এমন ঈদ যেন আর না আসে

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস পাল্টে দিয়েছে এবারের ঈদের চিরচেনা আমেজ। প্রতি মুহূর্তেই সংক্রমিত হচ্ছে অসংখ্য মানুষ। মৃতের সংখ্যাও বাড়ছে সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে। আর কদিন পরই পবিত্র ঈদুল ফিতর। এমতাবস্থায় এবারের ঈদের আনন্দ বিষাদে রূপ নিচ্ছে, তা বলাই যায়।
প্রতিবছর এ সময় ঈদের কেনাকাটা থেকে শুরু করে বিভিন্ন রকম প্রস্তুতি থাকে তুঙ্গে। কিন্তু এবারের দৃশ্যপট সম্পূর্ণ বিপরীত। এই ঈদে গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের (গবি) শিক্ষার্থীদের কী পরিকল্পনা?
ফার্মাসি বিভাগের শিক্ষার্থী খাদিজা আক্তার সেতু বলেন, ‘ঈদ আছে এবং ঈদের আনন্দও আছে। তবে এবারের ঈদ ঘরোয়াভাবে উদ্যাপন করা হবে। এবার কোনো কেনাকাটা হবে না। শপিংয়ের টাকা দিয়ে ত্রাণ দিয়েছি। ঈদের আগে আরও কিছু ত্রাণ দেব। আমি চাই গবিয়ানরা যেন করোনাকে মাথায় রেখে ঈদ উদ্যাপন করে। নিরাপদে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করে। বাইরে ঘোরাঘুরি না করে।’
ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের ষষ্ঠ সেমিস্টারের শিক্ষার্থী সানি প্রীতম বলেন, ‘এবারের ঈদের দিন হয়তো অন্য ঈদের মতো হবে না। তারপরও যতটুকু করা যায়, উপভোগ করব। আশপাশের মানুষগুলো ভালো আছে কি না, খেয়াল রাখব। এই সময়ে পশুপাখি, পথের কুকুরগুলো ঘোর খাদ্যসংকটে আছে। ওদের খাবারের জোগান দেব।’
সানি প্রীতম আরও বলেন, ‘মাকে কাজে সাহায্য করব। করোনা মহামারি ঠিক হবে একদিন। কেননা, রাত যত গভীর হয়, ভোর তত এগিয়ে আসে।’
প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের প্রথম সেমিস্টারের শিক্ষার্থী তামান্না তাহসিন মিম বলেন, ‘পরিকল্পনা তেমন কিছুই নেই। গ্রামের বাড়িতে যেতে পারিনি। এখন আর যাওয়া হবে না। আব্বুর প্রতিদিন অফিসে যেতে হয়। আব্বুকে নিয়ে চিন্তায় থাকি। শপিং করাও হবে না সেভাবে। আত্মীয়স্বজনরা ছাড়া বদ্ধ ফ্ল্যাটে ঈদ, ঈদ মনে হয় না।’
তামান্না তাহসিন আরও বলেন, ‘আমাদের পাঁচজনের পরিবার। ঈদের দিন নতুন আইটেম রান্না করব। ছাদে একসঙ্গে ঘুড়ি ওড়াব। ঈদের দিন গরিব মানুষদের খাওয়ানোর ইচ্ছা আছে। যদি সেই সুযোগ হয়, তবে খুব ভালো কাটবে ঈদ। এখন এই মানুষগুলোই আমার ঈদের সঙ্গী।’
ফিজিওথেরাপি বিভাগে পড়েন দিবাকর বড়ুয়া। পঞ্চম সেমিস্টারের এই শিক্ষার্থী বলেন, ‘ঈদ মানে এক মিলনমেলা। প্রতি ঈদে মা-বাবা, ভাইবোনের সঙ্গে আনন্দে মেতে উঠি। এই আনন্দের তুলনা হয় না৷ এই অবস্থায় ঈদের আমেজ না পাওয়া স্বাভাবিক। তাই এই ঈদে ঘরে থেকে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করা সবচেয়ে উত্তম।’
ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের সপ্তম সেমিস্টারের শিক্ষার্থী শ্রাবন্তী আফরোজ ইতি। তিনি বলেন, ‘এ রকম ঈদ আমার মতো অনেকের জীবনেই প্রথমবার। ঈদে আমার কোনো পরিকল্পনা নেই। পরিবারের সবাইকে নিয়ে নিরাপদ থাকতে চাই। এবারের ঈদ অন্য রকম। সবাই নিরাপদ থাকুক, সুস্থ থাকুক। যেদিন পৃথিবী সুস্থ হবে, সেই দিনটাই আমার কাছে ঈদ।’
ফলিত গণিত বিভাগের সপ্তম সেমিস্টারের শিক্ষার্থী আবুল খায়ের। তিনি বলেন, ‘ঈদে কেনাকাটা করছি না। সেই টাকা দিয়ে গরিব মানুষদের সাহায্য করব। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’ আবুল খায়ের আরও বলেন, ‘একজন ছাত্রের কাছে সেমিস্টার পরীক্ষা দিয়ে ঈদ উদ্যাপনের আনন্দ অন্য রকম। সেই আনন্দ এবার পাচ্ছি না। রমজানে ক্যাম্পাসের সেই ইফতার ও সাহরির কথা মনে পড়ে। দোয়া করি, আমরা যেন দ্রুত ক্যাম্পাসে ফিরতে পারি। তখনই ঈদের প্রকৃত আনন্দ পাব।’
ফার্মাসি বিভাগের পঞ্চম সেমিস্টারের শিক্ষার্থী মো. আখলাকুল ইসলাম বলেন, ‘আমার ঈদের দিনগুলো খুব সাধারণ। তবে এবার ঈদের পরিকল্পনা একটু আলাদা। এবার নামাজ আদায়ের পর আর বাসা থেকে বের হব না। আর মোবাইল আর ইন্টারনেট একমাত্র ভরসা আমার ঈদের পরিকল্পনা।’
আইন বিভাগের প্রথম সেমিস্টারে পড়েন আঞ্জিলা আক্তার। তিনি বলেন, ‘এক ভাইরাসের কারণে এবারের ঈদের চিত্র বদলে গেছে। গোটা বিশ্বে একই পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এটা প্রাণঘাতী ব্যাধি সহজেই ছড়িয়ে পড়ছে। তাই আমার ঈদ পরিকল্পনা ঘরে থাকব, সুস্থ থাকব, অন্যকে নিরাপদ রাখব। আমি যেন কারও দ্বারা রোগাক্রান্ত না হই এবং কেউ যেন আমার দ্বারা রোগাক্রান্ত না হয়—এই দিকে খেয়াল রাখব। প্রার্থনা করি, এই ঈদ যেন আর না আসে!’
* লেখক: শিক্ষার্থী, গণ বিশ্ববিদ্যালয়