মোবাইল ব্যাংকিং সম্ভাবনা ও নিরাপত্তা
৬ এপ্রিল ২০১৬, প্রথম আলোর আয়োজনে ‘মোবাইল ব্যাংকিং: সম্ভাবনা ও নিরাপত্তা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত আলোচকদের বক্তব্য সংক্ষিপ্ত আকারে এই ক্রোড়পত্রে প্রকাশিত হলো।

আলোচনায় সুপারিশ
* প্রধান কাজ হলো জনসাধারণকে ব্যাপকভাবে সচেতন করা। তাহলে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের ক্ষেত্রে অনিয়ম হবে না।
* স্মার্টফোনে ক্রেডিট কার্ডের সুবিধা দেওয়া জরুরি প্রয়োজন
* মোবাইল অর্থ–ব্যবস্থাপনার বিষয়টি ব্যবসায়িকভাবে লাভজনক পর্যায়ে আনা প্রয়োজন
* বাংলাদেশ ব্যাংক, বিটিআরসি ও মোবাইল অপারেটর—সবাই একসঙ্গে কাজ করলে মোবাইল অর্থ–ব্যবস্থাপনার নিরাপত্তা আরও শক্তিশালী হবে।
* বাংলাদেশ ব্যাংক বা বিটিআরসি একটি সেল তৈরি করতে পারে, যেখানে মানুষ তার অভিযোগ নিয়ে যাবে
আলোচনা
আব্দুল কাইয়ুম: আজকের আলোচনার মূল বিষয় মোবাইল ব্যাংকিং। এর মাধ্যমে গ্রামীণ অর্থনীতিতে গতি সৃষ্টি হয়েছে। প্রবাসীদের প্রেরিত অর্থ গ্রামের আত্মীয়স্বজনের কাছে সরাসরি পৌঁছে দিতে মোবাইল ব্যাংকিং ভূমিকা রাখছে।
সিম রেজিস্ট্রেশন হওয়ায় মোবাইল ব্যাংকিংয়ের ক্ষেত্রে আরও নিরাপত্তা আসবে। আর্থিক লেনদেনের ক্ষেত্রে আমাদের দেশে মোবাইল ব্যাংকিং ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। নগদ টাকা বহন করা ঝুঁকিপূর্ণ। তা ছাড়া কারও কাছ থেকে টাকা পেতে ও পাঠাতে আগে অনেক সময় লাগত।
দেশে মোবাইল ব্যাংকিং দ্রুত টাকা প্রাপ্তি ও পাঠানোর সুযোগ করে দিয়েছে। তবে প্রযুক্তিনির্ভর এ লেনদেনের কিছু ঝুঁকিও রয়েছে। এসব ক্ষেত্রে গ্রাহকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা জরুরি। এখন আলোচনা করবেন টি আই এম নুরুল কবির।

টি আই এম নুরুল কবির: এ দেশের কোটি কোটি মানুষ ব্যাংকিং সেবার বাইরে ছিল। বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি উদ্যোগ ছিল যেন এ দেশের সব মানুষ ব্যাংকিং সেবার সুযোগ গ্রহণ করতে পারে। এটি বাস্তবায়ন করার জন্য তারা দেশের মোবাইল অপারেটরদের সেবাকে কাজে লাগায়। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংক মোবাইল ব্যাংকিং সেবা চালু করে।
এখন দেশের কোটি কোটি মানুষ মোবাইল ব্যাংকিংয়ের সুবিধা গ্রহণ করছে। এর মাধ্যমে প্রাথমিক পর্যায়ে আমরা ব্যাপক অভিজ্ঞতা গ্রহণ করেছি। এর ভিত্তিতে আমাদের ভবিষ্যতে কাজ করতে হবে। যেকোনো লেনদেনের ক্ষেত্রে নিরাপত্তা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের ক্ষেত্রেও বিষয়টি সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
একটি বিদেশি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রযুক্তি এখন রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের হাতিয়ার। আজ মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে আমাদের দেশে ব্যাপক অর্থনৈতিক উন্নয়ন হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে মোবাইল অপারেটররা এ উন্নয়নের অন্যতম অংশীদার। এই দীর্ঘ সময়ে মোবাইল অপারেটরদের অনেক সফলতার মধ্যে একটি বড় সফলতা হলো, তারা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের গ্রাহকদের অর্থ লেনদেনের একটি জনপ্রিয় মাধ্যম হয়ে উঠতে সফল হয়েছে।
মোবাইল অপারেশন খাতে সবচেয়ে বেশি জ্ঞানভিত্তিক প্রকৌশলী আছেন। তাঁদের জ্ঞান ও সেবা আমাদের আরও কাজে লাগাতে হবে। শুধু আমরা বাহক হিসেবে কাজ করব না।

