এইচআইভি এইডসে মৃত্যু আর নয় একটিও

৮ ডিসেম্বর ২০১৫, প্রথম আলোর আয়োজনে ‘এইচআইভি এই​ডসে মৃত্যু আর নয় একটিও’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত আলোচকদের বক্তব্য সংক্ষিপ্ত আকারে ছাপা হলো এই ক্রোড়পত্রে।

সূত্র: এনএএসপি/ইউএনএইডস ২০১৪
সূত্র: এনএএসপি/ইউএনএইডস ২০১৪

আলোচনায় সুপারিশ
* জ্বর, কাশি, পাতলা পায়খানা, দুর্বলতা, দ্রুত ওজন কমলে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গিয়ে পরীক্ষা করতে হবে
* ২০৩০ সালের মধ্যে এইডসমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে হলে চিকিৎসার সুযোগ–সুবিধা অনেক বাড়াতে হবে
* এইচআইভি সংক্রমণ রোধে গণমাধ্যম ব্যাপক ভূমিকা রাখতে পারে
* এইচআইভি নির্মূলের বিশেষ লক্ষ্য পূরণ করতে হলে অবশ্যই ঘরোয়া বাজেট বাড়াতে হবে
* সামাজিক বৈষম্য, কুসংস্কারের জন্য সবাই পরীক্ষা করান না। যেকোনো মূল্যে এটা দূর করা প্রয়োজন।
* পার্শ্ববর্তী সব দেশেই এইডসের প্রকোপ বেশি, এ ক্ষেত্রে সতর্ক হতে হবে

আলোচনা
আব্দুল কাইয়ুম: বাংলাদেশে এইচআইভি-এইডস প্রতিরোধে সরকারের পাশাপাশি স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বেসরকারি সংস্থাগুলো কাজ করছে। এইচআইভি আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য প্রয়োজনীয় সরকারি চিকিৎসার সুযোগ-সুবিধা এখনো কম। বেসরকারি কিছু সংস্থার মাধ্যমে রোগীদের সেবা দেওয়া হলেও তা যথেষ্ট নয়। এ অবস্থায় এইডসের প্রতিকার ও প্রতিরোধ কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার তথ্যমতে, বাংলাদেশে এইচআইভি-এইডস আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা আট হাজারেরও বেশি। আবার কোনো কোনো সংস্থার দাবি, এ সংখ্যা ১১ হাজার। এইচআইভি আক্রান্ত ব্যক্তিদের অনেকেই ঘৃণার চোখে দেখে বলে আক্রান্ত ব্যক্তি রোগের কথা গোপন রাখেন। ফলে সহজে রোগ ছড়ায়।
অনেকেই জানেন না, সরাসরি রক্তের সংক্রমণ ছাড়া শুধু ছোঁয়া বা হাঁচি-কাশিতে এইডস ছড়ায় না। তাই ঘৃণা নয়, এইডস রোগীদের জন্য দরকার সুচিকিৎসা। এ সম্পর্কে সমাজে ব্যাপক সচেতনতা সৃষ্টি এবং দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন জরুরি।

