নিজেদের সমস্যা নিজেরাই সমাধান

ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করলে সাফল্য অবধারিত। কোনো দেশ বা এলাকার মানুষ এভাবে কাজ করে যেকোনো সমস্যা সহজেই সমাধান করতে পারে। সেই দৃষ্টান্তই স্থাপন করেছেন মেহেরপুর সদর উপজেলার পিরোজপুর ইউনিয়নের সোনাপুর গ্রামের সাড়ে তিন হাজার মানুষ। শ্রম, জমি ও অর্থ দিয়ে তাঁরা চার কিলোমিটার দীর্ঘ একটি রাস্তা নিজেরাই নির্মাণ করছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, রাস্তাটি না থাকায় ফসল উৎপাদন করে এলাকার কৃষকেরা ঘরে নিতে পারতেন না। এতে খেতে বসেই ফসল বিক্রি করায় প্রতিবছর তাঁরা লোকসান গুনতেন। জনপ্রতিনিধি ও সরকারি কর্মকর্তাদের কাছে অনেক আবেদন-নিবেদন করেও কোনো কাজ হয়নি। অবশেষে ৭ নভেম্বর থেকে তাঁরা জোটবদ্ধ হয়ে রাস্তা তৈরির কাজ শুরু করেছেন। ইতিমধ্যে ৭০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। বাকি কাজ শেষ হতে আর দু-তিন দিন লাগবে।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, সোনাপুর গ্রামের দক্ষিণ অংশে পাকুরগাছ থেকে ভেদাগাড়ী কাটাখালী বিল পর্যন্ত ১৫০ জন কৃষকের ৮০০ একর জমি আছে। গ্রামের প্রধান সড়ক থেকে ওই জমিতে যাওয়ার কোনো রাস্তা নেই। তাই জমির ফসল বাড়িতে আনতে কৃষকদের ভীষণ কষ্ট হতো। এ কারণে অনেকে চাষাবাদ বন্ধ করে দিয়েছিলেন।
রাস্তা নির্মাণকাজের নেতৃত্বে আছেন সোনাপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক হাবিবুল্লাহ খান। তিনি জানান, এত দিন সড়ক না থাকায় ৮০০ একর জমির ফসল জমিতেই কম দামে বিক্রি করতে হতো। এ কারণে তিনি স্থানীয় লোকজনকে সংগঠিত করে ৭ নভেম্বর থেকে রাস্তা তৈরির কাজ শুরু করেছেন।
গত রোববার সরেজমিনে দেখা যায়, রাস্তা নির্মাণের কাজ করছেন সহস্রাধিক মানুষ। সবার হাতে কোদাল ও ঝুড়ি। কেউ পাশের জমি থেকে মাটি কেটে ঝুড়িতে রাখছেন, কেউবা সেই ঝুড়িতে করে আনা মাটি রাস্তায় ফেলছেন। মেহেরপুর সরকারি কলেজের স্নাতক (সম্মান) তৃতীয় বর্ষের ছাত্র রবিউল ইসলাম জানান, রাস্তার কাজ শেষ হলে তাঁর বাবার মতো অনেক কৃষক বাজারে ফসল বিক্রি করে ন্যায্যমূল্য পাবেন। তাই এই কাজে অংশ নিতে পেরে তাঁর খুব ভালো লাগছে।
পিরোজপুর ইউনিয়ন পরিষদের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মামলত হোসেন জানান, দীর্ঘদিনের সমস্যা সমাধানের জন্য মাইকিং করে গ্রামবাসীকে জড়ো করে সভা করা হয়। সভায় সবার মতামত নিয়ে রাস্তা নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এতে ভুক্তভোগী প্রায় ১৫০ জন চাষি জমি দিয়েছেন। অনেকেই শ্রম ও টাকা দিয়েছেন। এই রাস্তা হওয়ার পর গ্রামের মানুষের আয় বেড়ে যাবে। এই রাস্তার প্রস্থ ১৮ ফুট।