ভালোবাসার টানেই বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনীর সঙ্গে যুক্ত হয়েছি : ফকরুল আলম

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অসমাপ্ত আত্মজীবনী ইংরেজিতে অনুবাদ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ফকরুল আলম। ভারত ও পাকিস্তানে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে বইটি। শোকের মাসে এই বই ও তার অনুবাদ নিয়ে কথা বলেছেন বইটির অনুবাদক। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সোহরাব হাসান
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান (১৭ মার্চ ১৯২০—১৫ আগস্ট ১৯৭৫), প্রতিকৃতি: মাসুক হেলাল
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান (১৭ মার্চ ১৯২০—১৫ আগস্ট ১৯৭৫), প্রতিকৃতি: মাসুক হেলাল

সোহরাব হাসান: আপনি কীভাবে বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনীর অনুবাদের সঙ্গে যুক্ত হলেন?
ফকরুল আলম: এ ধরনের একটি উদ্যোগের সঙ্গে যুক্ত হব—আমি আশা করিনি। এটা আমার জন্য বিরাট পাওয়া। কাজটি করার কথা ছিল আরেকজনের। তিনি শুরুও করেছিলেন। কিন্তু হঠাৎ তাঁর মৃত্যু হওয়ায় অনুবাদের কাজটি থেমে যায়। আমার বন্ধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক কাজী শহীদুল্লাহর মাধ্যমে প্রস্তাবটি আমার কাছে আসে। এরপর ২০০৫ সালের শেষ দিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা হয়। তখন তিনি বিরোধী দলের নেত্রী, ধানমন্ডির সুধা সদনে থাকেন। সেখানেই বঙ্গবন্ধুর পাণ্ডুলিপি সম্পাদনা ও কম্পোজের কাজ করা হচ্ছিল। এর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও যুক্ত ছিলেন শামসুজ্জামান খান ভাই ও বেবী মওদুদ আপা। শুনেছি বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ কন্যা শেখ রেহানা মাঝেমধ্যে এ কাজের সঙ্গে যুক্ত হতেন।
এ-ও শুনেছি যে তাঁরা পাণ্ডুলিপি নিয়ে কাজ শুরু করেন ২০০১-২০০২ সাল থেকে। প্রথমে তাঁরা বাংলা পাণ্ডুলিপিটি ঠিকঠাক করে ৩০ পাতা আমাকে পাঠাতেন। সেই ৩০ পাতা অনুবাদ করা হলে পরবর্তী কিস্তি। কখনো কখনো সেখানে গিয়েও আমি কাজ করেছি। পুরো কাজটি করতে গিয়ে অনেক আনন্দ পেয়েছি।
আমি অনুবাদ করার পর তাঁরা আবার বাংলার সঙ্গে মিলিয়ে দেখতেন। এভাবে কাজটি অনেক দূর এগিয়েছিল। তারপর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে শেখ হাসিনা গ্রেপ্তার হলেন। ফলে কাজটিও বন্ধ হয়ে গেল। জেলখানা থেকে ছাড়া পাওয়ার পর নির্বাচন ও রাজনীতিতে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন তিনি। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পরও তাঁকে অনেক বেশি ব্যস্ত থাকতে হয়। তাই বছর খানেক পর আবার কাজটি শুরু হয় এবং ২০১২ সালে অসমাপ্ত আত্মজীবনীর বাংলা ও ইংরেজি—দুই সংস্করণই এক সঙ্গে প্রকাশিত হয়।
সোহরাব: বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আপনার ব্যক্তিগত পরিচয় ছিল কি?