কামরুল হাসান খান
কামরুল হাসান খান

কামরুল হাসান খান: বাংলাদেশে ১৯৮৯ সালে প্রথম এইডস রোগী পাওয়া যায়। সেখানে বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে আমরা এইডসকে রুখতে পেরেছি, অবস্থা তেমন ভয়াবহ নয়। প্রায় এক কোটি লোক দেশের বাইরে কাজ করার পরেও কিন্তু আমাদের ভীতিকর অবস্থা নয়। এ জন্য সরকারসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সামাজিক উদ্যোগের বড় ভূমিকা আছে।
কিন্তু এখনো চিকিৎসক থেকে সাধারণ মানুষের মধ্যে এইডস সম্পর্কে একধরনের আতঙ্ক আছে, এটা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। মনে রাখতে হবে, এটা কোনো ছোঁয়াচে রোগ নয়। এইডস রোগীকে সমাজের মূলধারায় নিয়ে আসতে হবে।
বঙ্গবন্ধু হাসপাতালে ইউনিসেফের সহায়তায় ‘প্রিভেনশন অব মাদার টু চাইল্ড ট্রান্সমিশন অব ইনফেকশন’ শিরোনামে একটি প্রোগ্রাম চলছে। এর আওতায় ৩১ মাসে ২৬ জন এইডস আক্রান্ত গর্ভবতী মা চিকিৎসার আওতায় এসেছেন। আমাদের কাজ হচ্ছে মায়ের কাছ থেকে শিশুর যাতে সংক্রমণ না হয়, সেটি দেখা।
ওষুধ খাওয়ার ফলে বাচ্চার মধ্যে আর ভাইরাস যাচ্ছে না। এতে ভালো ফলাফল পাওয়া গেছে। মা সংক্রমিত কিন্তু বাচ্চা সুস্থ। এই যে কর্মসূচি বা অর্জন তা বেশ আশাব্যঞ্জক। কিন্তু এইডস রোগীর চিকিৎসা খরচের চেয়ে প্রোগ্রামগুলো চালিয়ে যাওয়াই চ্যালেঞ্জ হিসেবে দাঁড়িয়েছে।
এইডসের চিকিৎসার চেয়ে প্রতিরোধ গুরুত্বপূর্ণ। এ জন্য সচেতনতা জরুরি, পাশাপাশি আক্রান্তদের চিকিৎসার আওতায় আনতে হবে। কতগুলো লক্ষণ যেমন: জ্বর, কাশি, পাতলা পায়খানা, দুর্বলতা, দ্রুত ওজন কমলে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গিয়ে পরীক্ষা করতে হবে। এটা জানার জন্য প্রচার দরকার। এ ক্ষেত্রে গণমাধ্যম অনেক বড় ভূমিকা রাখতে পারে।
আমাদের একটি দুর্বলতা হলো, আমাদের কাছে সঠিক তথ্য নেই। তা ছাড়া বাজেট বড় একটি বাধা হিসেবে কাজ করে বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়নে। সরকার থেকে শুরু করে সামাজিক শক্তিগুলো যে কাজ করছে, তা অবশ্যই প্রশংসার যোগ্য। তবে এগুলো সঠিকভাবে তদারক করা দরকার।
দাতা সংস্থা তাদের বিনিয়োগ কাটছাঁট করতে পারে, কিন্তু সরকার পারে না। তাদের বাজেট বাড়াতে হবে। স্বাস্থ্য খাতে বাজেট মাত্র ৪ দশমিক ৪ শতাংশ কিন্তু কমপক্ষে ১০ শতাংশ বাজেট দরকার। এ ছাড়া এসব ইস্যু নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোও কাজ করতে পারে। বিভিন্ন কর্মসূচিতে এসব প্রোগ্রাম অন্তর্ভুক্ত করতে পারলে ব্যাপক জনগোষ্ঠী রোগটি সম্পর্কে জানতে পারবে, সচেতন হতে পারবে।
এইচআইভি রোগীকে একধরনের অপরাধী হিসেবে সমাজে দেখা হয়, ফলে তার মধ্যে ভীতি কাজ করে। এ জায়গা থেকে তাকে বের করে আনতে হবে। মনে রাখতে হবে, শুধু অনৈতিক যৌনমিলনের মাধ্যমেই এ রোগ ছড়ায় না। অন্য অনেকভাবেও ছড়াতে পারে। এ জন্য সমাজকে এইডস রোগীর প্রতি বাস্তবসম্মত মনোভাব গ্রহণে প্রস্তুত করতে হবে।
বঙ্গবন্ধু হাসপাতালে আমরা কিন্তু সে ধরনের পরিবেশ তৈরি করতে সক্ষম হয়েছি। এখানে রোগীদের প্রতি কোনো ধরনের বৈষম্যমূলক আচরণ করা হয় না। তাদের অন্য রোগীর মতোই সেবা দেওয়া হয়।