মো. আবুল কাশেম খান: ২০১১ সালে আমাদের এ সেবা চালু হয়। তখন উদ্দেশ্য ছিল আন–ব্যাংক (যারা ব্যাংকিং কার্যক্রম করে না) মানুষেক কীভাবে ব্যাংকিং সেবার আওতায় আনা যায়। কিন্তু আজ মোবাইল ব্যাংকিং সেবা এত সম্প্রসারিত হয়েছে যে আন–ব্যাংক ও ব্যাংকিং কার্যক্রমের আওতায় যারা আছে, সবাই এ সেবা গ্রহণ করছে।
মোবাইল ব্যাংকিং এখন একটি ব্যাপক জনপ্রিয় মাধ্যম। এর মাধ্যমে টাকা জমা করা যায়, ওঠানো যায়, বিভিন্ন প্রকার সেবার বিল পরিশোধ করা যায়। টেলিফোন ও মোবাইল অপারেটরদের বিশাল নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে এ সেবা প্রদান করা সম্ভব হচ্ছে।
অন্য সব সেবার নিরাপত্তার মতো মোবাইল ব্যাংকিংয়ের সেবারও নিরাপত্তা জরুরি। যার কাছে সিম আছে, তার নামে হিসাব খোলা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে কোনো কোনো সময় অনিয়মের সুযোগ সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা ছিল। এখন যেহেতু সিম রেজিস্ট্রেশন হচ্ছে, এ সেবার নিরাপত্তা আরও বেশি শক্তিশালী হবে।
উপকারভোগীর হিসাব খোলার সময় সতর্ক থাকলে ভুলভ্রান্তির আশঙ্কা থাকে না। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের ক্ষেত্রে মোবাইল, সিম ও পিন নম্বর সঠিক ব্যক্তির কাছে থাকতে হবে। তাহলে অনিয়ম হওয়ার কোনো আশঙ্কা থাকে না। ফোন করে নিশ্চিত না হলে আমরা কোনো লেনদেন করি না।
মোবাইল ব্যাংকিংয়ে এখনো আমরা লোকসানে আছি। বাজারটি ডিস্ট্রিবিউটর ও এজেন্ট–নির্ভর। ফলে কমিশনের সম্পূর্ণ অর্থই খরচ হয়ে যায়। আমরা এটাকে সেবা হিসেবে নিয়েছি বলেই কাজটি করে যাচ্ছি। নিয়ন্ত্রক সংস্থা উদ্যোগ নিলে আমরা হয়তো লাভ করতে পারতাম। তারা বিষয়টি বিবেচনা করবে বলে আশা করি।
কোনো প্রযুক্তি যখন ব্যাপক মাত্রায় সম্প্রসারিত হয়, তখন অনেকে অনেক কিছু জানে না। এই না জানার কারণে অনেক ধরনের অনিয়ম হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এ ক্ষেত্রে প্রধান কাজ হলো জনসাধারণকে ব্যাপকভাবে সচেতন করা। সবাই সচেতন হলে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের ক্ষেত্রে অনিয়ম হওয়ার সুযোগ কমে যাবে।

রিয়াদ হাসনাইন: বাংলাদেশে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের অবস্থা খুবই সমৃদ্ধ। এখন প্রায় তিন কোটি গ্রাহক আছে। প্রতিদিন ৫০০ কোটি টাকা লেনদেন হয়। দক্ষিণ এশিয়ায় আমাদের অবস্থান প্রথম। বিশ্বে এ ক্ষেত্রে আমরা দ্বিতীয় বা তৃতীয় অবস্থানে আছি।
আমাদের দেশে মোবাইল লেনদেনের ৯৫ শতাংশই গ্রাহক থেকে গ্রাহকের পর্যায়ে হচ্ছে। কিন্তু মোবাইল অর্থ–ব্যবস্থাপনা বলতে কেবল ব্যক্তি থেকে ব্যক্তির লেনদেন বোঝায় না। এর ক্ষেত্র অনেক ব্যাপক ও বিস্তৃত হতে পারে। মোবাইল আর্থিক ব্যবস্থাপনার তিনটি ধাপ আছে—শুরু, সম্প্রসারণ ও পূর্ণতা।
গ্রাহক থেকে গ্রাহকের পর্যায়ে লেনদেনের কাজটি শুরুতে হয়। সম্প্রসারণ ধাপে আন্তলেনদেন হয়। পূর্ণতার ক্ষেত্রে মোবাইলে সঞ্চয়, ঋণ, ইনস্যুরেন্স, বিজনেস টু বিজনেস পেমেন্ট, রেমিট্যান্স—এই সেবাগুলো পাওয়া যাবে।
মোবাইল সেবার ব্যাপক সম্প্রসারণ হলেও এখনো আমরা প্রাথমিক সেবাগুলো পাচ্ছি। আগামী কয়েক বছরের মধ্যে একে পূর্ণতার দিকে নিয়ে যেতে হলে নিয়ন্ত্রক সংস্থা (রেগুলেটরি বডি), মোবাইল অপারেটর ও বিনিয়োগকারীদের অনেক কাজ করতে হবে।
একসময় এক অপারেটর থেকে অন্য অপারেটরে কল করতে সমস্যা হতো। কলরেটও ভিন্ন ছিল। বিটিআরসি নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে এ সমস্যার সমাধান করেছে। এখন আবার মোবাইল আর্থিক সেবার সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে কিছু প্রতিবন্ধকতা দেখা দিয়েছে। যেমন বিকাশ থেকে বিকাশ ছাড়া অন্য অপারেটরে টাকা পাঠানো যায় না। কিন্তু মোবাইল কলের ক্ষেত্রে গ্রামীণ, বাংলালিংক বা অন্য যেকোনো অপারেটর থেকে যেকোনো অপারেটরকে কল করতে পারি। মোবাইল আর্থিক সেবার ক্ষেত্রে এই সুযোগ নেই।
