বিভাগই নেই তবু তিনি বিভাগীয় প্রধান
শিশুর চিকিৎসককে অ্যালার্জি ও ক্লিনিক্যাল ইমুনোলজি বিভাগে পদায়ন করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। পদায়ন পাওয়া চিকিৎসক ‘অ্যালার্জি বিভাগের প্রধান’ পরিচয় দিয়ে নিজের নামফলক লাগিয়েছেন। অথচ ওই হাসপাতালে অ্যালার্জি বিভাগই নেই।
এটি ঘটেছে রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। পদায়ন পাওয়া ওই চিকিৎসকের নাম গোবিন্দ চন্দ্র দাস। পান্থপথে এই চিকিৎসকের ব্যক্তিগত চেম্বার আছে। তিনি শিশু, অ্যালার্জি ও হূদেরাগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক হিসেবে রোগী দেখছেন বহুদিন ধরে। সরকারি কর্মকর্তারা অভিযোগ করেছেন, ঢাকায় থাকার জন্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগসাজশে তিনি অ্যালার্জি বিভাগে পদায়ন নিয়েছেন।
গোবিন্দ চন্দ্র ফরিদপুর মেডিকেল কলেজে শিশু বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ছিলেন। ২০১৩ সালের ১৯ আগস্ট স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় তাঁকে ওএসডি করে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে অ্যালার্জি বিভাগে সহযোগী অধ্যাপক পদে সংযুক্তি দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা অভিযোগ করেছেন, ওই চিকিৎসককে পদায়ন করতে গিয়ে একাধিক অনিয়ম করেছে মন্ত্রণালয়। প্রথমত, শিশু বিষয়ের চিকিৎসককে অ্যালার্জি বিষয়ে পদায়ন করা যায় না। দ্বিতীয়ত, সহযোগী অধ্যাপকের পদায়ন মেডিকেল কলেজে হয়, হাসপাতালে হয় না।
বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের রেজিস্ট্রার এ জেড এম বসুনিয়া প্রথম আলোকে বলেছেন, অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপকের পদগুলো একাডেমিক পদ। তাঁদের নিয়োগ বা পদায়ন হবে মেডিকেল কলেজ বা মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে। হাসপাতালে তাঁদের পদায়নের সুযোগ নেই। একই কথা বলেছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের একাধিক শিক্ষক।
সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষের কার্যালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এখানে অ্যালার্জি অ্যান্ড ক্লিনিক্যাল ইমুনোলজি বিভাগ নেই। তাই এখানে তিনি যোগ দেননি। এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ওই হাসপাতালেও এই বিভাগটি নেই।
তবে হাসপাতালের বহির্বিভাগের দ্বিতীয় তলার একটি কক্ষ গোবিন্দ চন্দ্রকে বসতে দেওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে হাসপাতালের উপপরিচালক উত্তম কুমার বড়ুয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা মন্ত্রণালয়ের আদেশ পালন করেছি মাত্র।’
মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলেছেন, দেশের কোনো মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অ্যালার্জি ও ক্লিনিক্যাল ইমুনোলজি বিভাগ নেই। কাগজপত্র দেখে তাঁরা বলেন, সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী আ ফ ম রুহুল হকের নির্দেশে তাঁরা এ কাজ করেছিলেন।
যোগাযোগ করা হলে রুহুল হক বলেন, গোবিন্দ চন্দ্র দাসকে তিনি মনে করতে পারেন না। ঠিক কী সুপারিশ তিনি করেছিলেন, তা-ও তাঁর মনে নেই। তিনি বলেন, পদ শূন্য না থাকলে অন্য বিভাগে চিকিৎসক সংযুক্তি দেওয়ার রেওয়াজ আছে। কিন্তু ওই চিকিৎসক কোন বিভাগে চিকিৎসা করছেন, তা দেখার দায়িত্ব হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের।
গোবিন্দ চন্দ্র বলেন, ১৯৯৬ সালে স্পেন থেকে তিনি অ্যালার্জির ওপর প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন। তাঁকে অ্যালার্জির সহযোগী অধ্যাপকের পদে পদায়ন করে অনিয়ম করেনি মন্ত্রণালয়। জানালেন, দিনে পাঁচ-ছয়জন রোগী তাঁর কাছে আসে।
কাগজপত্রে দেখা যায়, ফরিদপুর মেডিকেল কলেজে পদায়নের আগে গোবিন্দ নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে শিশু বিভাগে ছিলেন। এমবিবিএস পাস করার পর তিনি শিশু চিকিৎসায় ডিপ্লোমা করেন।
পান্থপথে চেম্বারে যোগাযোগ করা হলে এই প্রতিবেদককে বলা হয়, ডা. গোবিন্দ চন্দ্র হূদেরাগের চিকিৎসা দেন। ‘কী চিকিৎসা’ জানতে চাইলে তাঁর সহকারী বলেন, ‘যোগ ব্যায়াম ও মেডিটেশন’। ‘ডাক্তার কি অ্যালার্জির চিকিৎসাও করেন?’ উত্তরে সহকারী বলেন, ‘তিনি সব রোগের চিকিৎসা করেন।’