আসমা পারভীন
আসমা পারভীন

আসমা পারভীন: বিশ্বব্যাপী এইডস নির্মূলের অঙ্গীকারের সঙ্গে বাংলাদেশ একাত্মতা প্রকাশ করেছে। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার অংশ হিসেবে বাংলাদেশও ২০৩০ সালের মধ্যে এইডসমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে চায়। আজকের এই গোলটেবিল আলোচনা এ ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা রাখবে বলে আশা করি।
ইউএনএফপিএ ও আশার আলো সোসাইটি এইডসমুক্ত বাংলাদেশের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। ২০১৫ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে এইচআইভি পজিটিভ ব্যক্তির সংখ্যা ৪ হাজার ১৪৩। কিন্তু ইউএনএইডসের ২০১৪ সালের ধারণা মতে, বাংলাদেশে এইচআইভি পজিটিভের সংখ্যা ৮ হাজার ৯০০।
২০১৫ সালে এইচআইভি আক্রান্ত হয়েছে ৪৬৯ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৩৪৪ জন। নারী ১১৭ জন। হিজড়া জনগোষ্ঠী ৮ জন। ২০১৫ সালে ৪৬৯ জন এইচআইভি আক্রান্তের মধ্যে ১৪০ জনই অভিবাসী। অভিবাসীদের জন্য সরকারের নির্দিষ্ট কোনো এইডস প্রতিরোধ কার্যক্রম নেই। এ ক্ষেত্রে জরুরি উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।
এ পর্যন্ত বাংলাদেশে এইডসে মোট মৃত্যু হয়েছে ৬৫৮ জনের। এর মধ্যে ২০১৫ সালেই মৃত্যু হয়েছে ৯৫ জনের। দেশে সরকারি ১৬টি ও বেসরকারি ৭৫টি এইচআইভি পরীক্ষা কেন্দ্র রয়েছে। এ পর্যন্ত পরীক্ষার আওতায় এসেছে ৬৭ হাজার ৮৬৯ জন। বর্তমানে সরকারি অনুদানে এআরটি সেবা পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু আক্রান্ত ব্যক্তিদের প্রয়োজনীয় বিভিন্ন পরীক্ষা যেমন: সিডি-৪ সেল, ভাইরাল লোড, ওষুধের কার্যকারিতা নিরীক্ষা ইত্যাদির সুযোগ খুবই কম।
২০৩০ সালের মধ্যে এইডসমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে হলে চিকিৎসার সুযোগ–সুবিধা অনেক বাড়াতে হবে। দেশে অনেক নারী অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে এইডসে জড়িয়ে পড়ছেন। তাঁদের সেবার ক্ষেত্রেও কোনো ধরনের তদারক বা গুরুত্ব নেই। যেমন আশার আলো সোসাইটির কার্যক্রমে দেখা যায়, অনেক পুরুষ নিয়মিত সেবাকেন্দ্রে আসছেন, সেবা নিচ্ছেন কিন্তু তাঁর স্ত্রী, যিনি তাঁরই মাধ্যমে সংক্রমিত হয়েছেন, তাঁর চিকিৎসার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না। আবার অন্যায়ভাবে তাঁকেই সংক্রমণের জন্য দায়ী করা হচ্ছে। আমরা মনে করি, নারীদের অবশ্যই এইচআইভি চিকিৎসাসেবার সঙ্গে যুক্ত করা জরুরি। তাঁদের এআরটি সেবা, প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও ভাইরাল লোড নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
মা থেকে শিশুর যেন এইচআইভি না হয় সেটা লক্ষ রাখতে হবে। প্রয়োজনীয় আর্থিক, সামাজিক ও আইনি সেবার ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। সর্বোপরি তাঁরা যেন কোনো প্রকার অপবাদ ও বৈষম্যের শিকার না হন, এ বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখতে হবে।

সালেহ আহমেদ
সালেহ আহমেদ

সালেহ আহমেদ: পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশে এইচআইভি আক্রান্ত রোগীর মৃত্যুর হার কমেছে। কিন্তু ইউএনএইডসের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে দেখা যায়, এশিয়া অ্যান্ড প্যাসিফিক রিজিয়নের প্রতিটি দেশে এইচআইভি সংক্রমণের হার কমলেও থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন ও বাংলাদেশে বেড়েছে। এইচআইভি নিয়ে আমরা গতানুগতিকভাবে যে কাজ করছি সেটা করলে হবে না, আমাদের পরিকল্পনা করে কাজ করতে হবে। ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্ব এইচআইভি সংক্রমণ-মুক্ত হতে চায়। এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে কাজের ধরনে পরিবর্তন আনতে হবে।
এইচআইভি প্রতিরোধে এত দিন ধরে যে কৌশল ব্যবহার করছি, সময় এসেছে তা বদলানোর। মানুষের কাছে তথ্য পৌঁছাতে হলে প্রযুক্তির ওপর নির্ভর করতে হবে। সময়ের সঙ্গে আমরা অনেক কিছু বদলিয়েছি। কিন্তু এইচআইভি প্রতিরোধের কৌশল বদলায়নি।
বিষেশ লক্ষ্য অর্জন করতে হলে বিশেষ কৌশলে কাজ করতে হবে। অথচ ক্রমান্বয়ে এইচআইভি প্রোগ্রামের বাজেট ছোট হয়ে আসছে। এইচআইভি নির্মূলের বিশেষ লক্ষ্য পূরণ করতে হলে অবশ্যই দেশীয় বাজেট বাড়াতে হবে।
সরকার ও দেশে যাঁরা এইচআইিভ নিয়ে কাজ করছেন, তাঁদের সবার মধ্যে সমন্বয় খুব জরুরি। পাশাপাশি গণমাধ্যম এইচআইভি বিষয়ে সাধারণ মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনে ভূমিকা রাখতে পারে।