বিটিআরসি উদ্যোগ নিলে খুব সহজেই এ সেবা চালু করা যেতে পারে। মোবাইল শুধু ফোন ও সেলফি তোলার জন্য নয়। এখন আমাদের মোবাইল ওয়ালেট (মানিব্যাগ) সমাধানের কথা ভাবতে হবে। মোবাইল ফোনকে যেন ওয়ালেট হিসেবে ব্যবহারের সব সুযোগ গ্রহণ করতে পারি। দেশে ৭০ শতাংশের বেশি আন–ব্যাংক জনসংখ্যা আছে। তাদের কোনো ধরনের ব্যাংকিং সেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। আমরা যখন মহল্লায় মুরগি বা মাছ কিনতে যাই, তখন নগদ টাকায় এগুলো কিনতে হয়। ক্রেডিট কার্ডের সুবিধা এদের নেই। ক্রেডিট কার্ডের সুবিধাটা মোবাইলে দেওয়া যেতে পারে। তাহলে ৭০ শতাংশ আন–ব্যাংক জনসংখ্যা মোবাইল আর্থিক ব্যবস্থাপনার মধ্যে আসবে। এটি হবে মোবাইল ব্যাংকিং সম্প্রসারণের এক নতুন বিপ্লব।
তিন থেকে পাঁচ হাজার টাকার একটা স্মার্টফোনকে মোবাইল পজ হিসেবে ব্যবহার করতে পারলে ক্রেডিট কার্ডের সুবিধা পাওয়া যাবে। তাহলে দেশের প্রায় সব মানুষই মোবাইল আর্থিক সেবার আওতায় আসবে। একটি পরিকল্পনা করে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে এমন অনেক সেবা সংযুক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। এসব ক্ষেত্রে আমরা সব ধরনের সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত আছি।

শাহাদত উল্লাহ খান: শিওর ক্যােশ বাংলাদেশে পাঁচটি ব্যাংক—যেমন ফার্স্ট সিকিউরিটি, এনসিসি, যমুনা, বাংলাদেশ কমার্শিয়াল ও রূপালী ব্যাংক—মোবাইল ব্যাংকিং করছে। দেশে বছরে পরিশোধ হয় জিডিপির প্রায় সাড়ে সাত গুণ। যদি মোট পরিশোধের ১০ শতাংশও মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে করা যায়, তার পরিমাণ হবে ১৫০ বিলিয়ন ডলার।
মোবাইল ব্যাংকিংয়ে আমরা অনেকটা এগিয়েছি। আরও অনেক এগোনোর সুযোগ আছে। আন–ব্যাংক মানুষের কাছ থেকে ২০ বিলিয়ন ডলার জমা পাওয়া সম্ভব। কেনিয়াতে এটা প্রায় পাঁচ বিলিয়ন ডলার হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের অর্থনীতি কেনিয়ার প্রায় সাড়ে পাঁচ গুণ।
আমরা যে প্রযুক্তি ব্যবহার করি, এটা আমাদের দেশেই তৈরি। আর্থিক ব্যবস্থাপনার বিভিন্ন সুবিধা এ প্রযুক্তিতে আছে। এ মাসেই আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়ার একটি ম্যাগাজিন সারা বিশ্বের ১০টি মোবাইল ব্যাংকিং সমাধানকে তালিকাভুক্ত করেছে, তার মধ্যে আমাদের শিওর ক্যাশের সমাধানটি রয়েছে। বাকি নয়টি সমাধানই আমেরিকান কোম্পানি।
আমাদের পদ্ধতিতে লেনদেনের সুবিধা রয়েছে। দেশের ৩০০টির বেশি নামকরা স্কুল-কলেজ, গ্রামীণ শক্তিসহ অন্যরা আমাদের এ পদ্ধতি গ্রহণ করছে। ব্যক্তি থেকে ব্যক্তি লেনদেনের বাইরেও অনেক কাজ হচ্ছে। আমাদের একটি মার্চেন্ট এপিআই আছে। এর মাধ্যমে ই-কমার্সে সরাসরি অনলাইনে অর্থ সংগ্রহ করা যাচ্ছে। আমরা অনেক নতুন সেবার কথা ভাবছি।
বাংলাদেশ ব্যাংক একটি জরিপ থেকে বলেছে, বাংলাদেশে মোবাইল সেবা সবচেয়ে সস্তায় পাওয়া যায়। আজকের আলোচনায় ব্যয় কমানোর বিষয়টি এসেছে। ব্যয় শুধু কমানোর বিষয়টি একমুখী। ব্যয় কমানো-বাড়ানো দুটি বিষয়ই ভাবা প্রয়োজন। যারা এ সেবা দিচ্ছে, তারা এখনো লাভজনক অবস্থায় আসতে পারেনি। মোবাইল অর্থ–ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে ব্যয়ের থেকে আমাদের দেশের মানুষ সুবিধাই বেশি পাচ্ছে। তবে মোবাইল অর্থ–ব্যবস্থাপনার বিষয়টি ব্যবসায়িকভাবে লাভজনক পর্যায়ে আনা প্রয়োজন।

