মিয়ানমারের জাতীয় ঐক্যের সরকার নামে পরিচিত ‘বিকল্প সরকার’ দেশটিতে আন্তর্জাতিক অপরাধের বিচারের প্রশ্নে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) এখতিয়ার মেনে নেবে। মিয়ানমারের জাতীয় ঐক্যের সরকারের (এনইউজি) ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট দুয়া লাশি লা এ নিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) রেজিস্ট্রারের কাছে এক আবেদনে জানিয়েছেন, রোম সনদ অনুযায়ী মিয়ানমারে ২০০২ সালের পয়লা জুলাই থেকে যে সব আন্তর্জাতিক অপরাধ হয়েছে সে বিষয়ে আদালতের এখতিয়ার মেনে নেবে।
এনইউজি আজ শুক্রবার সন্ধ্যায় তাদের টুইটে এ সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে।
মিয়ানমারের বিকল্প সরকার যে সময়কাল থেকে দেশে আন্তর্জাতিক অপরাধ মেনে নেওয়ার সময়সীমার উল্লেখ করেছে তার মধ্যে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে রাখাইন থেকে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা ঢল অন্যতম। এর মধ্যেই রাখাইনের ওই নৃশংসতাকে সাম্প্রতিক ইতিহাসের অন্যতম ভয়াবহ গণহত্যা হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে। রোহিঙ্গা গণহত্যার অপরাধে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) মিয়ানমারের বিপক্ষে মামলা দায়ের করেছে আফ্রিকার দেশ গাম্বিয়া। ইসলামী সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) পক্ষে দেশটি ওই মামলা করেছে।
প্রসঙ্গত মিয়ানমার এখন পর্যন্ত রোম সনদ সই করেনি। ফলে রাখাইন থেকে রোহিঙ্গাদের ২০১৭ সালের আগস্টে বিতাড়নের মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ হয়েছে কী না তা নিয়ে তদন্ত করছে আইসিসি। যদিও আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের এখতিয়ার নিয়ে আপত্তি দিয়েছে মিয়ানমার। দেশটির যুক্তি হচ্ছে রোম সনদের পক্ষ না হওয়ায় আইসিসির এ তদন্ত পরিচালনার কোনো সুযোগ নেই। মিয়ানমারের যুক্তি খণ্ডন করে আইসিসি বলেছে, রোহিঙ্গাদের বিতাড়নের পর তারা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। আর রোম সনদে সাক্ষরকারী দেশ বাংলাদেশ আইসিসির উদ্যোগকে সমর্থন করায় দ্য হেগ ভিত্তিক ওই আদালত তদন্ত শুরু করেছে।
মিয়ানমারের আন্তর্জাতিক অপরাধে আইসিসির এখতিয়ার নিয়ে দেশটির জাতীয় ঐক্যের সরকার বলেছে, রোম সনদের ১২ (৩) ধারা অনুযায়ী আইসিসির পক্ষ না হলেও একটি দেশের আদালতের এখতিয়ার মেনে নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে মতামত চেয়ে এনইউজি গত ১৭ জুলাই আদালতে আবেদন জানিয়েছে।
মিয়ানমারের জাতীয় ঐক্যের সরকার বলেছে, তারা দেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের জবাবদিহি ও বিচারহীনতার সংস্কৃতির অবসান চায়। মিয়ানমারের সেনাবাহিনী এখন যে সব নারকীয় নৃশংসতা চালাচ্ছে সে বিষয়ে জাতীয় ঐক্যের সরকার অব্যাহতভাবে তা সবার সামনে আনবে। এর পাশাপাশি অতীতের সবগুলো অপরাধের বিচার চাইবে। আন্তর্জাতিক সহযোগিতা এবং আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলার মাধ্যমে দেশের ভবিষ্যৎ নির্মাণের স্বার্থে জাতীয় ঐক্যের সরকার নিরলসভাবে কাজ করে যাবে।