এম জিয়া উদ্দিন
এম জিয়া উদ্দিন

এম জিয়া উদ্দিন: এসডিজিতে (টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা) তিন নম্বর লক্ষ্যমাত্রা হলো সুস্থ জীবন নিশ্চিত করা। সব বয়সী মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন করা। এ বিষয়গুলো নিশ্চিত করতে হলে এসডিজিতে আলাদাভাবে এইচআইভির উল্লেখ না থাকলেও এটি নিয়ে কাজ করতে হবে।
২৬ বছর আগে প্রথম এ দেশে এইচআইভি চিহ্নিত করা হয়েছে, সেখান থেকে আমরা এখানে এসেছি। এখন কল্পনা করা সম্ভব নয়, এর জন্য কত কাজ করতে হয়েছে। এ অর্জন ধরে রাখতে হবে। ২০৩০ সালের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য শক্তিশালী রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি দরকার। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন, যেখানে আমরা বেশ দুর্বল।
বাংলাদেশে এইচআইভি নিয়ে কাজ করার অনেক বিশেষজ্ঞ রয়েছেন। তাঁরা জানেন কোথায় কাজ করতে হবে। আমাদের দরকার একটি গোছানো পরিকল্পনা। কিন্তু এখানেও আমাদের দুর্বলতা রয়েছে।
বলা যায়, আর্থিক বাজেটস্বল্পতার কারণে এইচআইভি প্রোগ্রাম অনেকটা সংকটের সম্মুখীন। এইচআইভি প্রোগ্রামে

বিদেশের আর্থিক সহায়তা অনেকটা কমে এসেছে, এখন সরকারকে এখানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে হবে। আমাদের অনেক ভালো উদ্যোগ অর্থসংকটের কারণে বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না। তবে নজরদারি অবশ্যই ধরে রাখতে হবে।

এ এস এম হাবিবুল্লাহ চৌধুরী
এ এস এম হাবিবুল্লাহ চৌধুরী

এ এস এম হাবিবুল্লাহ চৌধুরী: বাংলাদেশে এইডসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা কম। এর একটি কারণ হতে পারে, যাঁরা আক্রান্ত তাঁদের সবাইকে চিহ্নিত করতে পারিনি। আবার এইচআইভি পরীক্ষার সুযোগও কম। অভিবাসীদের থেকে এইডস বেশি ছড়াচ্ছে। আমাদের পার্শ্ববর্তী সব দেশই অনেক ঝুঁকিপূর্ণ। দেশে দিন দিন মাদক নেওয়ার হারও বাড়ছে। নিরাপদ যৌনাচার কমে যাচ্ছে।
অনেক সংগঠন ২০ বছর ধরে এইচআইভি নিয়ে কাজ করছে। এদের প্রচেষ্টায় বাংলাদেশে এইচআইভি এখনো নিয়ন্ত্রণে আছে। কিন্তু এ জন্য কোনো কর্মীকে কখনো সাধুবাদ বা উৎসাহ দেওয়া হয়নি।
আমরা মূলত কাজ করি যুব সম্প্রদায় নিয়ে, যাদের বয়স ১০ থেকে ২৪ বছর। এদের মধ্যে রয়েছে ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠী যেমন: পথবাসী, হিজড়া, সেক্স ওয়ার্কার ইত্যাদি। বিভিন্ন জায়গায় এইচআইভি পরীক্ষা করার ক্ষেত্রে অনেক ধরনের বিড়ম্বনার শিকার হতে হয়, তাদের অন্যদের থেকে আলাদাভাবে দেখা হয়। এ জায়গায় ওয়ান স্টপ সার্ভিসের ব্যবস্থা করা জরুরি।
আমাদের আরেকটি জায়গায় কাজ করা উচিত। তা হলো, এইডস নিয়ে আমরা যেন মানুষের মধ্যে ভয়ের জায়গা তৈরি না করি। এইডসে মারা গেলে বলি এইডসে মারা গেছে। কিন্তু আমরা বলি না ডায়াবেটিসে মারা গেছে বা অন্য কোনো রোগে মারা গেছে।
অন্যান্য রোগীকে আমরা যেভাবে দেখি, এইডস রোগীকে যেন সেভাবে দেখা হয়। সরকার থেকে শুরু করে সব পর্যায়ে ১৮ বছরের নিচে শিশুদের জন্য বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন। কারণ এ বয়সে বিভ্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি তুলনামূলক বেশি। তাই তাদের সচেতনতা খুব দরকার।