তপন কান্তি সরকার: মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশে অপার সম্ভাবনার দুয়ার উন্মুক্ত হয়েছে। ব্যাংকিং কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়, এমন এক বিশাল জনগোষ্ঠী ব্যাংকিং সেবার আওতায় এসেছে। এটি ছিল বাংলাদেশ ব্যাংকের এক অসাধারণ উদ্যোগ। এ জন্য তারা অবশ্যই ধন্যবাদ পাবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গাইডলাইনে বলা আছে, লেনদেন হবে ব্যক্তি থেকে ব্যক্তি। অর্থাৎ একজনের হিসাব থেকে অন্যজনের হিসাবে যাবে। ডাচ্–বাংলা ব্যাংকসহ দু–একটি ব্যাংক হয়তো এ নিয়ম মেনে চলে। সব অপারেটর এটি মেনে চলে না।
অনেক ক্ষেত্রে যার কাছে টাকা পাঠানো হচ্ছে তার হিসাব থাকে না। এজেন্ট বা অন্য কারও হিসাবে পাঠানো হয়। কখনো কখনো এটা বিরাট ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। এমন আরও অনেক কারণে আজ মোবাইল ব্যাংকিংয়ের নিরাপত্তার বিষেয় আলোচনা হচ্ছে। তবে বিটিআরসি যে সিম রেজিস্ট্রেশনের ব্যবস্থা করেছে, এই উদ্যোগ শেষ হলে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের ক্ষেত্রে নিরাপত্তা অনেক বেশি শক্তিশালী হবে। এ ক্ষেত্রে পরিশোধের অনেক বৈচিত্র্য আসবে। ২০১৪ সালের জুনে সিআইডির এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, মোবাইল অর্থ–ব্যবস্থাপনার ৪৫৮টি ঘটনার অভিযোগ এসেছে। এর মধ্যে ১৬৯টি অপহরণ, ২৩টি চাঁদাবাজি, ১৫৫টি জালিয়াতি, ৪৩টি প্রতারণা ও অন্যান্য ১০টি।
অভিযোগের বাইরে অসংখ্য লেনদেন, যা আমরা জানি না। মোবাইল ব্যাংকিংয়ে প্রতারণার ক্ষেত্রে মানুষ কোথায় অভিযোগ করবে, এর কোনো সঠিক জায়গা নেই। বাংলাদেশ ব্যাংক বা বিটিআরসি একটি সেল তৈরি করতে পারে, যেখানে মানুষ তার অভিযোগ নিয়ে যাবে।
একজন ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি কত জায়গায় যাবে? কোথায় গেলে সে সমাধান পাবে? এর একটি নির্দিষ্ট জায়গা থাকা প্রয়োজন। নিরাপত্তার জন্য লেনদেনের সত্যতা যাচাই করা খুব প্রয়োজন।
তথ্যের গোপনীয়তা রক্ষা আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এ রকম অনেক বিষয় আছে, যেগুলো সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে। বাংলাদেশে মোবাইল অর্থ–ব্যবস্থাপনার অপার সম্ভাবনার দুয়ার উন্মুক্ত হয়েছে, এটিকে যত রকমভাবে নিরাপত্তা দেওয়া যায়, সেটা দিতে হবে।

শেখ মো. মনিরুল ইসলাম: পাঁচ বছর আগে বাংলাদেশ ব্যাংক খুব সাধারণ মানুষ, যারা ব্যাংকিং কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়, তাদের ব্যাংকিং সেবার আওতায় আনার উদ্যোগ নিয়েছিল। আজ পাঁচ বছর পর এটি ব্যাপক সফলতা অর্জন করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক এ কাজের স্বীকৃতিও পেয়েছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থা নিয়মনীতি সঠিকভাবে না মানলে ঝুঁকি থাকবে।
আমাদের অধিকাংশ গ্রাহক খুব সাধারণ মানুষ। এরা রিকশা চালায়, দিনমজুর ইত্যাদি। প্রচলিত পদ্ধতিতে হিসাব খুলতে যে কাগজপত্র লাগে, এ ধরনের বা এর কাছাকাছি মানেরও কাগজপত্র এরা দিতে পারে না।
অনেক গ্রাহক ভাসমান। এদের স্থায়ী ঠিকানাটাই অস্থায়ী। তাই সাধারণ গ্রাহকদের মোবাইল ব্যাংকিং হিসাব খোলার বিষয়টি অনেক সহজ–সরল হওয়া উচিত। যেহেতু নিরাপত্তার বিষয় আছে, তাই ইচ্ছে করলেই যে সহজ করা যাবে, সেটা হয়তো না–ও হতে পারে। তবে এমন একটি ব্যবস্থা সৃষ্টি করা উচিত, যাতে নিরাপত্তাও থাকে আবার জটিলতাও কমে।
