন কাছে এসে নির্ঘুম মর, প্রেমার্তনাদে থরথর৷
যুক্তরাজ্যপ্রবাসী

.
.

মজনু শাহ
লেখালেখি
একটা জ্বলন্ত দেবদারু যা যা বলেছিল, হতে পারে তুমি সেসবের অভ্র-ভূমিকা লিখছ মাত্র। দলছুট উটের মতো পেয়েছ প্রবুদ্ধ-ধীরতা।
চাঁদ তবু ঠাট্টা ছুড়ে দেয়, বলে, সময়-হরিণ, আরও কিছু শাদা কালো বেগুনি ধূসর ঠাট্টা লিখো, নব নব কস্মিক–কৌতুক।
তুলোর বিড়াল কোলে নিয়ে বসে থাকি। দেখি তুমি লেখা ভণ্ডুল করে চলে গেছ কখন। বিছানায় বসে বসে বিভ্রমের ট্যাপেস্ট্রির সব মিহি সুতো জড়িয়ে নিচ্ছ আঙুলে। ওদিকে ধুলো-ভরা ট্রেন নিয়ে ফিরে এল ধূলি-সওদাগর। কোথাও একটু পরে শুরু হবে ভয়াবহ রতি।
ইতালিপ্রবাসী

মুজিব ইরম
শ্রীহট্টকীর্তন
এ নগর জানে—কেন আমি একদিন বাড়িছাড়া হই, ঘরহারা হই...হে শ্রীহট্ট নগর, তুমি কেন দিয়েছিলে ডাক? আমার কি আর সাধ ছিল তীর্থযাত্রী হব? তোমার কাছেই আমি শিখিয়াছি কী করে হারাতে হয়, কী করে হতে হয় ভিড়ের মানুষ! আর যারা মিনতি জানায়, পিছু ডাকে—আমি কী রে ফিরিব না আর বালুচরে, টিলাঘরে, সুরমস নগরে! বলিও তাদের কাছে—আমি তো প্রাচীন এক কুয়ার ভিতর আটকে আছি স্বর্ণরঙা মাছ, শেওলা ধরা অন্ধকারে দিয়ে যাচ্ছি রঙের ঝিলিক, কেউ কোথাও পাবে না আর, দূরের নগরে আমি নিখোঁজ মানুষ।
যুক্তরাজ্যপ্রবাসী