জয়া সিকদার
জয়া সিকদার

জয়া সিকদার: খুব বেশিদিন হয়নি বাংলাদেশে হিজড়াদের নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। ১৯৯৯-২০০০ সালের দিকে ঢাকাকে কেন্দ্র করে প্রথম কাজ শুরু হয়। এরপর চট্টগ্রামসহ কয়েকটি বড় শহরে কাজ শুরু হয়। ২০১০ সালের দিকে আইসিডিডিআরবি সারা দেশে এদের সচেতন করার কাজ শুরু করে ব্যাপকভাবে। এই পাঁচ বছরে কতটুকু কাজ করা সম্ভব। এর মধ্যেই শোনা যাচ্ছে তহবিল–সংকটের কথা!
আজকের উপস্থাপনায় জানা গেল, আটজন হিজড়া এইচআইভি পজিটিভ। এ ক্ষেত্রে হিজড়াদের এইচআইভি ঝুঁকির বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখতে হবে। এ ছাড়া বাংলাদেশের হিজড়া জনগোষ্ঠী ভারতে অবাধে যাতায়াত করে। কাজেই এদের এইচআইভির ঝুঁকি বেশি। তাই সরকারি-বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠানকে হিজড়াদের পাশে দাঁড়াতে হবে।
দুঃখের বিষয়, হিজড়ারা সামাজিক স্বীকৃতি পেলেও বাংলাদেশ সরকারের যেসব সেবাদানকারী সংস্থা আছে, তারা হিজড়াদের সম্পর্কে তেমন কিছু জানে না। পাঠ্যবইয়ে হিজড়াদের বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন।

মাসুদ রানা
মাসুদ রানা

মাসুদ রানা: আমরা এইচআইভি গবেষণামূলক কাজ করি। ছোট এনজিওগুলো আমাদের সঙ্গে কাজ করছে। এ রোগের বিষয়ে সামাজিক কুসংস্কার বা লজ্জা কমে আসা উচিত ছিল। কিন্তু এখনো কমেনি।
গবেষণায় দেখা গেছে, সবাই পরীক্ষার আওতায় আসছে না। পরীক্ষা না করা হলে সেবা সম্প্রসারণ কঠিন হয়ে পড়ে। আর পরীক্ষা করাতে না আসার মূল কারণ হলো ভীতি।
আর্থিক স্বল্পতার কারণে সবাই সেবা পাচ্ছে না। এ ছাড়া বিদেশি আর্থিক সহায়তা কমে যাওয়ার জন্য আমাদের কর্মসূচিগুলো সংকুচিত হয়ে পড়ছে। ফলে ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও কার্যক্রম সম্প্রসারণ করা যাচ্ছে না।
আমরা যে স্লোগান দেখছি, ‘এইচআইভি সংক্রমণ ও এইডসে মৃত্যু আর নয় একটিও’, এটা করতে হলে অবশ্যই আমাদের পরীক্ষা বাড়াতে হবে। আবার সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে কী কী সমস্যা রয়েছে, অন্যদিকে যাঁরা সেবা নিচ্ছেন, তাঁরা কী ধরনের বাধার সম্মুখীন হচ্ছেন, সেগুলো বের করতে হবে। অথচ গুরুত্বপূর্ণ এ বিষয়গুলোর ওপর বাংলাদেশে তেমন গবেষণা হচ্ছে না।
একদিকে যেমন সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে আর্থিক সংকট রয়েছে, অন্যদিকে গবেষণারও তেমন সুযোগ নেই। এইডসে জিরো সংক্রমণ করতে গবেষণা দরকার। কারণ কোথায় কোথায় দুর্বলতা আছে, সেই তথ্য যদি না দিতে পারি, তবে নীতিনির্ধারকেরা কীভাবে সিদ্ধান্ত নেবেন।
বাংলাদেশে ১০ হাজারের মতো এইচআইভি পজিটিভ রোগী আছে, এর মধ্যে মাত্র চার হাজারকে পরীক্ষার আওতায় আনা গেছে। আমাদের ৯০ শতাংশ এইচআইভি পজিটিভ রোগীকে পরীক্ষা, ৯০ শতাংশ রোগীকে সেবার আওতায় আনা এবং ৯০ শতাংশ রোগীকে ওষুধ সরবরাহের একটা চ্যালেঞ্জ রয়েছে। বিভিন্ন সীমাবদ্ধতার জন্য আমরা এ চ্যালেঞ্জ পূরণ করতে পারছি না।

