
শরৎ মানেই নদীতীরে সাদা কাশফুলের ঢেউ। শরৎ মানেই নীল আকাশে সাদা মেঘের ভেলা। শরৎ মানেই বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের কাছে মাতৃসম দেবী দুর্গার আগমন। বছর ঘুরে সেই দিন আবার হাজির। আজ মঙ্গলবার শুভ মহালয়া।
মহালয়ার দিন থেকে শুরু হয় দেবীর আগমনী উৎসব। দুর্গাপূজার দিন-ক্ষণ গণনা আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় এ দিন থেকেই। ছয় দিন পর মহাষষ্ঠীর মধ্য দিয়ে শুরু দুর্গাপূজা।
বাঙালিদের কাছে দুর্গাপূজা সর্বজনীন উৎসবে পরিণত হয়েছে। এ উৎসবে হিন্দু সম্প্রদায়ের সঙ্গে জাতি-ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে সবাই অংশ নেয়। এতে দুর্গার মাতৃরূপের বন্দনা অসাম্প্রদায়িক উৎসবের রূপ পেয়েছে। অসাম্প্রদায়িক বাঙালি চেতনা ধারণ করতেই যেন এ উৎসব এখন ‘শারদ উৎসব’ নামেও পরিচিতি পাচ্ছে।
বাঙালির জীবনে দুঃখের যেমন শেষ নেই, তেমনি শাশ্বত আনন্দের উপলক্ষেরও কমতি নেই। শারদ উৎসব বাঙালির ঐতিহ্য ও পরম্পরা বহন করে চলেছে। দেশের রাজনীতি নানা সংকটে ধুঁকে ধুঁকে চলছে। বর্ষার কালো মেঘ এখনো আকাশজুড়ে; তবু যথানিয়মে আশ্বিন মাস এসেছে, পদ্ম ও শিউলি লাবণ্য ছড়িয়েছে, এদিক-ওদিক শুরু হয়ে গেছে ঢাকের বাদ্য। প্রতিবারের মতো এসব সঙ্গী করে এবারও দুর্গা দেবী যথারীতি আসছেন।
দুর্গা দেবীকে বরণ করে নিতে ইতিমধ্যে প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে হিন্দু সম্প্রদায়। প্রতিমাশিল্পীরা দেবী দুর্গার মূর্তিতে শেষ মুহূর্তের তুলির আঁচড় দিচ্ছেন।
নগরের দাড়িয়াপাড়া এলাকার বল্লভ নারায়ণ মৃৎ শিল্পালয়ের পরিচালক দুলাল পাল (৪৮) প্রতিমা নির্মাণের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন ১৯৮০ সাল থেকে। তিনি বলেন, চলতি বছর ৬০টি মূর্তি তৈরি করেছেন। দু-এক দিনের মধ্যে প্রতিমা নির্মাণ সম্পন্ন হবে। এরপর দুর্গা দেবীকে নিয়ে যাওয়া হবে মণ্ডপে।
বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদ সিলেট মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক রজতকান্তি গুপ্ত জানান, চলতি বছর সিলেটের চার জেলায় প্রায় দুই হাজার ২০০ পূজামণ্ডপে দুর্গার পূজা হবে। ৩০ সেপ্টেম্বর মহাষষ্ঠীর মধ্য দিয়ে পূজা শুরু হবে এবং ৩ অক্টোবর বিজয়া দশমীর মধ্য দিয়ে পূজা শেষ হবে।
দুর্গাপূজা ঘিরে বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গে সাহিত্য-সাময়িকী প্রকাশের প্রচলন আছে। পূজার পোশাকে এখন এসেছে নানা বৈচিত্র্য। এর বাইরে বাঙালিরা নানা আয়োজনে পূজার সময়টুকু নিজেদের এক সূত্রে বেঁধে রাখেন। শারদ উৎসবের শুভলগ্নে আবেগ আর সম্প্রীতির গভীর মিলনমেলার প্রতীক্ষায় পুরো বাংলাদেশ।