মানবাধিকারই গান্ধী দর্শনের মূল ভিত্তি

গতকাল রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে মহাত্মা গান্ধীর ১৪৬তম জন্মবার্ষিকী ও আন্তর্জাতিক অহিংসা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন (বাঁ থেকে) পলিন টেমেসিস, পেরি মায়াদু, দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, রাশেদ খান মেনন, সুলতানা কামাল ও ঝর্ণাধারা চৌধুরী l প্রথম আলো
গতকাল রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে মহাত্মা গান্ধীর ১৪৬তম জন্মবার্ষিকী ও আন্তর্জাতিক অহিংসা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন (বাঁ থেকে) পলিন টেমেসিস, পেরি মায়াদু, দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, রাশেদ খান মেনন, সুলতানা কামাল ও ঝর্ণাধারা চৌধুরী l প্রথম আলো

গান্ধীর দর্শনের মূল ভিত্তিই হচ্ছে মানবাধিকার। তিনি সাম্যের কথা বলতেন, শান্তির কথা বলতেন, অহিংসার কথা বলতেন। ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের জনক মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধীর ১৪৬তম জন্মবার্ষিকী ও আন্তর্জাতিক অহিংসা দিবস উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।
রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে গতকাল শনিবার গান্ধী আশ্রম ট্রাস্ট ‘গান্ধী-দর্শনের নিরিখে মানবাধিকার’ শীর্ষক এই সভার আয়োজন করে।
সভায় বিশেষ অতিথি বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বলেন, ‘গান্ধী যে মানবাধিকারের কথা বলে গেছেন, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সনদ এবং আমাদের সংবিধানেও সেই ছাপ দেখতে পাই। রাজনৈতিক চরিত্রকে ছাপিয়ে গেছে তাঁর জীবনদর্শন। বঙ্গবন্ধুর অসহযোগ আন্দোলন এবং গান্ধীর সত্যাগ্রহ আন্দোলনের মধ্যে মিল খুঁজে পাওয়া যায়।’
প্রাবন্ধিক সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, মার্টিন লুথার কিং কিংবা নেলসন ম্যান্ডেলার মতো মানবতাবাদী নেতারা উদ্বুদ্ধ হয়েছেন গান্ধীর এ দর্শনে।
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন গান্ধী আশ্রম ট্রাস্টের চেয়ারম্যান ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, মানবাধিকারকে কর্তব্যজ্ঞান করতেন মহাত্মা গান্ধী। এর প্রকাশ ও প্রয়োগ—এই দুটোই ছিল তাঁর দর্শনের মূল জায়গা।
সভার সূচনা বক্তব্যে ট্রাস্টের সেক্রেটারি ঝর্ণাধারা চৌধুরী মানবতাবোধ জাগিয়ে তুলতে এবং অমানবিকতা রোধে গান্ধীর জীবন থেকে শিক্ষা নেওয়ার আহ্বান জানান।
সভায় মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) নির্বাহী পরিচালক ও মানবাধিকারকর্মী সুলতানা কামাল। তিনি বলেন, ‘মানবাধিকারের মৌলিক সূত্র হচ্ছে—যে অবস্থা তুমি নিজের জন্য চাও, অন্যের জন্য তুমি সে অবস্থাটাই চাইবে। আর বিচারব্যবস্থার মধ্যে কখনোই এমন কিছু প্রবেশ করতে পারে না, যা অন্যের ক্ষতির কারণ হবে। গান্ধীও একই কথা বলতেন। তিনি তাঁর যাপিত জীবনেও এর চর্চা চালিয়ে গেছেন।’
বাংলাদেশে নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়ন ডেলিগেশনের রাষ্ট্রদূত পেরি মায়াদু বলেন, সব ধরনের বৈষম্য ও অবিচারের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েও গান্ধী দেখিয়েছেন, সভ্যতাকে এগিয়ে নিতে অহিংসাই হচ্ছে সর্বোৎকৃষ্ট পথ।
জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর পলিন টেমেসিস বলেন, ‘গান্ধীর অহিংসার দর্শন আমাদের বিশ্বাস করতে শিখিয়েছে যে আমরা সবাই মিলে পৃথিবীটাকে আরও বাসযোগ্য করে তুলতে পারি।’
ভারতীয় কূটনীতিক নিনাদ দেশপান্ডে বলেন, গান্ধী শান্তি ও অহিংসার যে বাণী দিয়ে গোটা ভারতবর্ষকে আন্দোলিত করেছিলেন তা কালক্রমে বৈশ্বিক রূপ পেয়েছে।
শান্তি পদযাত্রা: অহিংসা দিবস উপলক্ষে ‘সংঘাত নয়, ঐক্যের বাংলাদেশ গড়ি’ স্লোগান নিয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) এবং দ্য হাঙ্গার প্রজেক্ট যৌথভাবে এক মানববন্ধন ও শান্তি পদযাত্রার আয়োজন করে। দেশের ৫৩টি জেলা সদর ও ৬৫টি উপজেলায় দিবসটি উদ্যাপন করা হয়।