অর্থ পাচার করে কানাডার বেগমপাড়ায় বাড়ি কেনা ২৮ জনের নামের তালিকা প্রকাশ করতে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার বেলা দেড়টায় দুদকের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মঈন উদ্দীন আবদুল্লাহ বরাবর দেওয়া এক স্মারকলিপিতে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ এই আহ্বান জানায়।
স্মারকলিপিতে গণমাধ্যমে প্রকাশিত পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের একটি বক্তব্য উদ্ধৃত করে ২৮ জন অর্থ পাচারকারীর নাম প্রকাশের দাবি জানিয়েছে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ।
স্মারকলিপিতে বলা হয়, ‘গত নভেম্বর মাসে এক অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, “বাংলাদেশ থেকে কানাডায় টাকা পাচারের যে গুঞ্জন আছে, তার কিছুটা সত্যতা আমরা পেয়েছি। মনে করেছিলাম রাজনীতিবিদের সংখ্যা বেশি হবে। কিন্তু দেখা গেল, রাজনীতিবিদ চারজন। প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী, টাকা পাচারের তথ্য পাওয়া ২৮টি ঘটনার মধ্যে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীই বেশি।” কিন্তু এখন পর্যন্ত সেই ২৮ জনের নাম প্রকাশ করা হয়নি।’
মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ বলেছে, দুদক একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। দুদকের দায়িত্ব হচ্ছে পররাষ্ট্র ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের সাহায্য নিয়ে অর্থ পাচারকারীদের চিহ্নিত করে সেই অর্থ ফিরিয়ে আনা এবং অর্থ পাচারকারীদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া দুদকের নৈতিক দায়িত্ব। কিন্তু দুদক তার দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছে। দুদক, বাংলাদেশ ব্যাংক, অর্থ মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করলে কখনোই বিদেশে অর্থ পাচার হতো না।’
এ প্রসঙ্গে স্মারকলিপিতে অর্থ ও মানব পাচারের দায়ে সংসদ সদস্য পদ হারানো শহিদ ইসলাম (পাপুল) ও অর্থ আত্মসাৎ করে বিদেশে পলাতক পি কে হালদারের কথা উল্লেখ করা হয়।
অবহেলার দায়ে দুদককে কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে
লোক দেখানোর জন্য চুনোপুঁটিদের ধরলেই চলবে না, রাঘববোয়ালদেরও আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ। সংগঠনটির পক্ষ থেকে দুদকের চেয়ারম্যানকে বলা হয়, শুধু কানাডা নয়, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যেও অবৈধভাবে অর্থ পাচার করা হচ্ছে। এটি দেশের অর্থনীতির জন্য চরম অশনিসংকেত। এর প্রতিরোধে দুদককে আরও কার্যকরী ভূমিকা পালন করতে হবে। অন্যথায় দুদককে তার দায়িত্বে অবহেলার জন্য জনগণের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে।
মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের উপদেষ্টা ভাস্কর রাশা ও সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মো. আল মামুনের নেতৃত্বে চার সদস্যের প্রতিনিধিদল দুদকের সচিব মু. আনোয়ার হোসেন হাওলাদারের হাতে স্মারকলিপিটি দেন।
এ সময় মু. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার বলেন, ‘আমরাও চাই দেশ দুর্নীতিমুক্ত থাকুক। উনারা মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান। উনারা স্মারকলিপি দিয়েছেন, আমরা বিষয়টি দেখব।’
তথ্য না পাওয়াই দুদকের প্রধান অন্তরায়
অবশ্য ১৫ জুন দুদকের প্রধান কার্যালয়ে রিপোর্টার্স অ্যাগেইনস্ট করাপশনের (র্যাক) নেতাদের সঙ্গে এক মতবিনিময় অনুষ্ঠানে কমিশনের চেয়ারম্যান মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ বলেছেন, সুনির্দিষ্ট তথ্যের অভাবে অর্থ পাচারকারীদের ধরা যাচ্ছে না। মানি লন্ডারিং-সংক্রান্ত ডকুমেন্ট এবং তথ্য না পাওয়াই এখন দুদকের প্রধান অন্তরায়।
কারা অর্থ পাচার করে, সেই তালিকা আমার কাছে নেই। নামগুলো যদি আপনারা জানেন যে এঁরা এঁরা অর্থ পাচার করেন, আমাদের দিন।
মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ অর্থমন্ত্রীর এ বক্তব্যকে ‘হাস্যকর’ মন্তব্য করে প্রত্যাখ্যান করেছে। সংসদে বিরোধীদলীয় একাধিক সদস্যও অর্থমন্ত্রীর বক্তব্যের সমালোচনা করে সংসদে বক্তব্য দিয়েছেন।
এর মধ্যে গত সোমবার জাতীয় পার্টির সাংসদ কাজী ফিরোজ রশীদ বলেছেন, ‘দুদকের হেড অফিস আপাতত বাংলাদেশে রাখার দরকার নেই। এটি কানাডায় করা হোক। আরেকটি শাখা করা হোক মালয়েশিয়ায়। এর বাইরে আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, দুবাইতে দুদকের শাখা কার্যালয় করা গেলে টাকা পাচারের সঠিক চিত্রটি বোঝা যাবে।’