ফকরুল: ষাটের দশকে আমরা যখন ছাত্র, বঙ্গবন্ধুকে দেখেছি। শেখ কামাল আমার বন্ধু ও সহপাঠী ছিল। ১৯৭০ সালের শেষ দিকে কামালই একদিন আমাদের কয়েকজনকে ওদের বাসায় নিয়ে যায় এবং বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আলাপ করিয়ে দেয়। এরপর কামালের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর কয়েকটি জনসভায় গিয়ে তাঁর বক্তৃতাও শুনেছি। পারিবারিক কারণে ১৯৭১-এর ৭ মার্চের সভায় উপস্থিত থাকতে না পারলেও ১০ জানুয়ারির সভায় থাকার সৌভাগ্য হয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনী অনুবাদ করতে গিয়ে আমার বারবার সেসব বক্তৃতার কথা মনে হয়েছে। বঙ্গবন্ধু যে ভাষায় কথা বলতেন, আমার ধারণা, তাঁর লেখার ভাষাটাও ছিল এর কাছাকাছি।
সোহরাব: এর আগে আপনি অনুবাদ করেছেন সাহিত্যের বই। একজন রাজনীতিকের আত্মজীবনীর মেজাজ কি তার থেকে আলাদা নয়?
ফকরুল: অবশ্যই। কিন্তু সাহিত্যের সংজ্ঞাটি যদি আমরা সীমিত পরিসরে ভাবি, তবে সমস্যা আছে। জেলখানায় কিন্তু অনেক মহৎ সাহিত্য রচিত হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী যেমন জেলখানায় বসে লেখা, তেমনি ইংরেজি সাহিত্যের আদি উপন্যাস জন বিনিয়ানের পিলগ্রিমস প্রগ্রেসও রচিত হয়েছে জেলের মধ্যে। এটি স্নাতক পর্যায়ে আমাদের পাঠ্য ছিল। বইটি কিন্তু আলেখ্য হিসেবে লেখা হয়েছিল, উপন্যাস হিসেবে নয়। ইতালির বিখ্যাত বুদ্ধিজীবী আন্তনিও গ্রামসির প্রিজন নোট বইটিও লেখা হয় জেলখানায় বসে। অবিভক্ত ভারতে জওহরলাল নেহরু জেলখানায় বসে যা লিখেছেন, এখন কোথাও কোথাও সেগুলো সাহিত্য হিসেবে পড়ানো হয়।
সাহিত্যের বিভিন্ন ধরন বা শ্রেণি আছে, যার মধ্যে আত্মজীবনী, উপন্যাস, নাটক ও ছোটগল্পকে আমরা একেকটি পরিবার হিসেবে ধরে নিতে পারি। অনুবাদকের কাজ হলো মূল লেখাটির মেজাজ এবং চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য বজায় রাখা। বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনী অনুবাদের সময় আমি সেই দিকটি খেয়াল রেখেছি। বঙ্গবন্ধু অত্যন্ত সহজ-সরল ভাষায় লিখে গেছেন, ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন। উপন্যাস হলে নিশ্চয়ই লিখনশৈলী ভিন্ন হতো।

ফকরুল আলম। ছবি: সুমন ইউসুফ
ফকরুল আলম। ছবি: সুমন ইউসুফ

সোহরাব: অসমাপ্ত আত্মজীবনীর প্রধান বৈশিষ্ট্য কী? এতে কি কোনো ফাঁক দেখেছেন অর্থাৎ কোনো কিছু আড়াল করা বা নিজেকে বড় করে দেখা?
ফকরুল: অনেকে বইটি নিয়ে অনেক রকম প্রশ্ন করেছেন। কেউ কেউ সন্দেহ করেছেন, এটি বঙ্গবন্ধুর লেখা কি না। কিন্তু আপনি যদি বইয়ের গভীরে যান, দেখতে পাবেন, অন্যের পক্ষে এভাবে বর্ণনা করা সম্ভব নয়। তিনি কোনো কিছু লুকাননি। নিজের দুর্বলতার কথাও অকপটে বলেছেন। তিনি যে কখেনা আপোস করেননি সেটিও আত্মজীবনীতে স্পষ্ট। আমি বলব, এটাই এ বইয়ের প্রধান বৈশিষ্ট্য।
সোহরাব: আত্মজীবনীতে একটি সময়কে তুলে ধরা হয়েছে। এই সময়ের কথা অন্যান্য ইতিহাস বই বা জীবনীতেও নানাভাবে এসেছে। এর মধ্যে কোনো পার্থক্য লক্ষ করেছেন কি?