বিশ্বের যেখানে আর্থিক সম্প্রসারণ হয়েছে, সেখানেই কোনো–না–কোনোভাবে প্রতারণা হয়েছে। যারা প্রতারণা করবে, তারা কখনো সঠিক তথ্য দেয় না। তারা সব সময় ভুল তথ্য দিয়ে হিসাব খোলে। প্রতারণার সময় মানুষের সরলতা, অনুভূতি, লোভ ইত্যাদি কাজে লাগায়। তবে মানুষকে সচেতন করার কোনো বিকল্প নেই।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক মোবাইল অর্থ–ব্যবস্থাপনাকে এ পর্যন্ত খুব সফলভাবে পরিচালনা করেছে। ভবিষ্যতেও এভাবে চলতে থাকবে বলে আমরা বিশ্বাস করি। আমাদের দেশের সাধারণ মানুষের অনেকে এখনো তেমন কিছু বোঝে না। তারা এজেন্টদের ওপর নির্ভরশীল হয়। এ ক্ষেত্রে কখনো কখনো ভুলভ্রান্তির ফাঁদে পড়ে যায়। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক, বিটিআরসি ও মোবাইল অপারেটর—সবাই একসঙ্গে কাজ করলে মোবাইল অর্থ–ব্যবস্থাপনার নিরাপত্তা আরও শক্তিশালী হবে।

কাজী আজিজুর রহমান: আমরা মোবাইল ব্যাংকিংয়ে আসার জন্য দুই বছর ধরে কাজ করছি। আপনারা আলোচনায় শুনেছেন, এ ক্ষেত্রে কিছু সমস্যা রয়েছে। প্রচলিত ব্যাংকিং পদ্ধতিতে অনেক সতর্ক হয়ে হিসাব খুলি, তারপরও অনিয়ম হয়। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের ক্ষেত্রে খুব সাধারণ দরিদ্র মানুষেক নিয়ে কাজ করতে হয়। এদের নিজেদের কাছেই অনেক সময় সঠিক তথ্য থাকে না। এ ক্ষেত্রে অনিয়ম হওয়ার আশঙ্কা অনেক বেশি থাকে।
এদের কাছে জাতীয় পরিচয়পত্র, পাসপোর্ট—এসব অনেক কিছু থাকে না। এদের রেজিস্ট্রেশন করা অনেক কঠিন হয়ে পড়ে। আমরা কিছুটা অপেক্ষা করছিলাম যে একটা নির্ভরযোগ্য তথ্যের ব্যবস্থা হবে। এখন সিম রেজিস্ট্রেশনে আঙুলের ছাপ এসেছে। এক বছরের মধ্যেই মোবাইল ব্যাংকিংসহ অনেক ক্ষেত্রের অনিয়ম দূর করা সম্ভব হবে। এত দিন প্রথম পক্ষকে সঠিকভাবে চিহ্নিত করতে সমস্যা ছিল। এখন আঙুলের ছাপ আসায় এ সমস্যা আর থাকবে না বলে আশা করি।
মোবাইল ব্যাংকিংয়ের সম্ভাবনা যে বিশাল ও ব্যাপক, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। বিকাশ, ডাচ্–বাংলাসহ অন্যদের মধ্যে আন্তলেনদেেনর ব্যবস্থা করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক একটি উদ্যোগ নিতে পারে। বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যাংকিংয়ের ক্ষেত্রে অনেক উদ্যোগ নিয়েছে। আমরা আজ এক ব্যাংক থেকে অন্য ব্যাংকে টাকা পাঠাতে পারি। বাংলাদেশ ব্যাংক যদি এই উদ্যোগ না নিত, তাহলে মানুষ এই যুগান্তকারী সুবিধা পেত না। তাই প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্ষেত্রে আন্তলেনদেনের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক নিশ্চয়ই একটি ভালো উদ্যোগ নেবে বলে আশা করি।

খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ: বাংলাদেশে মোবাইল ব্যাংকিং সেবার ব্যাপক প্রসার ঘটছে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু সাধারণ প্রবণতা হলো, যে সেবা দ্রুত বাড়ে, সেখানে দুর্নীতি–অনিয়ম দেখা দেয়। তাই মোবাইল ব্যাংকিংয়ের ক্ষেত্রে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা জরুরি।
এখন থেকেই এ বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। প্রয়োজনীয় নিরাপত্তার ব্যবস্থা না করে যদি দ্রুত এ খাত সম্প্রসািরত হয়, তাহলে দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা বেশি থাকবে। বাংলাদেশের আইন অনুসারে ব্যাংক ছাড়া অন্য কেউ টাকা জমা নিতে পারে না। কারণ, কোনো ক্ষয়ক্ষতি হলে ব্যাংক তার ক্ষতিপূরণ দেবে। তাই ব্যাংক ছাড়া অন্যদের অর্থ জমা না নেওয়া উচিত।
