বর্ষায় জনশুমারি, বাড়তি ব্যয় ৩২ কোটি

১০ বছর পরপর করার বাধ্যবাধকতা থাকলেও এবার ১১ বছর পর হচ্ছে জনশুমারি। ফলে বর্ষা মৌসুমে ছাতা কেনাসহ ব্যয়ের নতুন খাত সৃষ্টি হয়েছে।

জনশুমারি ১০ বছর পর পর করার বাধ্যবাধকতা থাকলেও এবারই প্রথম নিয়মের ব্যত্যয় হয়েছে। তথ্য সংগ্রহের ট্যাব কেনা নিয়ে জটিলতা ও করোনার কারণে প্রায় এক বছর সময় চলে গেছে। সব সমস্যা মিটিয়ে অবশেষে আজ মঙ্গলবার রাত ১২টার পর থেকে ঘরে ঘরে গিয়ে তথ্য সংগ্রহ শুরু করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। বর্ষা মৌসুমে শুমারি করতে গিয়ে সরকারকে গচ্চা দিতে হচ্ছে ৩২ কোটি টাকা। গত বছরের জানুয়ারিতে শুমারি হওয়ার কথা ছিল।

জনশুমারি ও গৃহগণনা প্রকল্পের পরিচালক (পিডি) দিলদার হোসেন স্বীকার করেন, ট্যাব কেনাকাটায় জটিলতা ও করোনার কারণে যথাসময়ে শুমারি করা যায়নি। তাই বর্ষাকালে করতে হচ্ছে।

বিবিএসের তথ্য বলছে, স্বাধীনতার পর এখন পর্যন্ত দেশে পাঁচটি আদমশুমারি হয়েছে। ১৯৭৪ সালে প্রথম, ১৯৮১ সালে দ্বিতীয়, ১৯৯১ সালে তৃতীয়, ২০০১ সালে চতুর্থ ও ২০১১ সালে পঞ্চম আদমশুমারি হয়। ২০১৩ সালে পরিসংখ্যান আইনের মাধ্যমে আদমশুমারি শব্দটিকে পরিবর্তন করে জনশুমারি করা হয়। আগের প্রতিটি শুমারি হয়েছিল জানুয়ারি থেকে মার্চ মাসের মধ্যে। এবারই প্রথম বর্ষাকালে জনশুমারি হচ্ছে।

শুমারির জন্য প্রথম সময় নির্ধারণ করা হয় গত বছরের ২ থেকে ৮ জানুয়ারি। কিন্তু করোনা মহামারির কারণে পিছিয়ে ২৫ থেকে ৩১ অক্টোবর ও পরে ২৫ থেকে ৩১ ডিসেম্বর সময় নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু ট্যাব কেনাকাটার জটিলতার কারণে তৃতীয় দফার সময় পিছিয়ে ১৫ থেকে ২১ জুন সময় ঠিক করা হয়। এবার শুমারিতে ৩ লাখ ৬৫ হাজার গণনাকারী ও ৬৩ হাজার সুপারভাইজার থাকছেন।

বৈরী আবহাওয়ার বিষয়টি মাথায় রেখে আমরা সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছি। গণনাকারী ও সুপারভাইজারদের কাছে সব উপকরণ পাঠানো হয়েছে।
দিলদার হোসেন, জনশুমারি ও গৃহগণনা প্রকল্পের পরিচালক

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বর্ষা মৌসুমে শুমারি করতে গিয়ে ব্যয়ের নতুন কিছু খাত যুক্ত হয়েছে। তথ্য সংগ্রহকারী ও সুপারভাইজারদের সুরক্ষায় সাড়ে চার লাখ ছাতা কেনা হয়েছে। এতে ব্যয় হয়েছে প্রায় ১৩ কোটি টাকা। প্রতিটি ছাতা ২৬০ টাকা করে কেনা হয়। ট্যাবের জন্য পানিনিরোধক ব্যাগ কেনায় ব্যয় হয়েছে ৩ কোটি টাকা।

বৃষ্টিতে দুর্গম এলাকায় যেতে স্পিডবোট বা ট্রলার লাগবে। এ জন্য যাতায়াত ভাতা (হায়ারিং চার্জ) খাতে বরাদ্দ ১৬ কোটি থেকে বাড়িয়ে ৩৩ কোটি টাকা করা হয়েছে। ভ্রমণ ও দৈনিক ভাতা বাবদ বরাদ্দ ৩১ কোটি থেকে বাড়িয়ে ৬৫ কোটি টাকা করা হয়েছে। অন্য সময়ে শুমারি হলে বাড়তি এই অর্থ খরচ হতো না।