ফকরুল: অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে দেখবেন বঙ্গবন্ধু নিজের অভিজ্ঞতালব্ধ অনেক ছোট ছোট ঘটনা তুলে ধরেছেন। তাঁর খারাপ লাগা ও ভালো লাগার কথা বলেছেন। আবার এখানে তাঁর শ্রেণি, সমাজ ও রাজনীতির বিশ্লেষণ আছে। যেমন পাকিস্তানি শাসকদের অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে, মুসলিম লীগের জমিদার-ভূস্বামীদের বিরুদ্ধে তাঁকে যে লড়াই করতে দেখি, সেটি হয়তো তিনি পারিবারিকভাবেই পেয়েছেন। তাঁর পূর্বপুরুষদের কেউ কেউ ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন। এক জায়গায় তিনি লিখেছেন, যাঁরা পাকিস্তান আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, বেশির ভাগই ভূস্বামী-জমিদার। তাঁরা সাধারণ মানুষের দুঃখ-কষ্ট বোঝেন না। রংপুরে যে নেতার বাড়িতে তিনি একটি বার্তা নিয়ে গিয়েছিলেন, ভদ্রলোক তাঁকে বসতে পর্যন্ত বলেননি। তাঁদের এতটা অহমিকা ছিল।
আরেকটি ঘটনা দেখুন। তখন এক অঞ্চলের কৃষক অন্য অঞ্চলে গিয়ে কাজ করলেও সেখান থেকে নিজের বাড়িতে ধান নিয়ে যেতে পারতেন না। এক জেলা থেকে আরেক জেলায় ধান আনা-নেওয়ার ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ ছিল। বঙ্গবন্ধু তখন তরুণ নেতা, সরকারের উচ্চ মহলে দেনদরবার করে সেই আইনটি বাতিল করিয়েছিলেন। এতেই বোঝা যায় কৃষকের প্রতি তাঁর ভালোবাসা কত গভীর ছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের আন্দোলনের সঙ্গে কীভাবে তিনি যুক্ত হয়েছিলেন, তাঁর বিশদ বর্ণনা আছে বইটিতে।
আবার এই আত্মজীবনীতেই আছে বঙ্গবন্ধুর নান্দনিক চেতনার প্রকাশ। একটি জায়গায় লিখেছেন, ‘নদীতে বসে আব্বাসউদ্দীন সাহেবের ভাটিয়ালির গান তাঁর নিজের গলায় না শুনলে জীবনের একটি দিক অপূর্ণ থেকে যেত। তিনি যখন আস্তে আস্তে গাইছিলেন তখন মনে হচ্ছিল, নদীর ঢেউগুলোও যেন তাঁর গান শুনছে।’ অথবা আগ্রার তাজমহল ও আজমির শরিফের যে বর্ণনা দিয়েছেন, তা অসাধারণ। পুরো বইটিতে বঙ্গবন্ধুর গল্প বলার অসাধারণ ক্ষমতা দেখতে পাই। আমার মনে হয়, বক্তৃতা দেওয়ার মতো লেখার বিষয়টিও তিনি সহজে আয়ত্তে আনতে পেরেছিলেন।

অসমাপ্ত আত্মজীবনীর ইংরেজি অনুবাদ
অসমাপ্ত আত্মজীবনীর ইংরেজি অনুবাদ
বঙ্গবন্ধু যে ভাষায় কথা বলতেন, আমার ধারণা, তাঁর লেখার ভাষাটাও ছিল এর কাছাকাছি

সোহরাব: আত্মজীবনীতে শেখ মুজিব সমকালীন অন্যান্য রাজনীতিককে যেভাবে চিত্রিত করেছেন, সেটি কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?

