
ঢাকার আশুলিয়ার ধামসোনা ইউনিয়নের অন্তত ১০টি গ্রামকে শহর থেকে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে বংশী নদী। যাতায়াত ও পণ্য পরিবহনের জন্য এসব গ্রামের অধিকাংশ মানুষের ভরসা বাঁশের তিনটি সাঁকো।
ধামসোনা ইউনিয়নের পাইচাইল থেকে মাইঝাইল পর্যন্ত সড়কের মাইঝাইল এলাকায়, নলাম থেকে ধামসোনা পর্যন্ত সড়কের গোপালবাড়ি এলাকায় এবং শ্রীপুর থেকে গোপালবাড়ি পর্যন্ত সড়কের কন্ডা এলাকায় বংশী নদীর ওপর তিনটি বাঁশের সাঁকো আছে। পাঁচ ফুট প্রশস্ত ও ২০০ ফুট থেকে সাড়ে ৩০০ ফুট দীর্ঘ এসব সাঁকো নির্মাণে ব্যয় হয়েছে অন্তত ১০ লাখ টাকা। নদীর দুই কিলোমিটারে সাঁকো তিনটির অবস্থান।
ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) সূত্রে জানা গেছে, বর্ষায় পাইচাইল, মাইঝাইল, ধামসোনা, গোপালবাড়ি, কন্ডা, উনাইল, সুবন্দি, মধুপুর, বড়টেকসহ আশপাশের গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ নৌকায় নদী পারাপার হয়ে থাকে। নৌকায় পণ্য পরিবহনসহ ছোট যানবাহন (ইজিবাইক ও মোটরসাইকেল) ও রিকশা চলাচলে সমস্যার কারণে প্রতিবছর বর্ষার পর অগ্রহায়ণ মাসে সাঁকো নির্মাণ করে দেওয়া হয়। কিন্তু বর্ষা শুরু হলে জ্যৈষ্ঠ মাস নাগাদ পানির তোড়ে ওই সব সাঁকো ভেসে যায়। তখন সেসব স্থানে আবার খেয়া পারাপারের ব্যবস্থা করা হয়। বছরের পর বছর সাঁকোর পেছনে মোটা অঙ্কের অর্থ অপচয় হচ্ছে।
নলাম থেকে ধামসোনা পর্যন্ত সড়কের গোপালবাড়ি এলাকায় উচ্চবিদ্যালয়, মাদ্রাসা ও প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ১০০ গজ দূরেই বংশী নদীর ওপর বাঁশের সাঁকো।
গোপালবাড়ি নবীন প্রগতি উচ্চবিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্র আরিফুল ইসলাম, সোহাগ হোসেনসহ আরও কয়েকজন শিক্ষার্থী বলে, তাদের বিদ্যালয়সহ তিনটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অন্তত এক হাজার শিক্ষার্থী আছে। নদীর ওপর পাকা সেতু না থাকায় তাদের ঝুঁকি নিয়ে খেয়া পার অথবা সাঁকো পার হতে হয়। তারা বলে, বর্ষায় স্কুল ছুটির পর অনেক শিক্ষার্থী পার হওয়ার জন্য খেয়াঘাটে আসে। ছোট নৌকার কারণে তারা একসঙ্গে পার হতে পারে না। এক থেকে দেড় ঘণ্টা করে ঘাটেই অপেক্ষা করতে হয় তাদের। অনেক সময় মানুষের ভারে নৌকাডুবিও হয়। আর সাঁকোয় পণ্যবোঝাই রিকশাভ্যান ও ইজিবাইক উঠে গেলে উভয় পাশে মানুষদের অপেক্ষা করতে হয় অথবা ঝুঁকি নিয়ে এক কোণে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়।
ধামসোনা বাজারের ব্যবসায়ী চান মিয়া বলেন, রাজধানীর পাশের এলাকার বাসিন্দা হয়েও সেতুর অভাবে বাজারের ব্যবসায়ীদের পণ্য পরিবহনে ভোগান্তির শিকার হতে হয়। মাইঝাইল গ্রামের কৃষক রুবেল মিয়া বলেন, কৃষকদের উৎপাদিত পণ্য বিক্রির জন্য কাছের হাট হচ্ছে ধামরাই। বাঁশের সাঁকো আর নৌকায় এসব পণ্য পার করতে একদিকে যেমন ভোগান্তিতে পড়তে হয়, তেমনি খরচও বেশি হয়।
ধামসোনা ইউপির ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য হাবিবুর রহমান বলেন, এলাকার মানুষের ভোগান্তির কারণ বাঁশের সাঁকো আর খেয়া। এরপরও নদীর ওপর সেতু নির্মাণে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না। তিনি বলেন, সাঁকোর পেছনে প্রতিবছর অন্তত ১০ লাখ টাকা ব্যয় হয়। এ পর্যন্ত সাঁকো নির্মাণ বাবদ যে টাকা অপচয় হয়েছে, তা দিয়ে কয়েকটি সেতু নির্মাণ করা যেত।
ধামসোনা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘বছরখানেক হয় আমি দায়িত্ব পেয়েছি। এরপর থেকে নদীর ওপর সেতু নির্মাণের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে যোগাযোগ করে যাচ্ছি।’
জানতে চাইলে সাভারের ইউএনও আবু নাসের বেগ গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, ‘বংশী নদীর তিন সাঁকোর জায়গায় বড় সেতু নির্মাণ করতে হবে। এ বিষয়ে আমরা এলজিইডির ঢাকা কার্যালয় ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করব।’