জান্নাতুল ফেরদৌস পিয়া
জান্নাতুল ফেরদৌস পিয়া

জান্নাতুল ফেরদৌস পিয়া: কীভাবে এইডস প্রতিরোধ করা যাবে বিষয়টি সর্বস্তরের মানুষের কাছে পৌঁছানো সবচেয়ে জরুরি। এ জন্য প্রচার-প্রচারণা খুব দরকার। সাধারণ মানুষের মধ্যে এইডস সম্পর্কে একটা ভীতি কাজ করে। অন্য রোগের ক্ষেত্রে এ রকম হয় না। এই ভয়ভীতি দূর করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। আর যে বৈষম্যমূলক আচরণ সংক্রমিত ব্যক্তিকে সমাজ থেকে আলাদা করে দেয়, তা থেকে বের হয়ে আসা দরকার। নতুবা তখন সে ভয় পেয়ে বিষয়টি গোপন করবে। কারণ এইডস শুধু অনিরাপদ যৌনমিলনের মাধ্যমে ছড়ায় না, অন্যের রক্তের মাধ্যমে, অন্যের সিরিঞ্জ ব্যবহারের মাধ্যমেও হতে পারে।
মানুষকে এ বিষয়টি জানাতে হবে। এ ক্ষেত্রে সেলিব্রিটিরা প্রচারণার কাজে যুক্ত হতে পারেন। এ ব্যাপারে গণমাধ্যমের উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রয়েছে। মেরিল–প্রথম আলো তারকা জরিপের মতো অনুষ্ঠানে বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে। আমরা সেলিব্রিটিরা এইচআইভি নিয়ে কাজ করতে পারি। সাধারণ মানুষ আমাদের কথা হযতো একটু আলাদাভাবে শোনে। এইডস আমার বা পরিবারের কারও না থাকলেও বিষয়টি সম্পর্কে আমাদের সবাইকে জানতে হবে।

আবু ইউসুফ চৌধুরী
আবু ইউসুফ চৌধুরী

আবু ইউসুফ চৌধুরী: ২০০৯ সালে দেখা গেছে এইডসের সংক্রমণ সবচেয়ে কম। কারণ তখনই এইডস বিষয়ে সব ধরনের প্রচারণা খুব বেশি ছিল। এ জন্য এ ক্ষেত্রে অনেক বিনিয়োগ দরকার। বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমেই কিন্তু এটাকে আমরা একটা পর্যায়ে রাখতে পেরেছি।
অর্থনৈতিক সংকট কিন্তু এখন বিশ্বব্যাপীই। এ ক্ষেত্রে জোরালো আলাপ-আলোচনা দিয়ে আমরা এগোতে পারি। আমাদের অনেক কার্যকর উদ্যোগ আছে, সেগুলো ধরে রাখতে হবে। আমাদের প্রতিরোধমূলক কাজের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো পাঠ্যপুস্তকে এইডসের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা। পাশাপাশি দেশের শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া, যাতে তাঁরা শিক্ষার্থীদের ভালোভাবে জানাতে পারেন।
প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কমপক্ষে দুজন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষক রয়েছেন। যাঁর সংখ্যা ৬৪ হাজারের মতো। এ ছাড়া প্রতিটি উপজেলায় চারজন করে দেশে মোট ২ হাজার ৫০০ প্রশিক্ষক আছেন। তাঁরা প্রত্যেকেই এইডস বিষয়ে বেশ সচেতন।
তাঁরা নিজেরা সচেতন হওয়ার পাশাপাশি তাঁদের প্রত্যেকের প্রতিষ্ঠানকে জানাচ্ছেন। এ অর্জনগুলো ধরে রাখতে হবে। এ জন্য প্রতিবছর বইয়ে তথ্য হালনাগাদ করতে হবে। এভাবে ছোট ছোট পদক্ষেপের মাধ্যমে এ অর্জন ধরে রাখা সম্ভব।

সায়মা খান
সায়মা খান

সায়মা খান: আমরা মূলত ১৯৯৫ সাল থেকে গত ২০ বছরের ফলাফল হিসাব করি। এই ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে আগামী ১০-১৫ বছরের সম্ভাব্য ফলাফল দেখার চেষ্টা করি। ইউএনএইডস দুই জায়গায় কাজ করে। একটি হলো, কী ফলাফল পেলাম বা ভবিষ্যতে কী ফলাফল হতে পারে। এটা কীভাবে কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করা যাবে।
এ ছাড়া আইন বা সমাজের সঙ্গে জড়িত বিভিন্ন বৈষম্যমূলক ইস্যু চিহ্নিত করা হয়। গত ২০ বছরে বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে আমরা ১ লাখ ৪১ হাজার সংক্রমণ ঠেকিয়ে রেখেছি। অনুমান করা হয়, দেশে প্রায় নয় হাজার এইচআইভি পজিটিভ ব্যক্তি আছে। এর মধ্যে শনাক্ত করা গেছে মাত্র ৪ হাজার ১৪৩ জনকে।
দেড় লাখ মানুষের সংক্রমণ যদি না ঠেকানো যেত, তবে বাংলাদেশে একটি বিশাল অঙ্কের এইচআইভি পজিটিভ ব্যক্তি থাকত। সুতরাং এটি দেশের জন্য একটি বিশাল অর্জন। এখন যে এলাকায় সংক্রমণের হার বেশি, সেখানে কাজ করা জরুরি। ২০৩০ সালের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে এইচআইভি পরীক্ষার হার বাড়াতে হবে। এ ক্ষেত্রে যৌনকর্মীসহ ঝুঁকিপূর্ণ সব জনগোষ্ঠীকে বিশেষভাবে পরীক্ষার আওতায় আনতে হবে।
এটা করতে পারলে এইচআইভি প্রতিরোধের চ্যালেঞ্জ অর্জন করা অসম্ভব নয়। জাতীয় পর্যায়ে সর্বশেষ জরিপ হয়েছে ২০১১ সালে। ফলে সাম্প্রতিক তথ্য আমাদের কাছে নেই। এটা কাজ করার ক্ষেত্রে একটি বড় প্রতিবন্ধকতা।