ফকরুল: আত্মজীবনীতে বঙ্গবন্ধু তাঁর সমসাময়িক কোনো নেতাকে অকারণে খাটো করেছেন বলে মনে হয়নি। তিনি তাঁদের দুর্বলতা-সফলতা দুটোই তুলে ধরেছেন। তবে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর প্রতি একধরনের পক্ষপাত ছিল। কেননা, তিনি তাঁর গুরু ও নেতা ছিলেন। শেখ মুজিবুর রহমান শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হকের বিরুদ্ধে রাজনীতি করতেন। কিন্তু কখনো তাঁকে অসম্মান করেননি। তাঁর বাবা তাঁকে হক সাহেব সম্পর্কে বিরূপ কিছু বলতে নিষেধ করেছিলেন, কথাটি তিনি মনে রেখেছেন।
সোহরাব: আপনার অনুবাদে অসমাপ্ত আত্মজীবনী ভারত ও পাকিস্তান উভয় দেশ থেকে বেরিয়েছে। সেখানকার পাঠকেরা কীভাবে নিয়েছেন, কীভাবে মূল্যায়ন করছেন?
ফকরুল: ভারত ও পাকিস্তানের পাঠকেরা বইটি মূল্যায়ন করেছেন নিজ নিজ অবস্থান থেকে। ভারতের পাঠকেরা তাঁদের রাষ্ট্রীয় স্বার্থের আলোকে দেখেছেন, আর পাকিস্তানের পাঠকেরা দেখেছেন তাঁদের স্বার্থের আলোকে। যেমন দেশভাগের ঘটনাটি পাকিস্তান ও ভারত একই দৃষ্টিতে দেখবে না। পাকিস্তানের সাংবাদিক হামিদ মির বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনী দিয়ে প্রমাণ করতে চেয়েছেন যে তিনি পাকিস্তান ভাঙতে চাননি। পশ্চিম পাকিস্তানি নেতারা পূর্ব পাকিস্তানের মানুষকে বঞ্চিত করে পাকিস্তান ভাঙার পথ প্রশস্ত করেছেন। এটি একদিক থেকে ঠিক, আরেক দিক থেকে দেখলে ঠিক নয়। সেই পঞ্চাশের দশকেই বঙ্গবন্ধু বুঝেছিলেন, পাকিস্তানি নেতারা বাংলাদেশের ন্যায্য প্রাপ্য দেবেন না। সেটি ভাষার ক্ষেত্রে যেমন সত্য, তেমনি অর্থনৈতিক অধিকারের ক্ষেত্রেও।
সোহরাব: পাকিস্তান ও ভারতে বইটি কেমন বিক্রি হয়েছে?
ফকরুল: পাকিস্তানে বইটি সর্বোচ্চ বিক্রির তালিকায়। আর ভারত থেকে পেঙ্গুইন যেটি প্রকাশ করেছে, তার বাজার ভারত ছাড়িয়ে অন্যান্য ইংরেজি ভাষাভাষী দেশেও পৌঁছেছে। ফলে বিক্রির সঠিক পরিসংখ্যান জানা কঠিন। তবে বইটি গুগল ও আমাজান বুকের ওয়েবসাইটে দেওয়ায় ধারণা করি, বিশ্বের অন্যান্য দেশেও এর চাহিদা আছে।
সোহরাব: বইটি প্রকাশের প্রক্রিয়া বেশ দীর্ঘ হওয়ার কারণ কী?