ব্যাংক ছাড়া অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান যেগুলো আছে, তারা কোনো অর্থ জমা নিতে পারে না। তারা শুধু ঋণ দিতে পারবে। ব্যাংকগুলো বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে দায়ী। মোবাইল অপারেটররা বিটিআরসির কাছে দায়ী। বিটিআরসির আর্থিক বিষয়ে দেখাশোনার ব্যবস্থা নেই। তাই এ ক্ষেত্রে ব্যাংকিং করতে হলে ব্যাংকের সঙ্গে যুক্ত হয়েই করতে হয়।
আলোচনায় অনেক দুর্ঘটনার বিষয় এসেছে। তাই এজেন্টদের কার্যক্রমকে কীভাবে আরও উন্নত করা যায়, সেটি ভাবা প্রয়োজন। আলোচনায় মোবাইল ব্যাংকিংয়ের আয়-ব্যয়ের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। অনেকেই বলছেন, লাভ হচ্ছে না। তাহলে কেন মোবাইল ব্যাংকিং করছেন? একসময় হয়তো লাভ করবেন। লাভ না হলে কেউ ব্যবসা করবেন না, এটাই স্বাভাবিক। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের লাভ-লোকসানের বিষয়টি সবার জন্য যৌক্তিক পর্যায়ে থাকা প্রয়োজন।

রাশেদা সুলতানা: আমরা বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে কথা বলছি। বিশ্বব্যাপী এর গুরুত্ব রয়েছে। বাংলাদেশে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের সম্ভাবনা বিশাল। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের আর্থিক ব্যবস্থাপনার কথা যখন ভাবি, তখন আমরা ব্যক্তি থেকে ব্যক্তির সেবার কথা ভাবি। মোবাইল আর্থিক সেবার চারটি পর্ব আছে। প্রথমটি হলো ব্যক্তি থেকে ব্যক্তির কাছে টাকা পাঠানো। দ্বিতীয়টি মোবাইল ইনস্যুরেন্স, মোবাইল ক্রেডিট ও মোবাইল সেভিং।
ব্যক্তি থেকে ব্যক্তির কাছে টাকা পাঠানো ছাড়া অন্য সেবাগুলোর ব্যবহার বাংলাদেশে নেই। কিন্তু ভোক্তা, উৎপাদনকারী, ক্রেতা, বিক্রেতা, নাগরিক, সরকারি প্রতিষ্ঠান—এমন অনেক ক্ষেত্রে মোবাইল আর্থিক সেবা ফলপ্রসূ হতে পারে। কিন্তু এগুলোর সেবার ক্ষেত্রও সম্প্রসািরত হচ্ছে না।
বাংলাদেশে ৮০ শতাংশের বেশি এজেন্টভিত্তিক লেনদেন হচ্ছে। ওয়ালেট সেবার পরিধি মাত্র ১০ শতাংশের বেশি নয়। মানুষ যাতে কার্যকরভাবে ওয়ালেট ব্যবহার করে, সে উদ্যোগ নেওয়া এখন জরুরি। মোবাইলে আর্থিক সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান এখনো সীমিত। বাংলাদেশে ব্যাংক ও এর সহযোগী প্রতিষ্ঠান আর্থিক ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সম্পৃক্ত। সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের সম্পৃক্ততা আরও বাড়াতে হবে। বিশ্বে ব্যাংক ছাড়াও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এ কাজ করে থাকে। যেমন বিভিন্ন রকমের কার্ড, স্যামসাং, অ্যাপল পে, গুগল পে, আমাজন, পে প্যালসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বিশ্বে পরিশোধের কাজটি করে থাকে। আমরা কীভাবে এসব প্রতিষ্ঠানের সেবা কাজে লাগাব, সেটিও আমাদের ভাবতে হবে।
আন্তলেনদেনের ক্ষেত্রে টেলিকম ও ব্যাংকিং নিয়ন্ত্রক সংস্থা কীভাবে একসঙ্গে কাজ করবে, আমরা সেটা চিন্তা করতে পারি। প্রযুক্তির চর্চা অনেক বেশি বাড়াতে হবে। গ্রাহকের শিক্ষা–সচেতনতার কোনো বিকল্প নেই। ভবিষ্যতে মোবাইলের আর্থিক ব্যবস্থাপনার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে অনেক ক্ষেত্রে আমাদের এখন কাজ করতে হবে।

ইশতিয়াক হুসেইন: এটুআইকে আর্থিক সহযোগিতা করে ইউএনডিপি ও ইউএসএইড। এটুআই কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠান নয়, আবার কোনো মোবাইল অপারেটরও নয়। আর্থিক ব্যবস্থাপনায় মোবাইল ব্যাংকিং এক নতুন বিপ্লব। আর্থিক ব্যবস্থাপনার এক গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হলো মোবাইল ব্যাংকিং।