আরও পড়ুন

বর্ষায় জনশুমারি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিবিএসের সাবেক মহাপরিচালক কৃষ্ণা গায়েন ও পরিচালক সাইদুর রহমান বললেন, ঘরে ঘরে গিয়ে তথ্য সংগ্রহের জন্য বর্ষাকাল উপযোগী সময় নয়। এ সময় গণনা করলে অনেকে বাদ পড়ার শঙ্কা থাকবে।

জনশুমারি ও গৃহগণনা প্রকল্পের পরিচালক দিলদার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘বৈরী আবহাওয়ার বিষয়টি মাথায় রেখে আমরা সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছি। গণনাকারী ও সুপারভাইজারদের কাছে সব উপকরণ পাঠানো হয়েছে।’

শুমারির মধ্যে বৃষ্টি

আবহাওয়া অফিস বলছে, ১৫ জুন থেকে সারা দেশেই বৃষ্টিপাত হতে পারে। ১৯ জুন থেকে বৃষ্টি কমতে পারে।

আবহাওয়াবিদ বজলুর রশীদ প্রথম আলোকে বলেন, সিলেট, রংপুর ও ময়মনসিংহ বিভাগে প্রতিদিনই বৃষ্টি হচ্ছে। তবে ১৫ জুন থেকে সারা দেশেই বৃষ্টিপাত হতে পারে। তিনি বলেন, ‘আমরা বিবিএসকে ইতিমধ্যে বৈরী আবহাওয়ার কথা জানিয়েছি।’

আবার উত্তরাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে। পাঁচটি নদীর পানি বাড়ছে। লালমনিরহাট, নীলফামারীসহ উত্তরাঞ্চলের কয়েকটি জেলার নিম্নাঞ্চল তলিয়ে যেতে পারে বলে আভাস দিয়েছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র। এমন বাস্তবতায় তথ্য সংগ্রহ করতে হবে গণনাকারীদের।

নির্বাচনের প্রভাব

নির্বাচনও শুমারির ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। আগামীকাল কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচন। একই দিন আরও শতাধিক ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) ও কয়েকটি পৌরসভায় নির্বাচন হচ্ছে। এসব নির্বাচন পিছিয়ে নিতে সুপারিশ করেছিল বিবিএস। কিন্তু নির্বাচন পেছানো হয়নি।

বিবিএসের কর্মকর্তারা বলছেন, এসব নির্বাচনের কারণে তাঁদের তথ্য পেতে বেগ পেতে হবে।

প্রথম ডিজিটাল শুমারি: ট্যাব কেনায় জটিলতা

ষষ্ঠ জনশুমারি ডিজিটাল পদ্ধতিতে করার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। কিন্তু তথ্য সংগ্রহের জন্য ট্যাব কেনা নিয়ে শুরু হয় জটিলতা। ৩ লাখ ৯৫ হাজার ট্যাব সংগ্রহের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হলে এতে অংশ নেয় ফেয়ার ইলেকট্রনিকস লিমিটেড ও ওয়ালটন ডিজি-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। এতে ফেয়ার ইলেকট্রনিক ৫৩৭ কোটি টাকা ও ওয়ালটন ৪০২ কোটি টাকা দর প্রস্তাব করে। দুটি কোম্পানির দামের পার্থক্য ১৩৫ কোটি টাকা।

দুই প্রতিষ্ঠানের দরের পার্থক্য নিয়ে প্রশ্ন তোলে ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। এ কারণে তিনবার ট্যাব কেনার প্রস্তাব কমিটির বৈঠক থেকে ফেরত পাঠানো হয়। পরে পুনঃ দরপত্র আহ্বান করা হয়। এতে ওয়ালটন ৪৪৮ কোটি টাকা ও ফেয়ার ইলেকট্রনিকস ৫৩৭ কোটি টাকা দর প্রস্তাব করে। পরে গত ৩ মার্চ কমিটির সভায় ওয়ালটনকে কাজটি দেওয়া হয়।

বিবিএসের সাবেক মহাপরিচালক কৃষ্ণা গায়েন বলেন, গত বছর শুমারি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু করোনা ও ট্যাব কেনাকাটায় জটিলতার কারণে দেরি হয়েছে।