ফকরুল: বিদেশে বই প্রকাশের ক্ষেত্রে অনেক নিয়মকানুন আছে। প্রথমে ইউপিএল পেঙ্গুইনের সঙ্গে যোগাযোগ করে। পেঙ্গুইনের নিজস্ব রিভ্যুয়ার আছেন। কোনো পাণ্ডুলিপি পাওয়ার পর সংস্থাটি প্রথমে তাঁদের কাছে পাঠান। রিভ্যুয়ার পাণ্ডুলিপি অনুমোদন করলে সেটি পাঠানো হয় সম্পাদকদের কাছে। তাঁরা দেখে সংশোধনসহ আবার পাণ্ডুলিপিটি পাঠান লেখক বা অনুবাদকের কাছে। অনেক সময় লেখকের সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবেও কথা বলেন তাঁরা। এতে বেশ সময় লাগে। পেঙ্গুইনের একজন কপি এডিটরও ঢাকায় এসেছিলেন। এ ছাড়া বইটি পড়ে দেখবেন অসংখ্য চরিত্র ও ঘটনার সমাবেশ। এসব চরিত্রের অনেকে হারিয়ে গেছেন। বইয়ের নির্ঘণ্ট তৈরিতে তাই বেশ সময় লেগেছে। এ নিয়ে ইউপিএলকে অনেক পরিশ্রম করতে হয়েছে।
সোহরাব: অসমাপ্ত আত্মজীবনী অনুবাদ করতে গিয়ে আপনার কী অনুভূতি হয়েছে। এর মধ্যে কি নিছক একজন রাজনীতিবিদকে পেয়েছেন, না তার অতিরিক্ত কিছু?
ফকরুল: বইটি অনুবাদ করতে গিয়ে মনে হয়েছে, পরবর্তীকালে তিনি যে বঙ্গবন্ধু হয়েছেন, তার প্রস্তুতিটা তখনই ছিল। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণকে আমরা মাইলফলক হিসেবে ধরে নিই। কিন্তু এই ভাষণে তিনি পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে যে শোষণ ও বঞ্চনার কথা বলেছেন, সেসব আগের সভা-সমাবেশেও বলেছেন।
আমরা একটি বইকে বিভিন্নভাবে দেখতে পারি। পশ্চিমা সাহিত্যে যেটিকে আমরা বিল্ডুগস রোমান হিসেেব জানি—যেমন জেমস জয়েসের পেট্রেট অব দ্য আর্টিস্ট অ্যাজ আ ইয়ংম্যান, অথবা কুনসটেল রোমান— অ্যােপ্রন্টিস নোবেল বা রাজনীতির নায়কের বড় হওয়ার গল্প। আমরা বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনীকে দেখতে পারি জাতির পিতার প্রতিকৃতি হিসেবে, যখন তিনি তরুণ ছিলেন। দেখতে পারি বাংলাদেশের ইতিহাসের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পর্বের প্রতিচ্ছবি হিসেবে। একজন বীরোচিত ব্যক্তিত্ব, একজন পুত্র, একজন স্বামী, একজন পিতা এবং আমাদের জািতর পিতার মনোগ্রাহী বর্ণনা হিসেবেও এটাকে আমরা দেখতে পারি।
বইটির কাজ করতে গিয়ে আমি নিরন্তর রোমাঞ্চিত হয়েছি। এটি ছিল আমার জন্য বড় সুযোগ। কাজটি করে আমি প্রভূত আনন্দ পেয়েছি। ভালোবাসার টানেই আমি বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনীর সঙ্গে যুক্ত হয়েছি।
সোহরাব: অসমাপ্ত আত্মজীবনী প্রকাশের সময়েই জানা গিয়েছিল বঙ্গবন্ধুর আরও কিছু পাণ্ডুলিপি আছে—কিছুটা ডায়েরি, কিছুটা স্মৃতিকথা আকারে। শুনেছি সেগুলো বের করার প্রস্তুতি চলছে।
ফকরুল: বঙ্গবন্ধুর কোনো কাজের সঙ্গে থাকার প্রস্তাব পেলে আমি অবশ্যই সাগ্রহে তা করব।