আমরা মূলত প্রযুক্তিনির্ভর কাজ করার জন্য প্রযুক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্র তৈরি করি। প্রযুক্তিগত সহায়তা দিয়ে থাকি। শারীরিকভাবে অক্ষম (ডিজঅ্যাবল) ব্যক্তি, মুক্তিযোদ্ধাসহ বিভিন্ন ধরনের পরিশোধের ক্ষেত্রে এটুআই প্রযুক্তিগত সহায়তা দেয়। সামাজিক নিরাপত্তার জন্য যে অর্থ পরিশোধ করতে হয়, কীভাবে সেটা প্রযুক্তির মাধ্যমে করা যায়, সে জন্য এটুআই কাজ করছে। বিভিন্ন মাধ্যমে অর্থ লেনদেনের বিষয়টিকে জনসাধারণ কীভাবে গ্রহণ করে, সেটি দেখার চেষ্টা করছি। পোস্টাল ক্যাশ কার্ড, মোবাইল ব্যাংকিং, এজেন্ট ব্যাংকিং—এসব থেকে আমরা মানুষের প্রতিক্রিয়া দেখার চেষ্টা করছি। এসব মাধ্যমে মানুষের কী সুবিধা হয়, কী সমস্যা হয় গ্রাহকের—এসব বিষয় নিয়ে আমরা কাজ করি। ভবিষ্যতে এসব মাধ্যমকে আরও বেশি কার্যকর করার উদ্যোগ নিই।
আমরা পাইলট প্রকল্প হিসেবে নাগরপুরে সাত হাজার পোস্টাল ক্যাশ কার্ড চালু করেছি। আমরা আরও ১২টি জেলায় পোস্টাল ক্যাশ কার্ড, মোবাইল ও এজেন্ট ব্যাংকিং প্রসারের জন্য কাজ করছি। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের ক্ষেত্রে নিরাপত্তা ছাড়াও আরও কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে।
মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে প্রত্যেক মানুষের কাছে পৌঁছানো সবচেয়ে সহজ। মোবাইল ব্যাংকিং দারুণভাবে নাগরিকদের ক্ষমতায়ন করছে। সরকারের অনেক সুবিধা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে মানুষের কাছে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। সবশেষে বলা যায়, আর্থিক অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে মোবাইল ব্যাংকিং একটি বিপ্লব সৃষ্টি করেছে। নিরাপত্তাসহ অন্যান্য চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য আমাদের কাজ করতে হবে।

প্রজ্ঞা পারমিতা সাহা: প্রতি মাসেই আমাদের ওয়েবসাইটে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের তথ্য হালনাগাদ করা থাকে। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের প্রথম ধাপ পার করেছি। অর্থাৎ, এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় টাকা পাঠানোর কাজটি সফলভাবে সম্পন্ন হচ্ছে। দ্বিতীয় ধাপে আমরা সেবার সংখ্যা বাড়াতে চাই।
ব্যক্তি থেকে ব্যক্তির কাছে যে পরিমাণ টাকা স্থানান্তরিত হচ্ছে, অন্যান্য সেবা তার ধারেকাছেও নেই। সরকারের সেবাগুলো মোবাইল ব্যাংকিংয়ের আওতায় আনা খুবই প্রয়োজন। নাগরিকদের পক্ষ থেকে সরকারকে অনেক বিষয়ের জন্য অর্থ পরিশোধ করতে হয়। এটাও মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে করা যায় কি না, সেটিও ভেবে দেখা যেতে পারে।
গ্রাহককে জানুন (কেওয়াইসি) ফরম সহজ করার বিষয়টি আলোচনায় এসেছে। আসলে ব্যবসায়ী, এজেন্ট, সাধারণ গ্রাহক—প্রত্যেকের জন্য পৃথক কেওয়াইসি ফরম আছে। আরও সহজ করার প্রয়োজন হলে আপনাদের প্রস্তাব বাংলাদেশ ব্যাংক নিশ্চয়ই বিবেচনা করবে।
অভিযোগ গ্রহণের জন্য আমাদের একটি ফোন নম্বর আছে। সেখানে অসংখ্য অভিযোগ আসে। ২০১১ সালে এমন একটা অভিযোগ এসেছে যে একজন শিক্ষিত সরকারি চাকরিজীবী ১৮ লাখ টাকার গাড়ি বা নগদ ১৮ লাখ টাকা পাওয়ার আশায় অচেনা কাউকে এক লাখ টাকা বিকাশ করেছেন।
শিক্ষিত মানুষই এমন ভুল করছেন। তাহলে কাকে আপনি সচেতন করবেন? এটা অবশ্য ২০১১ সালের ঘটনা। এখন মানুষ আগের চেেয় অনেক বেশি সচেতন হয়েছে। এখন আপনারা যাঁরা এ কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত আছেন, তাঁরা মানুষকে আরও বেশি সচেতন করবেন। আর নিজেদেরও যথেষ্ট সতর্কতার সঙ্গে গ্রাহকদের সেবা দিতে হবে।