লিমা রহমান
লিমা রহমান

লিমা রহমান: ১৬ কোটি মানুষের মধ্যে মাত্র ৬৭ হাজার মানুষ পরীক্ষা করিয়েছে। এর মধ্যে একটি বড় সংখ্যা হচ্ছে গর্ভবতী মা। নির্দিষ্ট কোনো জনগোষ্ঠী নয়, দেশের গণমানুষের কাছে বড় আকারে কাজ করে সচেতনতা বাড়াতে হবে। তবে ঝুঁকিপূর্ণ জায়গাগুলোতে বেশি মাত্রায় কাজ করতে হবে।
ব্যাপক আকারে এই কাজ শুধু স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষে সম্ভব নয়। এ জন্য শিক্ষা, ধর্ম, সমাজকল্যাণ, তথ্য ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়কে সমন্বিত করে কাজ করলে স্বল্প বাজেটে অনেক ফলপ্রসূ কাজ করা সম্ভব।
আমাদের মনে রাখতে হবে, দাতা সংস্থাগুলো সচেতনতা ও পরীক্ষার জন্য বিনিয়োগ করবে না। তারা শুধু বেশি ঝুঁকিপূর্ণদের জন্য অর্থায়ন করবে। এ জন্য লক্ষ্যমাত্রা ধরে রাখতে পাবলিক-প্রাইভেট অংশীদার ভিত্তিতে কাজ করা প্রয়োজন। বস্তিবাসীরা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে। তাদের কিন্তু সচেতন করা দরকার। মাদকের জন্যও এইডস বাড়ছে। মাঠপর্যায়ের স্বাস্থ্যকর্মীরা এ ক্ষেত্রে কাজ করলে ভালো ফল পাওয়া যেতে পারে। ইউনিসেফ যেভাবে কাজ করছে, তাতে হয়তো দুই বছরের মধ্যে কমিউনিটির লোকজনই এইচআইভি পরীক্ষায় মানুষকে সহায়তা করতে পারবে।

শাহেদ ইবনে ওবায়েদ
শাহেদ ইবনে ওবায়েদ

শাহেদ ইবনে ওবায়েদ: বাংলাদেশে মাদক পরিস্থিতি এককথায় ভয়াবহ। এর মধ্যে সিরিঞ্জের মাধ্যমে মাদক গ্রহণ করে ২৩ থেকে ২৫ হাজার। তারপরও এইচআইভি এই মাত্রায় রাখার ক্ষেত্রে মাঠকর্মীরা বিশেষ ভূমিকা রাখছেন।
মানুষের কাছে অনেক ভুল বার্তা যায়। তারা মনে করতে পারে না অন্যান্য রোগের মতো এইডসও একটি রোগ, চিকিৎসায় এ রোগ নিয়ন্ত্রণে থাকে। ব্যবহৃত সিরিঞ্জের মাধ্যমে এইডস ছড়ায়। ফলে মাদকাসক্তরা এইডসের ঝুঁকির মধ্যেই থেকে।
এইডস ছড়ানোর অনেক পকেট আছে। টাকা, নেশা, অনিরাপদ যৌনমিলন একে অপরের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। দেশের বড় অংশ এখন তরুণ, তাদের এইডস সম্পর্কে জানাতে হবে, সচেতনতা তৈরি করতে হবে। এ ছাড়া যারা আক্রান্ত হয়েছে, তাদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ দূর করতে হবে। আর্থিক স্বল্পতার কারণে দেশের অনেক কর্মসূচি বন্ধ হয়ে গেছে। তাই এইডস প্রতিরোধে সেলফ হেলপ গ্রুপ তৈরি করা অনেক জরুরি।

