গমের অধিক ফলন পেতে

.
.

খরাপ্রবণ বরেন্দ্র অঞ্চলে বীজের সঙ্গে মিশ্র তরল সার মিশিয়ে গম চাষ করে বেশি ফলন পাওয়া যাচ্ছে। গত বছর গোমস্তাপুর উপজেলার একজন চাষি এ পদ্ধতিতে গম চাষ করে অন্যদের চেয়ে ২০ শতাংশ বেশি ফলন পেয়েছেন। এ বছর চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী ও নওগাঁ জেলার আরও অর্ধশতাধিক চাষি এ পদ্ধতিতে গম চাষ করে ২০ থেকে ২৫ শতাংশ বেশি ফলন পেয়েছেন।
এ পদ্ধতির উদ্ভাবক বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) রাজশাহী বিভাগীয় বীজ বিপণন দপ্তরের যুগ্ম পরিচালক আরিফ হোসেন খান। তিনি এ পদ্ধতির নাম দিয়েছেন ‘ম্যাজিক গ্রোথ প্রাইমিং প্রযুক্তি’।
আরিফ খান জানান, উদ্ভিদের ১৩টি অত্যাবশ্যকীয় খনিজ পুষ্টি উপাদান ও কিছু উপকারী (বেনিফিশিয়ারি) উপাদানে সমৃদ্ধ ম্যাজিক গ্রোথ নামক মিশ্র তরল সার দিয়ে বিশেষ কৌশলে বীজ ভিজিয়ে নেওয়ার পর জমিতে রোপণ করা হয়। দীর্ঘদিনের পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর তিনি এই তরল সার উদ্ভাবন করেছেন।
প্রাইমিং প্রযুক্তির কার্যকারিতার বিষয়ে আরিফ খান বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রভাবে বরেন্দ্র এলাকায় পানির স্বল্পতা ও খরা প্রলম্বিত হচ্ছে। চাষিরা অনেক স্থানে গম চাষে প্রয়োজনীয় পরিমাণ পানি সেচ দিতে পারেন না। এসব এলাকায় প্রাইমিং প্রযুক্তির পাশাপাশি পাতার মাধ্যমে খাদ্য প্রদানের কৌশল অবলম্বন করে ম্যাজিক গ্রোথ প্রয়োগ করলে আরও বেশি ফলন পাওয়া যেতে পারে।
আরিফ খান জানান, বরেন্দ্র এলাকার জমিতে আর্দ্রতা কিছু কম থাকলে চাষিরা গম বীজ পানি দিয়ে প্রাইমিং করে বপন করেন। এ প্রযুক্তির ক্ষেত্রে প্রাইমিংকারী উপাদান হিসেবে ম্যাজিক গ্রোথ ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে বীজের মধ্যে কিছু অতিরিক্ত অত্যাবশ্যকীয় পুষ্টি উপাদান ঢোকে। এ কারণে জমির সব গাছ প্রায় সমানভাবে দ্রুত বৃদ্ধি পায় ও গুছি বেশি হয়। এ প্রযুক্তির মাধ্যমে চাষ করা গমের শিষ বেশি বড় ও দানা বেশি পুষ্ট হয়। খরাপ্রবণ বরেন্দ্র এলাকার জন্য এ প্রযুক্তি খুবই উপযোগী।
প্রযুক্তিটির উদ্ভাবকের মতে, এ প্রযুক্তি ব্যবহারে বিঘাপ্রতি দেড় শ টাকা অতিরিক্ত খরচ হয়। কিন্তু লাভ হয় দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা বেশি। এ প্রযুক্তির মাধ্যমে সারা দেশে বছরে গমের উৎপাদন প্রায় দুই লাখ মেট্রিক টন বাড়ানো সম্ভব। ম্যাজিক গ্রোথ দিয়ে প্রাইমিং করে ধান ও মুগ ফসল চাষ করলেও ভালো ফলন পাওয়া যায়।
গোমস্তাপুর উপজেলার চাষি আবদুল গফুর গত বছর এ প্রযুক্তিতে ১৫ কাঠা জমিতে গম চাষ করে সাফল্য পেয়েছেন। অন্যান্য জমির তুলনায় তাঁর জমিতে ২০ ভাগ বেশি ফলন হয়েছে।
প্রযুক্তিটি প্রয়োগকৌশলের বিষয়ে আরিফ খান জানান, প্রতি কেজি গম বীজের জন্য ৬০০ মিলিলিটার পানি নিয়ে তার সঙ্গে ১৫ মিলিলিটার ম্যাজিক গ্রোথ মিশিয়ে চার ঘণ্টা বীজ ভিজিয়ে রাখতে হবে। এক ঘণ্টা পরপর সেই বীজ ওলটপালট করে দিতে হবে, যাতে সব বীজে ম্যাজিক গ্রোথের পুষ্টি উপাদান সমানভাবে ঢোকে। এরপর বীজ তুলে ছায়াতে এক বা দুই ঘণ্টা শুকিয়ে জমিতে বপন করতে হবে। আর যদি জমিতে বেশি রস থাকে, তবে প্রতি কেজি বীজের জন্য ১৫ মিলিলিটার ম্যাজিক গ্রোথ ও ৪৫ মিলিলিটার পানি মিশিয়ে ৩০ মিনিট ভিজিয়ে রাখতে হবে। জমিতে সব জৈব বা রাসায়নিক সার প্রয়োগ এবং অন্যান্য পরিচর্যা রাখতে হবে স্বাভাবিক।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষিতত্ত্ব ও কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক আমিনুল হক বলেন, গত বছর ও তার আগের বছর তাঁর বিভাগের এমফিল পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা পরীক্ষামূলকভাবে এই পদ্ধতি প্রয়োগ করে ভালো ফল পেয়েছেন। খরাপ্রবণ বরেন্দ্র অঞ্চলে এ পদ্ধতি কার্যকর। ধানের ক্ষেত্রেও এ প্রযুক্তি প্রয়োগ করে ভালো ফল পাওয়া গেছে বলে তিনি জানান।