জমি দখলের চেষ্টা এক পক্ষের, আরেক পক্ষের বিক্ষোভ

পাবনা মানসিক হাসপাতালের ভেতরে ১৫ শতাংশ জমির দখল বুঝে পাওয়ার জন্য গতকাল সোমবার শ্রীশ্রী ঠাকুর অনুকূলচন্দ্র সৎসঙ্গ একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে। অপরদিকে দখল বন্ধের দাবিতে গতকালই ‘সৎসঙ্গ বাংলাদেশ’ বিক্ষোভ, মানববন্ধন ও সংবাদ সম্মেলন করেছে।
হাসপাতাল সীমানার ঠিক পেছনে শ্রীশ্রী ঠাকুর অনুকূলচন্দ্র আশ্রম। ১১ মার্চ শ্রীশ্রী ঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের ১২৯তম জন্মদিবস ছিল। এদিন ঠাকুরের দেশ-বিদেশের ভক্তরা পাবনার সদর উপজেলার হিমাইতপুরে শ্রীশ্রী ঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের আশ্রমে আসেন। ১২ মার্চ রাতে তাঁরা পাবনা মানসিক হাসপাতাল সীমানার ভেতরে থাকা ১৫ শতাংশ জমি ঠাকুরের জন্মস্থান দাবি করে দখল করে নেন। বিষয়টি নিয়ে এলাকাবাসী ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ক্ষুব্ধ হয়। জমিটি দখলমুক্ত করার দাবিতে মানববন্ধন করে পাবনা মানসিক হাসপাতালের কর্মকর্তা, কর্মচারী ও এলাকাবাসী। এ নিয়ে ১৬ ও ১৭ মার্চ প্রথম আলোতে দুটি সংবাদ প্রকাশিত হয়।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে শ্রীশ্রী ঠাকুর অনুকূলচন্দ্র সৎসঙ্গের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক যুগল কিশোর ঘোষ বলেন, ঠাকুর অনুকূলচন্দ্র তাঁর জন্মভূমি পাবনার হিমাইতপুরে ‘সৎসঙ্গ’ নামের জনকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। ১৯৪৬ সালে তিনি ভারতে যান। দেশভাগের পর সৎসঙ্গের নিজস্ব দুই শতাধিক বিঘা জমি সরকার অধিগ্রহণ করে পাবনা মানসিক হাসপাতাল গড়ে তোলে। ফলে তাঁদের সংগঠন শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য ঠাকুরের জন্মস্থান থেকে কিছু জমি ফিরে পেতে প্রধানমন্ত্রীসহ বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন করেন।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, বিষয়টি নিয়ে পাবনা মানসিক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ, জেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন দপ্তরে চিঠি চালাচালির পর ভূমি মন্ত্রণালয় প্রায় ছয় লাখ টাকা পরিশোধ সাপেক্ষে জমিটি অনুকূলচন্দ্র সৎসঙ্গকে বন্দোবস্ত দেয়। চালানের মাধ্যমে ওই টাকাও জমা দেওয়া হয়। সে অনুযায়ী ঠাকুরের ১২৯তম জন্মবার্ষিকীতে হাজার হাজার ভক্ত জমিটিতে মন্দির প্রতিষ্ঠা করে। এর মধ্যে ‘সৎসঙ্গ বাংলাদেশ’ নামের প্রতিষ্ঠানটি সরকারের এই কার্যক্রমকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে বিভিন্ন পাঁয়তারা করছে।