নুরুল ইসলাম নাহিদ
নুরুল ইসলাম নাহিদ

নুরুল ইসলাম নাহিদ: আমাদের দেশে এইডসকে সাধারণ অসুখ হিসেবে দেখা হয় না। এটি প্রতিরোধে অনেক সামাজিক বাধা কাজ করে। এইডস সারা বিশ্বেই একটি আলোচিত বিষয়। সঠিক সময়ে এর চিকিৎসা না হলে শেষ পরিণতি মৃত্যু।
কিন্তু এ দেশে এইডস প্রতিরোধে প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। যেমন সামাজিক অবস্থানের কথা চিন্তা করে আক্রান্ত ব্যক্তি এটা গোপন রাখে। ফলে এ সমস্যা আরও জটিল হয়। এ বিষয়ে সমাজ অনেক বেশি স্পর্শকাতর। এ জন্য কাজ করা কঠিন হয়ে পড়ে।
বর্তমানে এইডস সংক্রমণ কম। কিন্তু ঝুঁকি অনেক। কারণ সম্পূর্ণ এইডস প্রতিরোধ করা না গেলে যেকোনো সময় সংক্রমণের মাত্রা বেড়ে যেতে পারে। প্রতিরোধের কার্যক্রম অনেক দিন ধরে চলছে। কিন্তু বিষয়টি রয়েছে সীমিত পরিবেশের মধ্যে।
এ ক্ষেত্রে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো অনেক কার্যকর ভূমিকা রাখছে। ঝুঁকিপূর্ণ জায়গাগুলো চিহ্নিত করে মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করছে। সংক্রমণের হার কমিয়েছে।
এ দেশের এক কোটির কাছাকাছি মানুষ বিদেশে থাকে। তাদের এ বিষয়ে তেমন জ্ঞান নেই। তারা সংক্রমিত হলে সামাজিক লজ্জার ভয়ে চিকিৎসা নেয় না। ফলে তার স্ত্রী, সন্তান সংক্রমিত হয়।
সরকার ও বেসরকারি সংস্থার িবভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে এইডস সম্পর্কে এখন মানুষ জানতে পারছে। সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও সরকার বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি চালাচ্ছে। এইডসকে রুখতে হলে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি খুব দরকার।
সচেতনতার পাশাপাশি এর কুফল সম্পর্কে সবাইকে জানাতে হবে। বিদেশে যাওয়ার আগে মানুষকে এ বিষয়ে ধারণা দিতে হবে, যদিও লোকবলের অভাবে অনেক সময় তা করা যায় না। পাশাপাশি সমাজের প্রত্যেক ব্যক্তি নিজের অবস্থান থেকে সচেতনতা সৃষ্টির কাজ করলে এ সমস্যা অনেক কমে যাবে। আমরা পাঠ্যপুস্তকে এ বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করেছি। আরও প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের চেষ্টা করব।

আব্দুল কাইয়ুম: বাংলাদেশে এইডস আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা কম। কিন্তু আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেশি। আমাদের পার্শ্ববর্তী প্রতিটি দেশই ঝুঁকিপূর্ণ। তাই যৌনকর্মী ও অন্যান্য ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীসহ সবাইকে সচেতন করা অত্যন্ত জরুরি।
প্রথম আলোর পক্ষ থেকে সবাইকে কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ।
যাঁরা অংশ নিলেন
নুরুল ইসলাম নাহিদ : সাংসদ, বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ, মন্ত্রী, শিক্ষা মন্ত্রণালয়
কামরুল হাসান খান : উপাচার্য, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়
এম জিয়া উদ্দিন : বিশেষজ্ঞ, এইচআইভি এইডস, ইউনিসেফ
সায়মা খান : অ্যাডভাইজার, ইউএনএইডস
লিমা রহমান : চিফ অব পার্টি, এইচআইভি/এইডস প্রোগ্রাম, সেভ দ্য চিলড্রেন
আবু ইউসুফ চৌধুরী : চেয়ারপারসন, এসটিএইডস, নেটওয়ার্ক অব বংলাদেশ
মাসুদ রানা : সমন্বয়ক, এইচআইভি এইডস, আইসিডিডিআরবি
আসমা পারভীন : উপপরিচালক, আশার আলো সোসাইটি (পিএইচডি রিসার্চ ফেলো)
এ এস এম হাবিবুল্লাহ চৌধুরী : ডেপুটি প্রজেক্ট ডিরেক্টর, লিংকআপ, বাংলাদেশ
জান্নাতুল ফেরদৌস পিয়া : অভিনয়শিল্পী
সালেহ আহমেদ : নির্বাহী পরিচালক, বন্ধু সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার সোসাইটি
শাহেদ ইবনে ওবায়েদ : সভাপতি, আস্থা
জয়া সিকদার : সভাপতি, সম্পর্কের নয়া সেতু
সঞ্চালক
আব্দুল কাইয়ুম : সহযোগী সম্পাদক, প্রথম আলো