মোহাম্মদ জুলফিকার: বাংলাদেশ ব্যাংক ও বিটিআরসি—এই দুই নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান একসঙ্গে কাজ করলে হয়তো অনেক কিছুই করা সম্ভব। আর্থিক অন্তর্ভুক্তির ব্যাপক বিস্তৃতি হোক, এটা আমরা সবাই চাই। এ জন্য আমাদের পক্ষ থেকে যা কিছু করা প্রয়োজন, আমরা সেটা করছি।
অপারেটরদের সঙ্গে এসব নিয়ে আলোচনা হয়। তার পরও হয়তো সমস্যা থেকে যায়। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক ও আমাদের মধ্যে আরও বেশি আলোচনা হওয়া উচিত। মোবাইল আর্থিক সেবা খাত। এটি এখনো নতুন। মাত্র প্রায় পাঁচ বছর ধরে এ সেবা চলছে। এই সেবা পরীক্ষিত হয়ে উঠেছে কি না, এখনো সেটা হয়তো বলা যাবে না।
গ্রাহকের আর্থিক লেনদেনকে নিরাপত্তা দিতে হবে। তাকে আস্থায় নিতে হলে লেনদেনের ঝুঁকি আমাদের নিতে হবে। বাংলাদেশে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের সম্ভাবনার জায়গাটি আমরা খুব ভালোভাবে প্রমাণ করতে পেরেছি। আমাদের রিকশাচালক, শ্রমিকশ্রেণি, একেবারে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী—এদের ব্যাংকিং ব্যবস্থায় আনতে কত সময় লাগত, আমরা জানি না। কিন্তু এরা আজ ইতিমধ্যে মোবাইল আর্থিক সেবার আওতায় এসেছে।
মোবাইল আর্থিক সেবার ক্ষেত্রে প্রাথমিক পর্যায়ের কাজ আমরা শেষ করেছি। এখন দরকার একটি সঠিক নীতিমালা। বাংলাদেশ ব্যাংক একটি নীতিমালা করছে। এই নীতিমালা খুব গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক নীতিমালা না থাকলে আরও যাঁরা এ খাতে আসার কথা ভাবছেন তাঁরা আসবেন না। আবার সবাইকে আসতে হবে, সেটাও মনে করি না। একটা ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থা থাকলেই ভালো।
আব্দুল কাইয়ুম: বাংলাদেশে মোবাইল আর্থিক সেবাব্যবস্থার বৈপ্লবিক উন্নয়ন হয়েছে। আজ সাধারণ মানুষের অনেকে মোবাইল ব্যাংকিং সেবার আওতায় এসেছে। এদের আর্থিক লেনদেনের নিরাপত্তা দেওয়া অত্যন্ত জরুরি। আজকের আলোচনায় যেসব সুপারিশ এসেছে, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তা গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করবে বলে আশা করি। প্রথম আলোর পক্ষ থেকে সবাইকে কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ।
যাঁরা অংশ নিলেন
খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ : সাবেক ডেপুটি গভর্নর, বাংলাদেশ ব্যাংক
মোহাম্মদ জুলফিকার : লে. কর্নেল, পিএসসি, পরিচালক, সিস্টেমস অ্যান্ড সার্ভিসেস বিভাগ, বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)
প্রজ্ঞা পারমিতা সাহা : যুগ্ম পরিচালক, বাংলাদেশ ব্যাংক
ইশতিয়াক হুসেইন : সিস্টেম অ্যানালিস্ট, এটুআই প্রকল্প
রিয়াদ হাসনাইন : কান্ট্রি ম্যানেজার, বাংলাদেশ গ্লোবাল মার্কেট ইউনিট, মাহিন্দ্র কমিভভা
শেখ মো. মনিরুল ইসলাম : মেজর জেনারেল (অব.) ও চিফ করপোরেট অ্যান্ড এক্সটারনাল অ্যাফেয়ার্স, বিকাশ
তপন কান্তি সরকার : ফাউন্ডার প্রেসিডেন্ট, সিটিও (চিফ টেকনোলজি অফিসার) ফোরাম, বাংলাদেশ
মো. আবুল কাশেম খান : ইভিপি ও হেড অব ফাইন্যান্সিয়াল ডিভিশন ডাচ্-বাংলা ব্যাংক
টি আই এম নুরুল কবির : সেক্রেটারি জেনারেল, এমটব
রাশেদা সুলতানা : সিনিয়র স্পেশালিস্ট, ফাইন্যান্স সার্ভিসেস, গ্রামীণফোন
শাহাদত উল্লাহ খান : চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার, শিওর ক্যাশ
কাজী আজিজুর রহমান : সিআইও, সিটি ব্যাংক
সঞ্চালক
আব্দুল কাইয়ুম : সহযোগী সম্পাদক, প্রথম আলো