অপরদিকে, জমি দখলের প্রতিবাদে বেলা ১১টার দিকে সৎসঙ্গ বাংলাদেশের কয়েক শ ভক্ত পাবনা শহরের দিলালপুর মহল্লা সৎসঙ্গ আশ্রম থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে। মিছিলের লোকজন আবদুল হামিদ সড়কে এসে মানববন্ধন করে। প্রায় ২০ মিনিটের মানববন্ধন শেষে ভক্তদের একাংশ আশ্রমে ফিরে যায়, অন্যরা পাবনা প্রেসক্লাবে এসে সংবাদ সম্মেলন করে।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়েন সংগঠনের সম্পাদক ধৃতব্রত আদিত্য। লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, শ্রীশ্রী ঠাকুর অনুকূলচন্দ্র নিজের নামে কোনো সৎসঙ্গ প্রতিষ্ঠা করেননি। তিনি বিশ্বব্যাপী নিজ নিজ দেশের নামে সৎসঙ্গ প্রতিষ্ঠা করেছেন। তাঁর জীবদ্দশায় ঠাকুরের বড় ছেলে অমরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী সৎসঙ্গের আচার্য হন। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর অমরেন্দ্রনাথের পরামর্শে তাঁর অনুসারী রাসবিহারী আদিত্য টাঙ্গাইলের পাকুটিয়াতে সৎসঙ্গ বাংলাদেশের কার্যক্রম শুরু করেন। তখন থেকে পাবনায় ঠাকুরের জন্মস্থান উদ্ধারের কার্যক্রম শুরু হয়। রাসবিহারী আদিত্য মারা গেলে তাঁর ছেলে হিসেবে সৎসঙ্গ বাংলাদেশের দায়িত্ব পান তিনি (ধৃতব্রত আদিত্য)। ফলে বর্তমানে তিনি বাংলাদেশে কার্যক্রম পরিচালনা ও ঠাকুরের জন্মস্থান উদ্ধারের বৈধ দাবিদার।
ধৃতব্রত আদিত্য বলেন, পাবনা মানসিক হাসপাতালসহ আশপাশের অধিকাংশ জমির মালিক ছিলেন ঠাকুর অনুকূলচন্দ্র। সে অনুযায়ী সৎসঙ্গ বাংলাদেশ জমিটি ফিরে পেতে চাইছে। বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়সহ বিভিন্ন দপ্তর থেকে পাবনা জেলা প্রশাসনকে বহুবার চিঠি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে সেসব চিঠির বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। উল্টো ঠাকুরের নাম ভাঙানো একটি সংগঠনকে জমি পাইয়ে দিতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সুপারিশ করা হয়েছে। জমিটি সরকারের খাস খতিয়ানভুক্ত করা হয়েছে। পরে বিষয়টি জানাজানি হলে তিনি জমিটি ফিরে পেতে সরকারের পক্ষে পাবনা জেলা প্রশাসনকে বিবাদী করে ২০০৭ সালে পাবনার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতে একটি মামলা করেছেন। মামলাটি এখনো চলছে। জমিটি বন্দোবস্ত ও দখলের ওপর উচ্চ আদালত একটি স্থিতাবস্থা জারি করেছেন।
ধৃতব্রতের অভিযোগ, জমিটির ব্যাপারে পাবনা জেলা প্রশাসন একটি পক্ষকে সমর্থন করছে। তারা মামলা ও স্থিতাবস্থার বিষয়টি গোপন করেছে। ফলে ভূমি মন্ত্রণালয় জমিটি শ্রীশ্রী ঠাকুর অনুকূলচন্দ্র সৎসঙ্গকে বন্দোবস্ত দিয়েছে। এটা আদালত অবমাননা ও আইনবহির্ভূত কর্মকাণ্ড। বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসকের সঙ্গে দেখা করতে গেলে তিনি দেখা পর্যন্ত করেননি। কোনো কথাও শোনেননি।
পাবনার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মাকসুদা বেগম সিদ্দিকা বলেন, জেলা প্রশাসন সৎসঙ্গ বাংলাদেশের দায়ের করা মামলাটির বিষয়ে জানে। ফলে জমিটি কোনো পক্ষকেই হস্তান্তর করা হয়নি। জেলা প্রশাসন কারও পক্ষ নেয়নি। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়েছে। আইনানুগভাবে যেটা করা দরকার, তা-ই করা হচ্ছে।